ঢাকা, বুধবার, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

ইঁদুরের অন্তঃপরজীবী শনাক্ত শেকৃবির গবেষকদের 

শেকৃবি করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫০৫ ঘণ্টা, মার্চ ২৪, ২০১৯
ইঁদুরের অন্তঃপরজীবী শনাক্ত শেকৃবির গবেষকদের  ইঁদুরের অন্তঃপরজীবী শনাক্ত শেকৃবির গবেষকদের। ছবি: সংগৃহীত

ঢাকা: বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো ইঁদুরের অন্তঃপরজীবী (কৃমি) গনজাইলোনেমা শনাক্ত করেছেন শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শেকৃবি) একদল গবেষক। তারা বলেছেন, ঢাকা শহরের প্রায় ৩৫ শতাংশ ইঁদুর এই পরজীবী দ্বারা আক্রান্ত। 

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্যারাসাইটোলজি ও মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের চেয়ারম্যান ও সহযোগী অধ্যাপক ড. উদয় কুমার মহন্তের নেতৃত্বে দু’জন গবেষক একবছর গবেষণা চালিয়ে এ অন্তঃপরজীবী শনাক্ত করেন।  

গবেষণা দলের অন্য সদস্যরা হলেন- শেকৃবির প্রভাষক এস এম আব্দুল্লাহ এবং স্নাতকোত্তর শ্রেণিতে অধ্যয়নরত  অমৃত বর্মণ।

গবেষকেরা বলছেন, ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় সাধারণত পাঁচধরনের পরজীবী বেশি পাওয়া যায়। এগুলো হচ্ছে- হেটের্যাকিস, হাইমেনোলেপিস, মনিলিফরমিস, টেইনিফরমিস ও গনজাইলোনেমা। এর মধ্যে বাংলাদেশে ২০১৮ সালে গনজাইলোনেমা পরজীবী শনাক্ত করার কথা জানিয়েছেন গবেষকরা।  

এ বিষয়ে গবেষক দলের সদস্য এস এম আব্দুল্লাহ বাংলানিউজকে বলেন, গনজাইলোনেমা পরজীবীর মাধ্যমে মানুষ সংক্রমিত হতে পারে। সাধারণত খাবার খোলা অবস্থায় রাখলে এবং সেটিতে গনজাইলোনেমা পরজীবীতে সংক্রমিত ইঁদুর মুখ দিলে এই পরজীবী খাবারে ছড়িয়ে পড়ে। মানুষ সেই খাবার গ্রহণের মাধ্যমে গনজাইলোনেমায় সংক্রমিত হয়।  

‘গনজাইলোনেমা দ্বারা আক্রান্ত হলে গনজাইলোনেমসিস, লালা ক্ষরণ, দাঁতে ব্যাথা, অন্ননালী প্রদাহ, গলবিল প্রদাহ, স্নায়ুবিক বিকলতা ইত্যাদি লক্ষণ দেখা দেয়। ’

গনজাইলোনেমা দ্বারা সৃষ্ট রোগ প্রতিরোধের উপায় সম্পর্কে তিনি বলেন, ইঁদুর নিয়ন্ত্রণ করতে হলে স্যানিটেশন ব্যবস্থার উন্নতি করতে হবে। খাদ্যদ্রব্য সবসময় ইঁদুর থেকে দূরে এবং ঢেকে রাখা উচিত। আক্রান্ত ব্যক্তিকে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।

গবেষক অমৃত বর্মণ বাংলানিউজকে জানান, গত একবছর ধরে তারা ঢাকা শহরের বিভিন্ন  ঘনবসতি এলাকা (তেজগাঁও, আগারগাঁও, তালতলা, মোহাম্মদপুর কাঁচা বাজার, শেরেবাংলা নগররে বস্তি, শাক সবজির দোকান ও বাসাবাড়ি ) থেকে আক্রান্ত ইঁদুর সংগ্রহ করেন।  

আক্রান্ত ইঁদুরের পায়খানা, প্রশ্রাব ও লালার মাধ্যমে অন্তঃপরজীবীর ডিম এবং লার্ভা মানুষের খাবারের মধ্যে আসে। এসব খাবার মানুষ খেলে অন্তঃপরজীবী (কৃমি) দ্বারা আক্রান্ত হয়।

গবষেকেরা বলেন, এই কাজের জন্য তারা ঢাকা শহরের বিভিন্ন  ঘনবসতি এলাকা  থেকে ৭০টা ইদুর সংগ্রহ করেন। যার মধ্যে  ২০টি ধাড়ি ইঁদুর, ১৫টি কালো ইঁদুর, ২৫টি বাদামি ইঁদুর এবং ১০টি  ইঁদুর। এই ৭০টি ইঁদুরের মধ্যে ৫০টি ইঁদুর বিভিন্ন অন্তঃপরজীবী (কৃমি) দ্বারা আক্রান্ত।  

এর মধ্যে ৮৫ শতাংশ অন্তঃপরজীবী (কৃমি) দ্বারা আক্রান্ত ইঁদুর পাওয়া গেছে বিভিন্ন ঘনবসতি পূর্ণ এলাকা (বস্তি) থেকে। এসব পরজীবীর ৩৫ শতাংশ গনজাইলোনেমা বলে জানান গবেষকেরা।

গবষেক দলের প্রধান ড. উদয় কুমার মহন্ত বলেন, গনজাইলোনেমা পরজীবী অন্যান্য দেশে থাকলেও বাংলাদেশে এই পরজীবীটি আগে শনাক্ত করা হয়নি। ঢাকা শহরের মধ্যে দুটি সিটি করপোরেশন ( উত্তর ও দক্ষিণ) কর্তৃপক্ষ জনসচেতনতা বাড়তে যদি উদ্যোগ নেয় তাহলে আমরা তাদের সহযোগিতা করবো।

বাংলাদেশ সময়: ১০৫৮ ঘণ্টা, মার্চ ২৩, ২০১৯
এমএ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।