ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ৫ বৈশাখ ১৪৩১, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

চালু হবে লালমনিরহাট বিমানবন্দর, গড়া হবে কারখানা

খোরশেদ আলম সাগর, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০০৫৬ ঘণ্টা, মার্চ ১৪, ২০১৯
চালু হবে লালমনিরহাট বিমানবন্দর, গড়া হবে কারখানা বিমানবন্দরের সম্ভাব্যতা যাচাই করেছে বিমান বাহিনী কর্তৃপক্ষ। ছবি-বাংলানিউজ

লালমনিরহাট: অবশেষে চালু হতে যাচ্ছে দক্ষিণ এশিয়ার দ্বিতীয় বৃহত্তম লালমনিরহাট বিমানবন্দর। এমনকি এখানে করা হবে উড়োজাহাজের কারখানাও। 

এ লক্ষ্যে শিগগিরই বিমানবন্দরের সীমানা প্রাচীর নির্মাণের কাজ শুরু করা হচ্ছে।  

বুধবার (১৩ মার্চ) দুপুরে বিমানবাহিনী প্রধান এয়ার চিফ মার্শাল মাসিহুজ্জামান সেরনিয়াবাতের নেতৃত্বে বিমানবন্দরে সভা শেষে বাংলানিউজকে এমন সব সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে জানিয়েছেন লালমনিরহাট জেলা প্রশাসক শফিউল আরিফ।

জেলা প্রশাসক শফিউল আরিফ বাংলানিউজকে জানান, প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর থেকে পরিত্যক্ত অবস্থায় আছে দক্ষিণ এশিয়ার দ্বিতীয় বৃহত্তম লালমনিরহাট বিমানবন্দর। এখানে উড়োজাহাজের কারখানা করার ঘোষণাও দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তার ঘোষণাকে বাস্তবে রূপ দিতে দুইদিন ধরে বিমান বাহিনীর প্রকৌশলীরা বন্দরের বিভিন্ন বিষয় পর্যবেক্ষণ করেন এবং সম্ভব্যতা যাচাই করেন। এরই অংশ হিসেবে বিমান বাহিনীর প্রধান এয়ার চিফ মার্শাল মাসিহুজ্জামান সেরনিয়াবাত বুধবার লালমনিরহাট বিমানবন্দর পরিদর্শনে আসেন। এরপর বিমান বাহিনীর প্রকৌশলীদের সঙ্গে নিয়ে তিনি হেলিকপ্টারে করে পুরো বিমানবন্দর ঘুরে দেখেন এবং এর সম্ভব্যতা যাচাই করেন।  

এরপর সেনাবাহিনী, বিমান বাহিনী ও সিভিল প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নিয়ে বিমানবন্দরে সভা করেন বিমান বাহিনীর প্রধান এয়ার চিফ মার্শাল মাসিহুজ্জামান সেরনিয়াবাত।  

সভায় এ অঞ্চলের ব্যবসা বাণিজ্যের প্রসার ও আর্থ সামাজিক উন্নয়নে পরিত্যক্ত বিমানবন্দরটি প্রথম দিকে বিমান কারখানা হিসেবে চালু করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। কারখানা করার পর যাত্রী পরিবহনের জন্য চালু হবে ফ্লাইট।

জেলা প্রশাসক শফিউল আরিফ সভার বরাত দিয়ে বাংলানিউজকে আরো জানান, বিশাল এ বিমানবন্দরটি প্রথম দিকে বিমান কারখানা করা হবে। পরে এখানে চাহিদা অনুযায়ী যাত্রী পরিবহন ব্যবস্থা চালু করা হবে। এ ক্ষেত্রে প্রথমে নিরাপত্তার স্বার্থে  বিমানবন্দর এলাকার সীমানা প্রাচীর নির্মাণ করা হবে। চার কিলোমিটার রানওয়ে, বিশাল টারমাক, হ্যাঙ্গার, ট্যাক্সিয়েসহ সব অবকাঠামো একটি পূর্ণাঙ্গ বিমানবন্দরের আদলেই রয়েছে। প্রাইভেট এয়ার লাইনসগুলো চাইলে এখনই এটিতে ফ্লাইট চালু করতে পারে। প্রয়োজন শুধু সীমানা প্রাচীর। এজন্য জরুরি ভিত্তিতে বিমানবন্দরের সীমানা প্রাচীর নির্মাণ কাজ শুরু করা হবে। আর্থ সামাজিক অবস্থা বিবেচনায় যাত্রী পরিবহনে সংকট হবে না বলেও সভায় আশা প্রকাশ করা হয়।

