ঢাকা, বুধবার, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

মাটিতে পুঁতে রেখে চিকিৎসার সেই কবিরাজ পালিয়েছেন

জেলা প্রতিনিধি | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২৫৪ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৬, ২০১১
মাটিতে পুঁতে রেখে চিকিৎসার সেই কবিরাজ পালিয়েছেন

বগুড়া: বগুড়ার ধুনট উপজেলার পার নাটাবাড়ী গ্রামে প্যারালাইসিস রোগীকে মধ্যযুগীয় কায়দায় মাটিতে পুঁতে রেখে চিকিৎসার ঘটনা সংবাদমাধ্যমে প্রকাশের পর আটক হওয়ার ভয়ে সেই কবিরাজ স্বপন মিয়া (৩০) পালিয়েছেন।

তবে চিকিৎসার নামে মানুষকে মাটিতে পুঁতে রেখে কষ্ট দেওয়ার ঘটনায় এলাকায় তোলপাড় সৃষ্টি হলেও স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান তার প্রতিবাদ করেননি।

তবে এ ধরনের অপচিকিৎসা বন্ধে উপজেলা প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসনের কাছে কঠোর হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন স্থানীয় সচেতন মহল।
 
অন্যান্য দিনের মতোই বৃহস্পতিবার রাত আনুমানিক সাড়ে ১০টার দিকে উপজেলার গোসাইবাড়ী ইউনিয়নের পারনাটাবাড়ী গ্রামে খোলা আকাশের নিচে লাল-নীল-সাদা বিভিন্ন রঙের কাপড় দিয়ে ঘেরা ছোটস্থানে প্যারালাইসিসে আক্রান্ত ৮০ বছরের বৃদ্ধা আইরিন বিবিকে কোমর পর্যন্ত মাটিতে পুঁতে রাখার ঘটনা স্থানীয় উপজেলা প্রশাসনকে জানানো হয়। এর পরই থানা পুলিশ তথাকথিত ওই চিকিৎসককে আটকের জন্য চেষ্টা চালাচ্ছে বলে জানা গেছে।

এ বিষয়ে ধুনট থানার পরিদর্শক বাংলানিউজকে জানান, জেলা পর্যায়ের সংবাদমাধ্যম কর্মীদের কাছ থেকে জানার পর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার নির্দেশে কবিরাজের অপচিকিৎসা ঘটনার প্রাথমিক সত্যতা পাওয়া গেলে তাকে আটকের চেষ্টা করছে পুলিশ।

গোসাইবাড়ী ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান ও নাটাবাড়ী এলাকায় বসবাসকারী মইনুল হাসান মকুল সাংবাদিকদের জানান, ওই গ্রামের মৃত জহির সরকারের স্ত্রী আইরিন বিবি (৮০) প্যারালাইসিসে আক্রান্ত হয়ে দীর্ঘদিন শয্যাশায়ী হয়ে পড়ে আছেন। সন্তানরা তাকে সুস্থ করতে অনেক ধরনের চেষ্টা করলে তার শারীরিক অবস্থার উন্নতি না হলে আশা ছেড়ে দেন বৃদ্ধার সন্তানসহ নিকট-আত্মীয়রা।

এমন সময় তার নাতবৌ আজিরন খাতুনের ভাতিজা উপজেলার আড়কাটিয়া গ্রামের মমতাজ আলী শেখের কবিরাজ স্বপন মিয়ার আবির্ভাব ঘটে। তিনি বৃদ্ধা আইরিনকে  ৭ দিনের মধ্যে সুস্থ করে দেওয়ার আশ্বাস দিয়ে প্রতিদিন এশার পর থেকে গভীর রাত পর্যন্ত বেআইনি ও অবৈধ পদ্ধতিতে অসুস্থ ব্যক্তিকে প্রায় গলা পর্যন্ত মাটিতে পুঁতে রেখে চিকিৎসা দেওয়া শুরু করেন।

