ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

ডেটলাইন: কমলাপুর রেল স্টেশন টিকিট কাউন্টার

মুরসালীন হক, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২০৪ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১, ২০১০
ডেটলাইন: কমলাপুর রেল স্টেশন টিকিট কাউন্টার

ঢাকা: ঈদের আনন্দ স্বজনের সঙ্গে ভাগাভাগি করে নেওয়ার প্রথম কাজটি হচ্ছে ঘরে ফেরার টিকিট সংগ্রহ। বাস, লঞ্চ ও ট্রেনের কাউন্টারে এখন তাই মানুষের ভিড়।

সেখানে আনন্দ, ভোগান্তি, অনিয়ম অব্যবস্থাপনা সবই আছে একাকার হয়ে। মঙ্গলবার সকালে টিকিট বিক্রি শুরুর পর থেকে একই চিত্র।  

ইয়া...হু

কমলাপুর রেলস্টেশনে অগ্রীম টিকিট হাতে পেয়েই ইয়া..হু বলে চিৎকার দিয়ে ছুটে এলেন আমিনুল। বন্ধুদের জড়িয়ে ধরে হৈ-হুল্লোড় শুরু করলেন। বড় কোনো জয়ের উচ্ছাসকেও হার মানাবে তার প্রতিক্রিয়া। বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী মো. আমিনুল ইসলাম বললেন, ‘যত কষ্টই হোক, মানুষের গাদাগাদি ভিড় ঠেলে চিড়ে চ্যাপ্টা হয়ে, বাদুড় ঝোলা বা যানবাহনের ছাদে করে গ্রামে বাবা-মা স্বজনদের সঙ্গে একত্রে ঈদ করার আনন্দই অন্যরকম। ঢাকাবাসীর ঈদতো শুরু হয় ঈদের দিন থেকে, কিন্তু আমরা যারা গ্রামে ঈদ করি টিকিট কাটার দিন থেকেই আমাদের আনন্দ শুরু হয়ে যায়। ’

ইফতারে এসে.. সকালে টিকিট

ট্রেনের অগ্রীম টিকিট পেতে আগের দিন ইফতারের পর থেকেই কমলাপুর রেলস্টেশনে ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে মানুষের ভীড়। এরকম একজন বেসরকারি ইনডেন্টিং ফার্মের চাকুরিজীবী মো: রাশেদুল হাসান। বিকাল চারটায় অফিস শেষ করে দুই ঘণ্টা যানজট হ্যাপা পার হয়ে তিনি ছয়টায় এসে পৌঁছান কমলাপুরে। ইফতার করে তিনি স্টেশনের আট নম্বর কাউন্টারের সামনে প্রথম সিরিয়াল দিয়েছিলেন। টানা ১৭ ঘণ্টা অপেক্ষার পর পরের দিন সকাল নয়টায় তিনি হাতে পেয়েছেন বহু কাঙ্খিত পীরগাছার একটি টিকিট।

কারো অপেক্ষার পালা চলছেই...

কমলাপুর রেলস্টেশনে কাউন্টারের সামনে দীর্ঘ মানুষের সারির পাশেই অন্য এক টিকেট প্রত্যাশীর জায়নামাজে বসে আছেন কান্ত, অবসন্ন হয়ে পড়া ব্যবসায়ী মো: ফরহাদ। মঙ্গলবার ইফতারের পর হতে চট্টগ্রামের চারটি টিকেটের জন্য তিনি অধীর অপেক্ষায় আছেন। টিকেট প্রাপ্তির জন্য রেল কর্তৃপক্ষের সরবরাহকৃত কুপনটিও দুমড়েমুচড়ে গেছে। তারপরও মুখে নেই এতটুকু বিরক্তি।

ভিড় বাড়ছে জ্যামিতিক হারে...

কমলাপুর রেলস্টেশনের স্টেশন মাস্টার মো: সৈয়দুজ্জামান বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম.বিডিকে জানান, ঈদের পাঁচদিন আগে ছুটি পাওয়ার সম্ভাবনা কম হওয়ায় সেপ্টেম্বরের ৫ তারিখের টিকেট কাটতে গতকাল কম মানুষ এসেছিল। তবে আজ বুধবার সেপ্টেম্বরের ৬ তারিখের টিকেট বিক্রি করায় ছুটির দিনে গতকালের তুলনায় অনেকবেশি লোক সমাগম হয়েছে। আগামী ৪ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত এ ভীড় আরো বাড়বে বলে জানান তিনি। ‘ভাই ভিড় দেখি জ্যামিতিক হারে বাড়ছে’ পাশ থেকে মন্তব্য করলেন একজন।

