ঢাকা, শুক্রবার, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

বোকা সেজে বোকা বানান তারা!

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮৩২ ঘণ্টা, মার্চ ১৫, ২০১৯
বোকা সেজে বোকা বানান তারা! র‌্যাবের হাতে আটক প্রতারক চক্রের সদস্যরা, ছবি: বাংলানিউজ

ঢাকা: সৌদি আরবের মুদ্রা রিয়ালের কিছু নোট হাতে নিয়ে কোনো ব্যক্তির কাছে জানতে চান এগুলো কোন দেশের টাকা? কিংবা ওই ব্যক্তির কাছে বিদেশি মুদ্রাগুলো ভাঙানোর ঠিকানা জানতে চান। আসলে কিছুই বুঝেনা এমন ভাব ধরে টার্গেট করা ব্যক্তির দৃষ্টি আকর্ষণ করাই মূল উদ্দেশ্য।

রিয়েলগুলো কোথায় পেলেন জানতেই চাইলে তার সহজ-সরল জবাব ইজতেমার মাঠে পেয়েছে বা কেউ খুশি হয়ে দিয়েছে। এ ব্যক্তির সরলতার সুযোগ নিয়ে টার্গেট করা ওই ব্যক্তি লোভে পড়ে কমদামে রিয়াল কেনার আগ্রহ প্রকাশ করেন।

আর এ ফাঁদে পা দিয়ে টাকার বিনিময়ে রিয়াল কিনলে নিজেই বোকা বনে যান ওই ব্যক্তি। দু-একটি রিয়াল নোট মিললেও আসলে মিলে কাগজের বান্ডেল।

বৃহস্পতিবার (১৪ মার্চ) দিনগত রাতে রাজধানীর ভাটারা থানার কুড়িল বিশ্বরোড এলাকায় অভিযান চালিয়ে এ প্রতারক চক্রের সাত সদস্যকে আটক করেছে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র‌্যাব) সদস্যরা।

আটকরা হলেন-আবু শেখ (৩৮), শাহিন মাতব্বর (৩৭), মহসিন মিয়া (৪৫), আবুল বাশার (৪০), কামরুল শেখ (৩৫), ইশারত মোল্লা (২৭) ও আব্দুর রহমান মোল্লা (৪০)। এ সময় তাদের কাছ থেকে ১ হাজার ৫০০ রিয়েল, ৩ হাজার ৮২২ টাকা ও ১০ টি মোবাইল ফোন উদ্ধার করা হয়।

শুক্রবার (১৫ মার্চ) দুপুরে রাজধানীর কারওয়ানবাজারে র্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা জানান র‌্যাব-১ এর অধিনায়ক (সিও) লেফটেন্যান্ট কর্নেল সারওয়ার বিন কাশেম।

কর্নেল সারওয়ার বিন কাশেম বলেন, চক্রটি বিভিন্নভাবে জনসাধারণকে ফাঁদে ফেলে প্রতারণা করতো। প্রতারকদের সবাই পেশায় রংমিস্ত্রি, সেই সুবাদে সহজেই মানুষের বাসায় প্রবেশ করতে পারতো। কারো বাসায় ঢুকে বয়স্ক ব্যক্তিদের টার্গেট করতো। তারা রিয়েল দেখিয়ে কমমূল্যে বিক্রি করার কথা বলে প্রলোভন দেখাতো। আর ওই ব্যক্তি রাজি হলেই টাকার বিনিময়ে ওপরে কয়েকটি রিয়েল নোট ভেতরে কাগজ দিয়ে বানানো বান্ডেল দিয়ে কেটে পড়তো।

এর বাইরে গুলশান-বনানীর মতো অভিজাত এলাকায় যানজটে আটকে থাকা প্রাইভেটকারের যাত্রীদের টার্গেট করতো। তারা গাড়ির বাইরে থেকে রিয়েলের নোট দেখাতো, এবং অনেক নোট আছে বলে জানাতো। এ সময় কমদামে কিনতে আগ্রহী সেজে প্রতারক চক্রের অন্য সদস্যরা আসতো। তখন টার্গেট করা ব্যক্তি কেনার ফাঁদে পা দিলে তারা টাকার বিনিময়ে রিয়েলভর্তি ব্যাগ দিয়ে পুলিশ দেখে ফেলবে বলে দ্রুত কেটে পড়তো। কিছু বুঝে উঠার আগেই কাগজ বা কাপড়-দিয়ে মোড়ানো ভুয়া বান্ডেলে প্রতারণার শিকার হতো টার্গেট করা ব্যক্তি।

এছাড়া, হজ ক্যাম্পকে টার্গেট করে চলতো তাদের প্রতারণা। সেখানে গ্রাম থেকে আসা লোকদের ফাঁদে ফেলে এ পর্যন্ত লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে চক্রটি।

কখনো কখনো নিজেরা বোকা সেজে টার্গেট করা ব্যক্তিকে বোকা বানাতো। রিয়েলের নোট দেখিয়ে কিছু বুঝেনা এমন ভাব নিতো। আর সেই সুযোগে টার্গেট করা ব্যক্তি রিয়েল কেনার জন্য রাজি হলেই প্রতারণার শিকার হতো। চক্রটি রিয়েল হস্তান্তর করার জন্য বিভিন্ন শপিংমল কিংবা জনবহুল জায়গা ঠিক করতো, যেন টাকা নিয়ে দ্রুত কেটে পড়তে পারে।

র‌্যাব-১ অধিনায়ক আরও বলেন, আবু শেখ এ চক্রের মূল হোতা। তার নেতৃত্বে দীর্ঘদিন ধরে সাত জনের এ চক্রটি অভিনব পন্থায় প্রতারণা চালিয়ে আসছিল। এমন আরও দুই-একটি চক্র রাজধানীতে সক্রিয় থাকতে পারে, তাদের বিষয়ে র‌্যাবের গোয়েন্দা নজরদারি অব্যাহত রয়েছে।

বাংলাদেশ সময়: ১৪২৬ ঘণ্টা, মার্চ ১৫, ২০১৯
পিএম/ওএইচ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।