ঢাকা, শুক্রবার, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

‘সরকারি কর্মকর্তাদের অবহেলায় চকবাজার হত্যাকাণ্ড’

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২২৫৪ ঘণ্টা, মার্চ ১৬, ২০১৯
‘সরকারি কর্মকর্তাদের অবহেলায় চকবাজার হত্যাকাণ্ড’ ‘চকবাজার ট্র্যাজেডি ও ফলোআপ শীর্ষক’ গোলটেবিল বৈঠক

ঢাকা: রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলো যদি না দাঁড়ায়, কার্যকর এবং শক্তিশালী না হয় বা দায়িত্ব পালন না করে তাহলে রাষ্ট্র তো ভালোভাবে চলবে না। পুরান ঢাকায় বারবার আগুন লাগার ঘটনা রাষ্ট্রের ব্যর্থতা। তেমনি চকবাজারের চুড়িহাট্টায় অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর কর্তাব্যক্তিরা দায় এড়াতে পারেন না।

শনিবার (১৬ মার্চ) বিকেলে জাতীয় প্রেসক্লাবে সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) আয়োজিত ‘চকবাজার ট্র্যাজেডি ও ফলোআপ শীর্ষক’ গোলটেবিল বৈঠকে বক্তারা এসব কথা বলেন।
 
গত ২০ ফেব্রুয়ারি রাতে অগ্নিকাণ্ডে ৭০ জনের মৃত্যুর ঘটনায় সরকারি কর্মকর্তাদের অবহেলা, অবজ্ঞাকে সরাসরি দায়ী করে সুজন সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার বলেছেন, ‘সরকারের কর্মকর্তাদের অবহেলার কারণেই এ হত্যাকাণ্ড।

নাগরিক সমস্যা সমাধানে সরকারের দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠানগুলো কার্যকরী হচ্ছে না।

প্রাবন্ধিক-গবেষক সৈয়দ আবুল মকসুদের সভাপতিত্বে বৈঠকে যোগ দেন এফবিসিসিআইয়ের রাসায়নিক ব্যবসা সংক্রান্ত স্থায়ী কমিটির চেয়ারম্যান বেলায়াত হোসেন, স্থপতি ও পরিবেশবিদ ইকবাল হাবিব, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক রোবায়েত ফেরদৌস।

রাসায়নিক গুদাম সরিয়ে পুরান ঢাকার নাগরিক সমস্যার সমাধান হবে না বলে মতামত এসেছে এ বৈঠক থেকে।
  
নগর পরিকল্পনার গলদ, রাজউক ও সিটি করপোরেশনের গাফিলতিকে প্রধান সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত করে সরকার এবং নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিদের নিয়ে বিশেষ সেল গঠনের প্রস্তাবনাও এসেছে আলোচনা থেকে।

একইসঙ্গে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় সুপারিশ বাস্তবায়ন না করায় দোষীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার দাবিও জানিয়েছেন তারা।

অনুষ্ঠানে মূলপ্রবন্ধ উপস্থাপন করেন মুহাম্মদ জাহাঙ্গীর। চকবাজার ট্র্যাজেডির পর নাগরিক সমাজের করণীয় সম্পর্কে আলোকপাত করতে গিয়ে তিনি ১৩টি সুপারিশ উপস্থাপন করেন।

রাজধানীর বাইরে রাসায়নিক গুদাম স্থানান্তর প্রক্রিয়া, পুনর্বাসনের পর সেখানকার পরিবেশ ছাড়াও পুরান ঢাকার ঝুঁকিপূর্ণ ভবন অপসারণ ও রাসায়নিক গুদাম অপসারণে সরকারি টাস্কফোর্সকে সহায়তা করার বিষয়গুলো রয়েছে তার সুপারিশে।

এছাড়া নিমতলির ঘটনার পর যে ১৭ দফা সুপারিশ এসেছিল, তার বাস্তবায়ন না করায় শিল্প মন্ত্রণালয়, সিটি করপোরেশন, স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের বিচার ও শাস্তির আওতায় নিয়ে আসার কথা রয়েছে সেখানে।