তিনি আরও জানান, রোগীর চারপাশে ছুরি, কাচি, দা, কোদাল, ডালা, চালুন ইত্যাদি জিনিসপত্র রেখে এবং ঘেরাও দেওয়া কাপড়ের পাশে তার দলের ফেরদৌসী, সাথী, রাজিয়া, কোহিনুরসহ ৯ শিশুর নাচের তালে তালে কবিরাজ স্বপন ‘নেমে যাও, নেমে যাও, নুলার বাও, ভাটির দিকে নেমে যাও....., মা ফাতেমার দোহায় লাগে, নেমে যাও.....’ এ রকম নানা ধরনের গান গেয়ে ঝাঁটা দিয়ে শরীরে আঘাত করে রোগীকে সুস্থ করে তোলার জন্য। এ সময় কবিরাজ স্বপন মিয়া বাম পা দিয়ে রোগীর মাথা থেকে কোমর পর্যন্ত স্পর্শ করে থেমে থেমে গভীর রাত পর্যন্ত চিকিৎসার নামে অপচিকিৎসা করেন।

আইরিন বিবির ছেলে মংলা সরকার সাংবাদিকদের জানান, প্রতিবেশীদের পরামর্শে তিনি এখানে চিকিৎসা করাতে এসেছেন। কবিরাজ ৪ হাজার টাকার চুক্তিতে অগ্রিম এক হাজার টাকা দিয়ে তিনি তার মায়ের চিকিৎসা শুরু করাতে এসেছেন।

নাটাবাড়ী ও পারনাটাবাড়ী এলাকার দুলুন, আলমগীর, স্বপন, জহুরুল, জুবায়ের, করিম প্রমুখ সাংবাদিকদের জানান, যারা কবিরাজের সঙ্গে চিকিৎসা কাজে অংশ নিয়েছেন, তাদের আগে থেকেই বলে দেওয়া আছে কী করতে হবে।

তারা জানান, কবিরাজ কখনো আল্লাহর নামে, কখনো মা ফাতেমার (রা.) নামে, আবার কখনো দেবী কালীর নামে বাদ্যের তালে তালে জারি গান গেয়ে তার অপচিকিৎসা কার্যক্রম শুরু করেন।

এ বিষয়ে বগুড়া জেলা সিভিল সার্জন ডা. আব্দুল হক চিকিৎসা শাস্ত্রে এ ধরনের চিকিৎসার কোনো ধরনের ভিত্তি নেই উল্লেখ করে বাংলানিউজকে জানান, গ্রামের এক শ্রেণীর মানুষকে বোকা বানিয়ে এবং তাদের সরল বিশ্বাসের সুযোগ নিয়ে কবিরাজ নামীয় তথাকথিত চিকিৎসক এ ধরনের প্রতারণা করে আসছে।

তিনি আরও জানান, স্থানীয় প্রশাসনের উচিত দ্রুত এ ধরনের প্রতারককে ধরে আইনের আওতায় নিয়ে আসা।

অন্যদিকে, অভিযুক্ত কবিরাজ স্বপন মিয়া তার চিকিৎসা পদ্ধতি ভালো দাবি করে সাংবাদিকদের জানান, ইতোমধ্যে তার চিকিৎসায় শতাধিক প্যারালাইজড রোগী সুস্থ হয়ে উঠেছেন। ধুনট এলাকার মানুষ তাকে খুব বেশি না চিনলেও উত্তরাঞ্চলে তার ব্যাপক পরিচিতি রয়েছে।

তিনি জানান, চিকিৎসার বিনিময়ে নির্ধারিত কোনো ফি তিনি রোগীর কাছ থেকে গ্রহণ করেন না। বরং তারা ইচ্ছা করে যা দেন, তাই-ই তিনি নেন।

সিরাজগঞ্জ জেলার কাজীপুর উপজেলার মেঘাই গ্রামের খুদু হাওয়ালদার তার ওস্তাদ বলে এ সময় তিনি উল্লেখ করেন।

বাংলাদেশ সময়: ১২৪০ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৬, ২০১১

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।