ঢাকা, শনিবার, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

দৃশ্যমান হলো পদ্মাসেতুর ১৩৫০ মিটার

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩৩৬ ঘণ্টা, মার্চ ২২, ২০১৯
দৃশ্যমান হলো পদ্মাসেতুর ১৩৫০ মিটার

মুন্সিগঞ্জ: নির্মাণাধীন স্বপ্নের পদ্মাসেতুতে নবম স্প্যানটি (সুপার স্ট্রাকচার) বসানোর মধ্য দিয়ে দৃশ্যমান হলো এ সেতুর ১৩৫০ মিটার (১.৩৫ কিলোমিটার)। রাজধানী ঢাকা ও আশপাশের অঞ্চল থেকে পদ্মা পাড়ি দিয়ে দক্ষিণাঞ্চলে যাওয়ার এ স্বপ্ন বাস্তবে রূপ নেবে আর ৩২টি স্প্যান বসলেই। বহুলকাঙ্ক্ষিত এ সেতুর ওপর দিয়ে গাড়ির পাশাপাশি চলবে ট্রেনও।

দেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় প্রকল্প পদ্মাসেতু। সেতুর জাজিরা প্রান্তে সপ্তম স্প্যান বসানোর পর এক মাসের মাথায় বসলো অষ্টম স্প্যানটি (এটি সেতুর নবম স্প্যান)।

শুক্রবার (২২ মার্চ) সকাল ৮টা ৫০ মিনিটে জাজিরা প্রান্তে সেতুর ৩৪ ও ৩৫ নম্বর পিলারের ওপর বসানো হয় ধূসর রংয়ের ১৫০ মিটার ও তিন হাজার ১৪০ টন ওজনের ‘৬ডি’ স্প্যানটি।

এর আগে বৃহস্পতিবার (২১ মার্চ) সকাল পৌনে ৯টার দিকে স্প্যানটি বসানোর কথা থাকলেও স্প্যান বহনকারী ক্রেনের তার (রোপ) ছিঁড়ে যাওয়ায় এবং নাব্যতা সমস্যার কারণে তা আর হয়ে উঠেনি। বুধবার (২০ মার্চ) বেলা সাড়ে ১১টায় জাজিরা প্রান্তে পৌঁছায় স্প্যান বহনকারী ক্রেনটি। ওইদিন সকাল ৮টা ৫৫ মিনিটে মাওয়া কনস্ট্রাকশন ইয়ার্ড থেকে যাত্রা শুরু করে স্প্যান বহনকারী ‘তিয়ান ই’ ক্রেনটি। ধূসর রংয়ের ১৫০ মিটার দৈর্ঘ্য ও তিন হাজার ১৪০ টন ওজনের স্প্যানটিকে নিয়ে তিন হাজার ৬০০ টন ধারণ ক্ষমতার ক্রেন ‘তিয়ান ই’ আড়াই ঘণ্টায় জাজিরা প্রান্তে পৌঁছায়।

পদ্মাসেতুর প্রকৌশল সূত্র বাংলানিউজকে জানান, ভোর ৫টা থেকেই স্প্যান বসানোর জন্য কার্যক্রম শুরু হয়।

স্প্যান বহনকারী ভাসমান ক্রেনটিকে ৩৪ ও ৩৫ নম্বর পিলারের পজিশন অনুযায়ী রাখা হয়। এরপর ক্রেনের সাহায্যে ধীরে ধীরে স্প্যানটিকে পিলারের বিয়াংয়ের ওপর বসানো হয়। স্প্যানটিকে সপ্তম স্প্যানের সঙ্গে জোড়া দেওয়ার কাজ শুরু করা হয়। বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে দেশি-বিদেশি প্রকৌশলীদের চেষ্টায় সফলতার সঙ্গে এ কাজ সম্পন্ন হয়। পুরোপুরি স্থায়ীভাবে বসতে আরও সময় লাগবে। জাজিরা প্রান্তে এ স্প্যানটি বসানোর মাধ্যমে দৃশ্যমান এক হাজার ২০০ মিটার। আর মাওয়া প্রান্তের একটি স্প্যানসহ মোট নয়টি স্প্যান মিলিয়ে পুরো পদ্মাসেতুর এখন ১৩৫০ মিটার দৃশ্যমান।

সূত্র আরও জানায়, অ্যাংকরিং (নোঙর) সমস্যা ও নাব্যতা সংকটের কারণে আগের ঘোষিত সময়ে স্প্যানটি বসানো যায়নি। এছাড়া দ্বিতীয় স্প্যানটিও বসাতে গিয়ে নাব্যতা সংকটের কারণে তারিখ পেছাতে হয়। স্প্যান বসানোর জন্য প্রস্তুত আছে ৩৩ নম্বর পিলারটিও। চলতি মাসের মধ্যে ৩৩ ও ৩৪ নম্বর পিলারের ওপর একটি স্প্যান বসানোর পরিকল্পনা রয়েছে।

পদ্মাসেতুতে ৪২টি পিলারের স্প্যান বসানো হবে ৪১টি। নয়টি স্প্যান বসানো হয়েছে, বাকি আছে ৩২টি। ৪২টি পিলারের মধ্যে ২১টি পিলারের কাজ পুরোপুরি সম্পন্ন, বাকি ২১টি পিলারের কাজ চলছে। জাজিরায় সেতুর নয়টি (৩৪, ৩৫, ৩৬, ৩৭, ৩৮, ৩৯, ৪০, ৪১, ৪২) পিলারে আটটি স্প্যান ও মাওয়ায় দু’টি (৪, ৫) পিলারে একটি স্প্যান অস্থায়ীভাবে বসানো হয়েছে।

২০১৪ সালের ডিসেম্বর মাসে কাজ শুরু হয়েছিল পদ্মাসেতুর। সেতু নির্মাণে ব্যয় হচ্ছে ৩৩ কোটি টাকা। মূল সেতু নির্মাণের জন্য কাজ করছে চীনের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান চায়না মেজর ব্রিজ ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি (এমবিইসি) ও নদী শাসনের কাজ করছে চীনেরই আরেকটি প্রতিষ্ঠান সিনো হাইড্রো করপোরেশন।

৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ এ বহুমুখী সেতুর মূল আকৃতি হবে দোতলা। কংক্রিট ও স্টিল দিয়ে নির্মিত হচ্ছে এ সেতুর কাঠামো।

জাজিরা প্রান্তে ২০১৭ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর বসানো হয় প্রথম স্প্যান। এর প্রায় চার মাস পর ২০১৮ সালের ২৮ জানুয়ারি দ্বিতীয় স্প্যানটি বসে। দেড় মাস পর ১১ মার্চ জাজিরা প্রান্তে ধূসর রঙের তৃতীয় স্প্যান বসানো হয়। দুই মাস পর ১৩ মে বসে চতুর্থ স্প্যান। এক মাস ১৬ দিনের মাথায় পঞ্চম স্প্যানটি বসে ২৯ জুন। তারপর ছয় মাস ২৫ দিনের মাথায় ২০১৯ সালের ২৩ জানুয়ারি বসে ষষ্ঠ স্প্যানটি। ২০ ফেব্রুয়ারি বসে সপ্তম স্প্যানটি। সবশেষ শুক্রবার (২২ মার্চ) বসলো অষ্টম স্প্যানটি। আর মাওয়া প্রান্তে একটিমাত্র স্প্যান বসানো হয় ২০১৮ সালের ১২ অক্টোবর।

বাংলাদেশ সময়: ০৯৩৬ ঘণ্টা, মার্চ ২২, ২০১৯
জিপি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

জাতীয় এর সর্বশেষ