তিনি বলেন, আজকে দুই মন্ত্রী একে অপরকে দোষারোপ করছেন। গত সংসদের স্থানীয় সরকার ও পূর্ত মন্ত্রণালয় সংসদীয় কমিটির নির্লিপ্ততার কারণে এ ঘটনা ঘটেছে। এসব দোষীদের শাস্তি না হলে চকবাজারের মতো আরো ঘটনা ঘটতে পারে।

নিমতলির অগ্নিকাণ্ডের পর ১৭ দফা সুপারিশের একটিও বাস্তবায়ন হয়নি বলে অভিযোগ এনে স্থপতি ও পরিবেশবিদ ইকবাল হাবিব বলেন, আন্তঃমন্ত্রণালয় সভায় সে সিদ্ধান্ত হয়েছিল তার একটিও বাস্তবায়িত হয়নি। কর্মকর্তাদের অবহেলা, অবজ্ঞাজনিত হত্যাকাণ্ডের জন্য কাউকে শাস্তি দেওয়া হয়নি। সরকার ক্ষতিপূরণের মাধ্যমে সমাধানের পথ খুঁজছে। কিন্তু এটা কোনো স্থায়ী সমাধান নয়।

পুরান ঢাকার ‘অবসবাসযোগ্য’ এলাকায় আরবান রিনিউয়্যাল প্ল্যানিং বাস্তবায়নের পাশাপাশি ভূমি ব্যবহার অনুমোদন আইনটি নিয়ে চলমান দ্বন্দ্ব নিরসন করতেও সরকারের প্রতি অনুরোধ জানান।

এফবিসিসিআইয়ের রাসায়নিক ব্যবসা সংক্রান্ত স্থায়ী কমিটির চেয়ারম্যান বেলায়াত হোসেন জানান, সরকারের গড়িমসির কারণে রাজধানীর বাইরে রাসায়নিকের গুদাম সরানো যাচ্ছে না।

তিনি বলেন, যেখানে শিল্প-কলকারখানা আছে, আমরা চাইছি তার পাশেই কেমিকেলের গোডাউন সরিয়ে নিতে। আমরা তো বারবার বলছি, আজকে আপনারা আমাদের জায়গা করে দেন, আমরা কালকেই চলে যাবো। কিন্তু গোডাউন সরানোর ব্যাপারে, প্লট বরাদ্দে বারবার অর্থ দেওয়ার নামে সরকার একেক সময় একেক কথা বলছে। আমরা যাব কোথায়?

এসময় পুরান ঢাকা থেকে ক্ষতিকর রাসায়নিকের গুদাম অনেক আগেই সরিয়ে নেওয়া হয়েছে বলে দাবি করলে গোলটেবিল বৈঠকে তিনি তোপের মুখে পড়েন।

পুরান ঢাকায় নাগরিক সমস্যা শনাক্ত ও সমাধান করার জন্য রাজউক, সিটি করপোরেশন, পূর্ত মন্ত্রণালয়, বিস্ফোরক অধিদফতরসহ দায়িত্বপ্রাপ্তদের একটি ‘বিশেষ সেল’ গঠন করতে সরকারের প্রতি অনুরোধ জানান অনুষ্ঠানের সভাপতি সৈয়দ আবুল মকসুদ।

তিনি বলেন, দায়িত্বপ্রাপ্ত সংস্থাগুলো থেকে একজন করে কর্মকর্তাদের নিয়ে এ বিশেষ সেলটি গঠন করা হবে। তারা পুরান ঢাকায় একটি অফিস স্থাপন করে সেখানে কাজ করবে। যতদিন না পর্যন্ত সমস্যা শনাক্ত ও সমাধানের কাজ শেষ না হয়, ততোদিন পর্যন্ত তারা সেখানে কাজ করবেন।

বাংলাদেশ সময়: ১৮৫০ ঘণ্টা, মার্চ ১৬, ২০১৯
টিএম/এসএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।