জেলা প্রশাসক আরো জানান, সীমানা প্রাচীরে বিমানবন্দরের জমি ব্যবহারকারী কৃষকদের যাতে কোনো ক্ষতি না হয় সে বিষয়ে কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে তাদের খুশি করে সীমানা প্রাচীর নির্মাণ করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। কারখানা হলে এখান থেকে যাত্রী সেবাও নিশ্চিত করা যাবে।

এর আগে এ বিমানবন্দরটির সম্ভব্যতা যাচাই করতে মঙ্গলবার (১২ মার্চ) দিনভর যশোর বিমান বাহিনীর একটি প্রকৌশলী দল দু’টি বিমান সফলভাবে ওড়াতে ও ল্যান্ডিং (অবতরণ) করতে সক্ষম হয়। তাদের সাফল্যের পর এ বৈঠকে বিমান কারখানা স্থাপন ও ফ্লাইট চালু করার সিদ্ধান্ত হয়।  

বুধবার(১৩ মার্চ) বেলা ১২টার দিকে একটি হেলিকপ্টারে করে লালমনিরহাট বিমানবন্দরে আসেন বিমান বাহিনীর প্রধান এয়ার চিফ মার্শাল মাসিহুজ্জামান সেরনিয়াবাত। এরপর বিমানবন্দর পরিদর্শন ও সভা শেষে একটি উড়োজাহাজে করে বিকেল পৌনে ৩টায় ঢাকার উদ্দেশে লালমনিরহাট ত্যাগ করেন তিনি।  

কয়েক যুগ ধরে পরিত্যক্ত অবস্থায় থাকা লালমনিরহাট বিমানবন্দরে নতুন করে দুইদিন ধরে উড়োজাহাজ উড়তে দেখে  জেলাবাসীর মধ্যে উৎসবের আমেজ সৃষ্টি হয়েছে। বুড়িমারী স্থলবন্দরে ভারত, ভুটান ও নেপালের যাত্রী এবং জেলার ব্যবসা বাণিজ্যের প্রসার ও আর্থ সামাজিক উন্নয়নের জন্য জেলাবাসী দীর্ঘদিন ধরে বিমানবন্দরটি চালু করার দাবি করে আসছিল।  

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় মিত্রবাহিনী এশিয়ার দ্বিতীয় বৃহত্তম এ বিমানবন্দরটি ব্যবহার করে। ১৯৪৫ সালে যুদ্ধ শেষ হওয়ার পর থেকে এটি অব্যবহৃত থেকে যায়। তবে ১৯৫৮ সালে স্বল্পপরিসরে ফ্লাইট চালু হলেও তা বেশি দিন আলোর মুখ দেখেনি। এরপর ১৯৮৩ সালে আবার চালু হওয়ার মাত্র সাতদিন পর যাত্রীর অভাবে বন্ধ হয়ে যায়। এরপর বিমানবন্দরের জমি কৃষি প্রকল্প হিসেবে ব্যবহার করছে বিমান বাহিনী কর্তৃপক্ষ।

**লালমনিরহাট বিমানবন্দরে পরীক্ষামূলক চলাচল শুরু

বাংলাদেশ সময়: ২০৪৮ ঘণ্টা, মার্চ ১৩, ২০১৯
এসআই

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
welcome-ad