ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

সাক্ষাৎকার

ঢাকার উন্নয়নে সম্মিলিতভাবে কাজ করতে হবে

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪০৮ ঘণ্টা, মার্চ ১৩, ২০১৯
ঢাকার উন্নয়নে সম্মিলিতভাবে কাজ করতে হবে মেয়র আতিকুল ইসলাম। ছবি: বাংলানিউজ

ঢাকা: রাজধানী ঢাকাকে উত্তর ও দক্ষিণ -এই দুই অংশে বিভক্ত করে ২০১১ সালের ২৯ নভেম্বর আইন পাস হয় জাতীয় সংসদে। সেই হিসেবে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) দ্বিতীয় মেয়র আতিকুল ইসলাম।

সংসদে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের সমর্থন নিয়ে গত ২৮ ফেব্রুয়ারির নির্বাচনে মেয়র পদে বিপুল ভোটে জয় লাভ করেন সফল এ ব্যবসায়ী নেতা। ছিলেন বিজিএমইএ’র সভাপতি।

ব্যবসায়িক সাফল্য হিসেবে ওয়ালমার্ট কর্তৃক সফল উদ্যোক্তার স্বীকৃতিও পেয়েছেন কয়েকবার।  

উপ-নির্বাচনে মেয়র নির্বাচিত হওয়ার পর চলতি মাসের ৭ মার্চ শপথ নিয়ে ১০ মার্চ (রোববার) ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) প্রথম অফিস করেন আতিকুল ইসলাম। দায়িত্ব গ্রহণের পর ঢাকা উত্তর সিটি নিয়ে নিজের নির্বাচনী ইশতেহার বাস্তবায়নের পাশাপাশি নতুন কিছু কর্মপরিকল্পনার কথাও খোলাখুলিভাবে বলেছেন বাংলানিউজকে দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে। সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন স্টাফ করেসপন্ডেন্ট শাওন সোলায়মান
 
বাংলানিউজ: সাম্প্রতিক সময়ে বেশ কয়েকটি গবেষণা এবং আন্তর্জাতিক প্রতিবেদন অনুযায়ী, ঢাকা পৃথিবীর বসবাস অযোগ্য শহরগুলোর মধ্যে অন্যতম। এমন একটি সময়ে ঢাকার একটি অংশের মেয়র হিসেবে দায়িত্ব নিলেন। চ্যালেঞ্জ কীভাবে মোকাবেলা করবেন?

আতিকুল: চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করার একটাই উপায়- কাজ করে যেতে হবে, আর সেটাই আমরা শুরু করেছি। আমি শুধু এটুকু বলব যে অতি দ্রুত একটি পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন ঢাকা আমরা গড়ে তুলব। সবাইকে সঙ্গে নিয়েই ঢাকাকে আমরা সুন্দর করে গড়ে তুলবো।
 
বাংলানিউজ: শপথ গ্রহণের সময় বা পরে প্রধানমন্ত্রীর তরফ থেকে আপনি কী ধরনের দিক নির্দেশনা পেয়েছেন?

আতিকুল: শপথ গ্রহণের সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমাকে বলেছেন, তিনি একটি পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন ঢাকা দেখতে চান। অর্থ্যাৎ তার কী ‘মেসেজ’তা পরিষ্কার। আমি সবাইকে সঙ্গে নিয়ে সেই লক্ষ্যেই কাজ করে যাব।
 
বাংলানিউজ: ঢাকা শহরের সমস্যাগুলোর মধ্যে যদি প্রধান ও গুরুত্বপূর্ণ এমন পাঁচটি সমস্যা চিহ্নিত করতে বলা হয়, আপনি কোনগুলোকে চিহ্নিত করবেন?

