ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

আর্তমানবতার সেবায় বিত্তবানদের এগিয়ে আসার আহ্বান

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১১১ ঘণ্টা, মার্চ ১৪, ২০১৯
আর্তমানবতার সেবায় বিত্তবানদের এগিয়ে আসার আহ্বান

টাঙ্গাইল: দানবীর রণদা প্রসাদ সাহার দৃষ্টান্ত অনুসরণ করে আর্তমানবতার সেবায় এগিয়ে আসার জন্য দেশের বিত্তশালীদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। 

তিনি বলেছেন, রণদা প্রসাদ সাহা আমাদের দেশের নারী শিক্ষার প্রসার ঘটানোর থেকে শুরু করে মানবতার সেবার যে দৃষ্টান্ত স্থাপন করে গেছেন সেই দৃষ্টান্ত অনুসরণ করার মতো অনেক বিত্তশালী আমাদের দেশে আছেন, তারাও করতে পারেন। তাহলে আমাদের দেশের মানুষের আর কোনো কষ্ট থাকবে না।

বৃহস্পতিবার (১৪ মার্চ) টাঙ্গাইলের মির্জাপুরে ‘দানবীর রণদা প্রসাদ সাহা স্মারক স্বর্ণপদক’ প্রদান অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তৃতাকালে প্রধানমন্ত্রী এ কথা বলেন। রণদা প্রসাদ সাহা প্রতিষ্ঠিত কুমুদিনী ওয়েলফেয়ার ট্রাস্ট এই পদক প্রদান অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।  

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ছোট মেয়ে এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছোট বোন শেখ রেহানা অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, রণদা প্রসাদ সাহা দরিদ্র পরিবারে জন্মগ্রহণ করা সত্ত্বেও পরিশ্রম ও বুদ্ধিমত্তায় তিনি বাংলার অন্যতম ধনী হিসেবে পরিণত হয়েছিলেন। অর্থবৃত্তের মালিক হওয়ার পর তিনি ভোগবিলাসে ডুবে যাননি। বরং অর্জিত অর্থ মানবকল্যাণে ব্যয় করেছেন। এখানেই অন্যদের চেয়ে রণদা প্রসাদ সাহা আলাদা।  

নারী শিক্ষার প্রসারে রণদা প্রসাদ সাহার গভীর আগ্রহ ছিল উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, তিনি প্রতিষ্ঠা করেন ভারতেশ্বরী হোমস, কুমুদিনী কলেজ এবং পিতার নামে দেবেন্দ্র কলেজ। ১৯৫৪ সালে তিনি ঢাকা সেনানিবাসে সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে ম্যাটারনিটি বিভাগের বিল্ডিং স্থাপন করেন। দেশের বহু শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে তিনি আর্থিক সহায়তা দিয়েছেন। কুমুদিনী ওয়েলফেয়ার ট্রাস্টের পরবর্তী প্রজন্ম প্রতিষ্ঠাতার মানবিক প্রয়াস- প্রান্তিক অসহায় জনপদে স্বাস্থ্যসেবা প্রদান ও নারী শিক্ষা প্রসারে নিজেদের নিবেদিত রেখেছেন। ট্রাস্টের সেবা কর্মযজ্ঞে যুক্ত হয়েছে কুমুদিনী উইমেন্স মেডিকেল কলেজ, কুমুদিনী নার্সিং স্কুল ও কলেজ এবং রণদা প্রসাদ সাহা বিশ্ববিদ্যালয়। অনগ্রসর মানুষের কল্যাণের জন্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছে কুমুদিনী ট্রেড ট্রেনিং ইনস্টিটিউট। হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর পক্ষে স্বর্ণপদক গ্রহণ করেন বঙ্গবন্ধুর ছোট মেয়ে শেখ রেহানা।  ছবি: পিআইডিকুমুদিনী ওয়েলফেয়ার ট্রাস্ট অব বেঙ্গলের (বিডি) ৮৬ বছর কার্যকাল পূর্তি উপলক্ষে চারজন বিশিষ্ট ব্যক্তিত্বকে এ বছরের দানবীর রণদা প্রসাদ সাহা স্মারক স্বর্ণপদকে ভূষিত করা হয়। তারা হচ্ছেন- গণতন্ত্রের মানসপুত্র ও অবিভক্ত বাংলার মুখ্যমন্ত্রী হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী (মরণোত্তর), জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম (মরণোত্তর), নজরুল গবেষক ও ভাষা সৈনিক অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম এবং প্রখ্যাত চিত্রশিল্পী শাহাবুদ্দিন আহমেদ।

হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর পক্ষে বঙ্গবন্ধুর ছোট মেয়ে শেখ রেহানা, কাজী নজরুল ইসলামের পক্ষে তার নাতনী খিলখিল কাজী এবং অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম ও শাহাবুদ্দিন আহমেদ প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে স্বর্ণপদক গ্রহণ করেন।

