ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

মুজিববর্ষ উদযাপনে ইতিহাসের সবচেয়ে বড় আয়োজন

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১৫৭ ঘণ্টা, মার্চ ২০, ২০১৯
মুজিববর্ষ উদযাপনে ইতিহাসের সবচেয়ে বড় আয়োজন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে উদযাপন কমিটির বৈঠক/ছবি: পিআইডি

ঢাকা: স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানের জন্ম শতবার্ষিকী উপলক্ষে বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় বর্ণাঢ্য আয়োজনের প্রস্তুতি নিচ্ছে সরকার।

২০২০ সালের ১৭ মার্চ থেকে ২০২১ সালের ২৬ মার্চ পর‌্যন্ত রাজধানীসহ দেশের বড় বড় শহরগুলোর পাশাপাশি সারাদেশের সব জেলা, উপজেলা থানা ও ইউনিয়ন পর্যায় পর্যন্ত এ অনুষ্ঠানমালা চলবে।  দেশের বাইরেও পালন করা হবে নানা কর্মসূচি।

এর প্রস্তুতি হিসেবে প্রধানমন্ত্রী ও বঙ্গবন্ধুর শততম জন্মবার্ষিকী উদযাপন জাতীয় কমিটির সভাপতি শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে বুধবার (২০ মার্চ) প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে মুজিববর্ষ পালন উপলক্ষে গঠিত জাতীয় কমিটি এবং বাস্তবায়ন কমিটির প্রথম যৌথসভা অনুষ্ঠিত হয়।

সভায় বিশিষ্টজনেরা বিভিন্ন বিষয়ে প্রস্তাব দেন। পাশাপাশি বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকীতে বিশ্বখ্যাত ব্যক্তি, রাষ্ট্র ও সরকার প্রধান, আন্তর্জাতিক সংস্থা প্রধানদের আমন্ত্রণ জানানোর বিষয়ে আলোচনা হয়।

মুজিববর্ষে বিশেষ দিবসগুলোতে বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে বিশেষ কর্মসূচি পালন, বঙ্গবন্ধুর নামে আন্তর্জাতিক মানের বইমেলা আয়োজন, দেশি ও আন্তর্জাতিক সেমিনার, প্রচার ও প্রামাণ্য চিত্র নির্মাণ, আন্তর্জাতিকমানের চলচ্চিত্র নির্মাণ, নাট্য উৎসব, দেশি ও আন্তর্জাতিদক প্রকাশনা, সাহিত্য-সাংস্কৃতিক ও ক্রীড়া প্রতিযোগিতা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও চিত্র প্রদর্শনী, সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মসূচি, হলগ্রাফিক ভিডিও প্রদর্শনী, ওয়েবসাইটসহ বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা হয় এই যৌথ সভায়।

সভার সূচনা বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, এই জন্মশতবার্ষিকীটা একদম তৃণমূল পর্যায় পর্যন্ত যাতে উদযাপিত হয়, তারও ব্যবস্থা আমরা নেবো। যাতে মানুষ আমাদের সঠিক ইতিহাসটা জানতে পারে।

‘মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় এদেশের মানুষ যাতে উদ্বুদ্ধ হয় এবং বাংলাদেশকে সারা বিশ্বের কাছে একটা মর্যাদাশীল রাষ্ট্র হিসেবে যেন আমরা গড়ে তুলতে পারি। ’

শেখ হাসিনা বলেন, মার্চ মাসটা আমাদের জন্য খুব একটা অর্থবহ মাস। ৭ মার্চ তার (বঙ্গবন্ধুর) ঐতিহাসিক ভাষণ, ১৭ মার্চ জাতির পিতার জন্মদিন। আবার ২৬ মার্চ আমাদের স্বাধীনতা দিবস। কাজেই ২০২০ সালের ১৭ মার্চ থেকে ২০২১ সালের ২৬ মার্চ পর্যন্ত বছরটাই আমরা মুজিববর্ষ হিসেবে উদযাপন করবো।

জাতির পিতার জন্মশতাবার্ষিকী যথাযথভাবে উদযাপন করা আমাদের জাতীয় কর্তব্য উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, জীবনের সবকিছু ত্যাগ করে এদেশের মানুষের জন্যই কষ্ট স্বীকার করে গেছেন জাতির পিতা। আর সেই কষ্টের ফসল হিসেবই আমরা পেয়েছি স্বাধীনতা, স্বাধীন জাতির মর্যাদা। কাজেই এটা আজ আমাদের একটা জাতীয় কর্তব্য বলে আমি মনে করি যে, তার জন্মশতবার্ষিকী আমরা ভালভাবে উদযাপন করবো।

বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে ইতিহাস বিকৃতির চেষ্টার কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, দুর্ভাগ্য হলো একটা সময় ছিল ভাষা আন্দোলনে তার (বঙ্গবন্ধু) অবদান একেবারে মুছে ফেলা হয়েছিল। মুক্তিযুদ্ধের তার যে অবদান সেটা মুছে ফেলার চেষ্টা করেছিল। ২১ বছর এদেশের মানুষ জানতে পারিনি। আসলে সত্যকে কেউ কখনো মুছে ফেলতে পারে না। সত্য কখনো না কখনো উদ্ভাসিত হবেই। তার স্থানটা সে করে নেবেই। কাজেই আজ কিন্তু বাংলাদেশের ক্ষেত্রে সেই প্রমাণটা পাচ্ছি।

যৌথসভার শুরুতে খসড়া পরিকল্পনা উপস্থাপন করেন জাতীয় কমিটির সদস্য সচিব ও বাস্তবায়ন কমিটির প্রধান সমন্বয়ক ড. কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী।

