ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

‘বাংলাদেশের জঙ্গিবাদ এদেশে সৃষ্টি নয়’

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯২৫ ঘণ্টা, মার্চ ২৫, ২০১৯
‘বাংলাদেশের জঙ্গিবাদ এদেশে সৃষ্টি নয়’ নাগরিক সংলাপে বক্তারা। ছবি: বাংলানিউজ

ঢাকা: বাংলাদেশের জঙ্গিবাদের সূচনা হয়েছিলো, সেটির সূচনা এদেশের কারো মাধ্যমে হয়নি। ‌কেন না এ ভূ-খণ্ডের মানুষ যথেষ্ট শান্তিপ্রিয় ও সম্পূর্ণরূপে জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে অবস্থান করে। এর ফলে খুব দ্রুতই এদেশের সৃষ্ট অনাকাঙ্ক্ষিত জঙ্গিবাদকে দমন করা সম্ভব হয়েছে।

সোমবার (২৫ মার্চ) জাতীয় প্রেসক্লাবের ভিআইপি লাউঞ্জে ‘মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন’র সার্বিক সহযোগিতায় ‘ডিবেট ফর ডেমোক্রেসি’ আয়োজিত ‘তারুণ্য রুখবে সহিংস উগ্রবাদ’ শীর্ষক নাগরিক সংলাপে এমন মন্তব্য করেন বক্তারা।

জাতীয় প্রেসক্লাবের সভাপতি সাইফুল আলম বলেন, উগ্রবাদ দূর করতে হলে প্রথমেই প্রয়োজন পরিবারভিত্তিক মনস্তাত্ত্বিক শিক্ষা।

প্রথমে পরিবার, শিক্ষা-প্রতিষ্ঠান পরে সামাজিক পরিবেশে ও সর্বশেষে রাষ্ট্রীয়ভাবে এ উগ্রবাদবিরোধী মনস্তাত্ত্বিক শিক্ষায় শিক্ষিত হতে হবে।

অনুষ্ঠানে প্রধান আলোচক হিসেবে উপস্থিত থেকে পুলিশের অ্যান্টিটেররিজম ইউনিটের (ডিআইজি) খন্দকার লুৎফুল কবির বলেন, দায় এড়ানোর সংস্কৃতি বাঙালিদের নেই। বাঙালি সত্তাকে সব সময় জাগ্রত রাখতে হবে উগ্রবাদের বিরুদ্ধে। প্রকৃতির সঙ্গে মানুষের মনের সাদৃশ্য রয়েছে। সে অনুসারে এদেশে বাঙালি সত্তাকে সমন্বিত করলেই আমাদের সংবিধান সার্থক হবে। জঙ্গিবাদ আমাদের উপর অপরিচিত একটি অবয়ব। এর সূচনা আমাদের দেশে নয়। এটি নির্মূলেও দেশের সব জনগোষ্ঠীর অবদান রয়েছে।

এ সময় এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সহিংস উগ্রবাদ মোকাবেলায় আমরা তৃপ্ত নয়, এটি তৃপ্ত হওয়ার বিষয়ও নয়। সাধারণত বিভিন্ন জাতীয় দিবসের আগেই উগ্রবাদীদের অপকর্ম ঘটে থাকে। তাই আমরা ঢাকা শহরে বিশেষ নিরাপত্তার অবতরণ করেছি। আর আমাদের সামর্থ্যকে সম্পূর্ণরূপে প্রদর্শন করে উগ্রবাদীদের দমনে সোয়াতসহ বিভিন্ন বাহিনী মোতায়েন করা হয়।

সংলাপে আরো উপস্থিত ছিলেন বিভিন্ন ধর্মের প্রতিনিধিরা। উগ্রবাদ ধর্মীয় মতবাদের ভিত্তিতে তারাও বক্তব্য দেন।

এরমধ্যে সেন্ট যোসেফ উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের উপাধ্যক্ষ ব্রাদার চন্দন বেনেডিক্ট গোমেজ বলেন, আমরা আলোকিত মানুষ হতে শিখাই, জ্ঞানের প্রতি ভালোবাসা জাগ্রত করার মাধ্যমে। আমাদের মূলমন্ত্র সুন্দর হৃদয় সৃষ্টি করা। আর ধর্ম আমাদেরকে শেখায় ভালো মানুষ হতে।

এসময় বাংলাদেশ বুদ্ধিস্ট ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক ভিক্ষু সুনন্দপ্রিয় বলেন, ধর্মটা রাজনীতিতে ব্যবহৃত হচ্ছে। ফলে ভিন্ন ভিন্ন ধর্মের মানুষদের মধ্যে ভ্রাতৃত্ব কমে যাচ্ছে। এ কারণে সাম্প্রদায়িকতার সৃষ্টি হয়েছে। আসলে এই উগ্রবাদ দমন করতে হলে দেশের সর্বস্তরের মানুষকে সচেষ্ট হতে হবে।

রামকৃষ্ণ মিশনের সহকারী সম্পাদক স্বামী সেবানন্দ বলেন, সব ধর্মই সত্য। এটা সবাই স্বীকার করলে হানাহানি বন্ধ হবে। সব ধর্মের লোকদের সম্মান করতে হবে। বিসিএস ক্যাডার হওয়ার পরে বিভিন্ন শ্রেণি থেকে আশা মানুষগুলোর মধ্যে আর কোনো ভেদাভেদ থাকে না। তারা একই পদে বিভিন্ন স্থানে কর্মরত থাকে। মানুষকে ঠিক সেই কাতারে বিচার করতে হবে। কেন না উগ্রবাদ একটি রোগ মাত্র।

এদিকে তা’মীরুল মিল্লাত কামিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ ড. মুহাম্মদ আবু ইউসুফ বলেন, নিউজিল্যান্ডের ঘটনা প্রমাণ করেছে মুসলিমরা শান্তিপ্রিয়। তাছাড়া মনে রাখতে হবে নিউজিল্যান্ড অস্ট্রেলিয়ার মতো দেশ নাগরিক অধিকার ও মানুষের সম্মান নিয়ে প্রতিষ্ঠিত। আমি সৌদি আরবে গিয়েও এতোটা সম্মান পাইনি। এসব দেশে গিয়ে যতোটা সম্মান পেয়েছি। আমাদের দেশে নৈতিকতা শেখার জন্য উপযুক্ত কোনো শিক্ষা-প্রতিষ্ঠান নেই। যে কারণে শিশু নির্যাতনের মতো বিভিন্ন ঘটনা ঘটে থাকে। শিক্ষার্থীদের আনন্দদায়ক পরিবেশ উপহার দিতে হবে। তাদেরকে ভালো মানসিকতার অধিকারী বানাতে হবে। তাহলেই সহিংস উগ্রবাদ এড়িয়ে চলা সম্ভব।

ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণের সভাপতিত্বে নাগরিক সংলাপে উপস্থিত ছিলেন ন্যাশনাল ডিবেট ফেডারেশনের চেয়ারম্যান ড. তাজুল ইসলাম চৌধুরী তুহিন, মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের সম্প্রীতি প্রকল্পের ডেপুটি প্রোগ্রাম ম্যানেজার আইরিন বাশার রিফাত, ইসরাত পারভীন, মিরপুর ক্যান্ট. পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজের উপাধ্যক্ষ শায়লা মনোয়ার প্রমুখ।

বাংলাদেশ সময়: ১৫১৯ ঘণ্টা, মার্চ ২৫, ২০১৯
এমএএম/এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।