কুমুদিনী ওয়েলফেয়ার ট্রাস্টের পরিচালক প্রতিভা মুৎসুদ্দির সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক, শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি, স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী ডা. মো. মুরাদ হাসান, স্থানীয় সংসদ সদস্য একাব্বর হোসেন। স্বাগত বক্তব্য রাখেন ট্রাস্টের পরিচালক ও রণদা প্রসাদ সাহার পূত্রবধূ শ্রীমতি সাহা, ব্যবস্থাপনা পরিচালক রাজিব প্রসাদ সাহা।  

এর আগে, বেলা সাড়ে ১১টায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অনুষ্ঠানস্থলে পৌঁছালে জাতীয় সংগীত ও দেশাত্মবোধক সংগীত পরিবেশনের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠান শুরু হয়। পরে প্রধানমন্ত্রী ভারতেশ্বরী হোমসের শিক্ষার্থীদের মনোমুগ্ধকর শরীর চর্চা প্রদর্শন উপভোগ করেন। অনুষ্ঠানে রণদা প্রসাদ সাহার জীবন ও কর্ম এবং কুমুদিনী ওয়েলফেয়ার ট্রাস্টের ওপর নির্মিত প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শন করা হয়।  

এর আগে প্রধানমন্ত্রী মির্জাপুর কুমুদিনী কমপ্লেক্সে টাঙ্গাইল প্রেসক্লাবের বঙ্গবন্ধু ভিআইপি অডিটরিয়ামসহ ১২টি প্রকল্পের উদ্বোধন ও ১৯টি প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে স্বর্ণপদকপ্রাপ্তদের ফটোসেশন।  ছবি: পিআইডিউদ্বোধন হওয়া প্রকল্পগুলো হচ্ছে- ধেরুয়া রেলওয়ে ওভারপাস, ৩৩/১১ কেভি সুইচিং স্টেশন, টাঙ্গাইলের বৈল্যা গ্রিড সাবস্টেশন, টাঙ্গাইলের ইন্দ্রবেলতা ৩৩/১১ কেভি ২০ এমভিএ ইনডোর উপকেন্দ্র, বাসাইল, দেলদুয়ার ও নাগরপুর উপজেলা শতভাগ বিদ্যুতায়ন উপজেলা ঘোষণা, সখিপুর উপজেলা কমপ্লেক্সের প্রশাসনিক ভবন সম্প্রসারণ ও হলরুম, কালিহাতী-সয়ার হাট হাতিয়া রাস্তা, মির্জাপুর উপজেলা কমপ্লেক্স সম্প্রসারিত ভবন, টাঙ্গাইল প্রেসক্লাবের বঙ্গবন্ধু ভিআইপি অডিটরিয়াম, মির্জাপুর উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স ভবন, মির্জাপুর উপজেলা প্রাণিসম্পদ উন্নয়ন কেন্দ্র।  

ফলক উন্মোচিত প্রকল্পগুলো হচ্ছে এলেঙ্গা-জামালপুর জাতীয় মহাসড়ক (এন-৪) প্রশস্তকরণ প্রকল্প (টাঙ্গাইল অংশ), এলেঙ্গা-ভূঞাপুর-চরগাবসারা সড়কে ১০টি ক্ষতিগ্রস্থ সেতু ও ০১ টি কালভার্ট পুনঃনির্মাণ এবং আঞ্চলিক মহাসড়ক উন্নয়ন প্রকল্প, টাঙ্গাইল-দেলদুয়ার জেলা মহাসড়ক (জেড-৪০১৫), করটিয়া (ভাতকুড়া)-বাসাইল জেলা সড়ক (জেড-৪০১২) এবং পাকুল্লা-দেলদুয়ার-এলাসিন (জেড-৪০০৭) অংশকে যথাযথমানে ও প্রশস্থতায় উন্নীতকরণ প্রকল্প, কালিহাতী উপজেলা কমপ্লেক্সের প্রশাসনিক ভবন সম্প্রসারণ ও হলরুম নির্মাণ কাজ, করটিয়াপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, দেলদুয়ারের বাতেন বাহিনীর মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর, উপজেলা ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স কার্যালয়, ঘাটাইলের রসুলপুর ইউনিয়ন ভূমি অফিস, লোকেরপাড়া ইউনিয়ন ভূমি অফিস, জেলা সদর মডেল মসজিদ, টাঙ্গাইল সদর উপজেলা মডেল মসজিদ, বাসাইল উপজেলা মডেল মসজিদ, টাঙ্গাইল সদর উপজেলা ভূমি অফিস, সখীপুর উপজেলা ভূমি অফিস, মধুপুর উপজেলা ভূমি অফিস, মির্জাপুর উপজেলা ভূমি অফিস, টাঙ্গাইল সার্কিট হাউসের নতুন ভবন নির্মাণ কাজ, ভারতেশ্বরী হোমসের মাল্টিপার্পাস হল নির্মাণ, কুমুদিনী কল্যাণ ট্রাস্ট ও ইন্সটিটিউট অব পোস্ট গ্রাজুয়েট নার্সিং কমপ্লেক্স।

বাংলাদেশ সময়: ১৭০৬ ঘণ্টা, মার্চ ১৪, ২০১৯
এইচএ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।