মুজিববর্ষ উদযাপন উপলক্ষে একটি ওয়েবসাইটও তৈরি করা হয়েছে। ওয়েবসাইটি প্রধানমন্ত্রীর তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়ের কাছে পাঠানো হয়েছে বলে জানানো হয় সভায়।

যৌথসভায় ওয়েবসাইটটির খসড়া ডিজাইন উপস্থাপন করেন তথ্য ও যোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমদ পলক। পরে দুই কমিটির সদস্যরা বিভিন্ন বিষয়ে তাদের প্রস্তাবনা তুলে ধরেন।

সভায় ১৪ দলের মুখপাত্র, আওয়ামী লীগ সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মোহাম্মদ নাসিম বঙ্গবন্ধুর নামে নোবেল পুরস্কারের মতো উঁচুমানের আন্তর্জাতিক পুরস্কার দেওয়ার প্রস্তাব দেন।

শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকী বদ্ধভূমিগুলোতে এনভায়রনমেন্টাল থিয়েটারসহ বেশ কয়েকটি প্রস্তাব দেন।

শোলাকিয়া ঈদ জামাতের ইমাম মাওলানা ফরিদউদ্দিন মাসউদ মাদরাসা শিক্ষার্থী, বিশেষ করে কওমি মাদরাসা শিক্ষার্থীদের কাছে বঙ্গবন্ধু বিষয়ে ব্যাপক প্রচারণার প্রস্তাব দেন।

নাট্যশিল্পী সারা যাকের বঙ্গবন্ধুকে বিশেষ করে ৭ই মার্চের ভাষণ ভার্চুয়াল রিয়েলিটির মাধ্যমে তুলে ধরার প্রস্তাব দেন।

বাংলা একাডেমির সাবেক মহাপরিচালক শামসুজ্জামান খান বঙ্গবন্ধুর পুরো জীবন নিয়ে প্রামাণ্য জীবনী লেখা শুরু করার প্রস্তাব দেন।

মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ট্রাস্টি মফিদুল হক দেশি ও বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের জন্য বঙ্গবন্ধুর নামে ফেলোশিপ চালুর প্রস্তাব দেন।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গর্ভনর ড. আতিউর রহমান ৭৫ হাজার কোটি টাকা ব্যয় করে বিশেষ কর্মসূচি নিয়ে মুজিববর্ষের মধ্যে অতি দরিদ্রমুক্ত বাংলাদেশ গড়ার প্রস্তাব দেন।

শিক্ষাবিদ ও সাহিত্যিক ড. মুহম্মদ জাফর ইকবাল ফরিদপুরের ভাঙায় বঙ্গবন্ধুর নামে একটি মান ভবন নির্মাণের প্রস্তাব দেন।

পরে সমাপনী বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী জানান, উদযাপনে প্রতিটি বিভাগ ধরে ধরে ছোট ছোট সাব-কমিটি করে দেওয়া হবে।

বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে ইতোমধ্যেই ২০২০ সালের ১৭ মার্চ থেকে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী ২০২১ সালের ২৬ মার্চ পর্যন্ত সময়কে মুজিববর্ষ হিসেবে ঘোষণা করে তা যথাযথভাবে উদযাপনে বিশিষ্টজনদের নিয়ে একটি ১০২ সদস্য বিশিষ্ট জাতীয় কমিটি এবং বাস্তায়নে ৬১ সদস্য বিশিষ্ট কমিটি গঠন করা হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন জাতীয় কমিটিতে সদস্য হিসেবে অন্যদের মধ্যে রয়েছেন বঙ্গবন্ধুর ছোট মেয়ে শেখ রেহানা, জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী, প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন, সংসদের বিরোধীদলীয় নেতা হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ, আইন কমিশনের চেয়ারম্যান বিচারপতি এবিএম খায়রুল হক, প্রধানমন্ত্রীর তথ্য ও যোগাযোগ বিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়, আওয়ামী লীগ নেতা আবুল মাল আবদুল মুহিত, আমির হোসেন আমু, তোফায়েল আহমেদ, মতিয়া চৌধুরী, মোহাম্মদ নাসিম, শেখ ফজলুল করিম সেলিম, ওবায়দুল কাদের, ওয়ার্কার্স পার্টির রাশেদ খান মেনন, জাসদের হাসানুল হক ইনু, ইমেরিটাস অধ্যাপক আনিসুজ্জামান, মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম, বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন, সংসদ সদস্য মাশরাফি বিন মোর্তুজা, মুহাম্মদ শফিকুর রহমানসহ মন্ত্রিপরিষদ সদস্য, প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা, মন্ত্রিপরিষদ সচিব, তিন বাহিনী প্রধান, পুলিশ মহাপরিদর্শক, ঢাকা উত্তর-দক্ষিণের মেয়র, বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, শিল্পী-সাহিত্যিক, সংস্কৃতিকর্মী, সাংবাদিক, ইমাম সমাজের প্রতিনিধি, চিকিৎসক, শিক্ষাবিদরা রয়েছেন।

জাতীয় অধ্যাপক মোহাম্মদ রফিকুল ইসলামের সভাপতিত্বে বাস্তবায়ন কমিটিতে সেন্টার ফর রিসার্চ অ্যান্ড ইনফরমেশন (সিআরআই) ট্রাস্টি ও শেখ রেহানার ছেলে রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিক ববি, ক্রিকেটার সাবিক আল হাসানসহ বিশিষ্টজনদের পাশাপাশি সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তারা রয়েছেন।

বাংলাদেশ সময়: ১৭৫৪ ঘণ্টা, মার্চ ২০, ২০১৯
এমইউএম/এএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।