ছিন্নমূলদের জায়গা বেদখল

টিকিট কিনতে আসা মানুষদের ভীড়ে নিজেদের অতি পরিচিত জায়গা খুঁজে পাচ্ছে না কমলাপুর রেলস্টেশনের স্থায়ী বাসিন্দা হিসেবে পরিচিত ছিন্নমূল মানুষগুলো। বারো বছর বয়সী টোকাই রতন জানায় গত তিন বছর ধরে প্রতি ঈদের আগে সপ্তাহখানেক তাদের ঘুমানোর জায়গা নিয়ে ঝামেলা হয়। তবে এ সময় দান খয়রাত, খাবারের উচ্ছিষ্ট, টিকিট কিনতে আসা মানুষদের বসা বা শোয়ার জন্য পেপার বিক্রি করে মোটামুটি ভালই উপার্জন হয়। ফলে এ সময়টুকুর কষ্ট ভুলে থাকা যায়।

স্টেশনে কর্তব্যরত নিরাপত্তাকর্মী মো. মোজাফফর জানান, টিকিট বিক্রি এবং ট্রেন যাত্রার এই ক’দিন টিকিট কিনতে আসা যাত্রীদের সঙ্গে স্টেশনের ছিন্নমূল মানুষগুলো একাকার হয়ে যায়। অনেক বড়লোককেও দেখা যায় টোকাইদের কাছ থেকে দুই টাকা দিয়ে পেপার কিনে কাউন্টারের সামনেই ঘুমিয়ে পড়েন।

গন্তব্যের টিকিট মিলছে না

অগ্রীম টিকিট প্রত্যাশীদের অনেকের কাছেই নির্দিষ্ট গন্তব্যস্থলের টিকিট না পাওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেল। এমনি একজন পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের কর্মচারি মো. মোয়াজ্জেম হোসেন। তিনি দিনাজপুরের টিকিট কাটতে আসলেও কাউন্টার হতে তাকে একই ভাড়ায় দেয়া হয়েছে পার্বতীপুরের টিকিট। ফলে ঈদে বাড়ী যাওয়ার সময় আরো একটু বাড়তি ভোগান্তি যুক্ত হল বলে জানালেন তিনি।

বুধবার সকালে টিকেট বিক্রি শুরু হওয়ার পাচঁমিনিটের মধ্যেই যাত্রীরা প্রায় কেউই তাদের নির্দিষ্ট গন্তব্যস্থলের টিকেট পাচ্ছেন না বলে একের পর এক অভিযোগ আসা শুরু হয়।

কালোবাজারিরাও সক্রিয়

নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক কমলাপুর স্টেশনের একাধিক কর্মচারী জানান, ক্রেতার আড়ালে মঙ্গলবার রাত হতেই কালোবাজারীরা তাদের টিকিট সংগ্রহ শুরু করে দিয়েছে। এই কালোবাজারীরা আগামী ৭, ৮, ৯ সেপ্টেম্বর থেকে তাদের সংগৃহীত টিকিট বিক্রি শুরু করবে বলেও জানান তারা।

কর্তৃপক্ষ মানতে নারাজ...

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে কমলাপুর রেলস্টেশনের ম্যানেজার মো: আব্দুল্লাহ আল মাসুম প্রাপ্তি অনুযায়ী সকল যাত্রী তাদের টিকেট পাচ্ছে এমন দাবি করে বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম.বিডিকে বলেন, ‘গত দুইদিনে টিকেট বিক্রির ক্ষেত্রে কোন অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। যাত্রীদের চাহিদা মাফিক রেল কর্তৃপক্ষ তাদের টিকেট সরবরাহ করে আসছে। কালোবাজারির ব্যাপারে কমলাপুরের স্টেশন মাস্টার মো. সৈয়দুজ্জামান জানান, এ বছর কালোবাজারীদের ঠেকাতে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছে। এরই মধ্যে দেশের স্টেশনগুলোতে পুলিশ এবং র‌্যাবের অতিরিক্ত ফোর্স নিযুক্ত করা হয়েছে।

ভিআইপি’র বরাদ্দ ২৫ ভাগ

রেল কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা যায়, অন্যান্য বছরের মত এবারও ট্রেনে শতকরা ২৫ ভাগ টিকেট ভিআইপিদের জন্য সংরক্ষিত রেখে ৭৫ ভাগ সাধারণ মানুষের মধ্যে বিক্রি করা হচ্ছে। স্টেশনের ১ নং কাউন্টার হতে শুরু করে ১২ নং কাউন্টার পর্যন্ত অগ্রীম টিকেট বিক্রি হচ্ছে।

মঙ্গলবার সকাল নয়টা থেকে দেশের সকল রেলস্টেশনে একযোগে ঈদের অগ্রীম টিকিট বিক্রি শুরু হয়। ৩১ আগস্ট থেকে ৪ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বিক্রি করা হবে ৫ সেপ্টেম্বর থেকে ৯ সেপ্টেম্বরের টিকিট। আগামী ১০ সেপ্টেম্বর ঈদ না হলে ৫ সেপ্টেম্বর রেল কর্তৃপক্ষের বিশেষ ব্যবস্থায় ওইদিনের টিকিট বিক্রি করা হবে রেল সূত্রে জানা গেছে। পুরো সময়টি জুড়ে রেল স্টেশনের চিত্র এমনটাই থাকবে বলে ধারনা করা হচ্ছে।

বাংলাদেশ সময়: ১১৪৮ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ০১, ২০১০।

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
welcome-ad