আতিকুল: ঢাকার সমস্যা তো আসলে অনেক। তার মধ্যে পাঁচটি সমস্যাকে চিহ্নিত করতে হলে প্রথমে বলতে হবে মশার কথা। এটা একটি বড় সমস্যা। দ্বিতীয়টি হচ্ছে ফুটপাথ। আমরা প্রচুর অভিযোগ পাচ্ছি, সাধারণ পথচারীরা নির্বিঘ্নে হাটতে পারছেন না। এরপর বলতে হয়, সামনে বর্ষা মৌসুম। জলাবদ্ধতা প্রতি বারের একটি বড় সমস্যা। এছাড়াও পর্যাপ্ত পরিমাণে খেলার মাঠ না থাকা আরেকটি সমস্যা। বিশেষ করে তরুণদের কাছে। আর সবশেষে বলতে হয়, পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা। যত দ্রুত সম্ভব ঢাকাকে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করে তুলতে হবে। এখানে উল্লেখ করি যে আগামী ১৭ মার্চ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মবার্ষিকীর দিন থেকে আমরা বড় পরিসরে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা অভিযানে নামছি। এ অভিযানে আমরা স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের সম্পৃক্ত করব।
 
বাংলানিউজ: কোন বিষয়টি নিয়ে আপনি প্রথমে কাজ করবেন?

আতিকুল: এখানে প্রথম বা শেষ বলে কিছু নেই। কাজ শুরু করেছি এটাই বড় কথা। গুরুত্ব দিয়ে সব কাজই করতে হবে। কিছু কাজ শেষ হতে হয়তো সময় লাগবে। কিন্তু তাই বলে বসে থাকবো না।  
  
বাংলানিউজ: আপনি প্রায় ১৩ মাসের জন্য মেয়র নির্বাচিত হয়েছেন। এ সময়ে আপনার কর্ম পরিকল্পনাগুলোর কোন রূপরেখা তৈরি করেছেন কী না?

আতিকুল: আমি ঠিক এক বছরকে সামনে রেখে কোনো রূপরেখা তৈরি করিনি। কারণ ঢাকা শহর এক বছরের কোন বিষয় না। প্রধানমন্ত্রী আগামী ১০০ বছরের জন্য ‘ডেল্টা প্ল্যান’ দিয়েছেন। তাই এক বছর সেই অর্থে গুরুত্বপূর্ণ নয়। আমি যেটা করতে চাই, কাজ করতে চাই। কাজ শুরু করে দিতে চাই। যেমন মশার বিরুদ্ধে প্রয়োজনে আমি একরকম ‘যুদ্ধ’ করব। তবে আমার কাজের পরিকল্পনার মধ্যে একটি বিষয় আছে, আমাদের মাঠ পর্যায়ের যেসব কর্মী আছেন বিশেষ করে যারা মশা নিধনে কাজ করেন, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা কর্মী আছেন; আমি নিজে তাদের সঙ্গে সরাসরি কথা বলবো। শুক্রবার (১৫ মার্চ) আমি মশক নিধনের দায়িত্বে থাকা কর্মীদের সঙ্গে কথা বলব। মাঠ পর্যায়ের প্রতিটি কর্মীর সঙ্গে আমি কথা বলব। আমার মনে হয়, সিটি করপোরেশনের ইতিহাসে এমনটা প্রথম।
  
বাংলানিউজ: একটু ভিন্ন প্রসঙ্গে আসি। প্রায়শই আপনাকে প্রয়াত মেয়র আনিসুল হকের সঙ্গে তুলনা করা হয়। হয়তো আগামীতেও হবে। এ বিষয়টি আপনার জন্য আলাদা চাপ কী না?

আতিকুল: মানুষ যদি ভালো কাজ করে সেটিকে ফলো করার মধ্যে লজ্জা বা অহংকারের কিছু নেই। উনি ভালো কাজ করে গেছেন বলেই মানুষ তার কথা বলে। খারাপ কাজ করলে তো বলতো না। ওনাকে নিয়ে বা ওনার কাজ নিয়ে আমার খারাপ লাগার কিছু নাই। আমি বরং তার থেকে অনুপ্রাণিত হই। উনি আমার সহকর্মী ছিলেন। উনি এবং আমি দু’জনই বিজিএমইএ’র সাবেক সভাপতি ছিলাম। ওনার ভালো কাজগুলো থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে আমরা আরও বেশি বেশি কাজ করব।

বাংলানিউজ: কিন্তু ওনার ‘ইমেজ’ এর বাইরে গিয়ে আপনাকে আপনার একটি ইমেজ তৈরি করতে হবে। এবিষয়ে আপনার কী মন্তব্য?

আতিকুল: এখানে আমি প্রতিযোগিতার জন্য আসিনি। আমার মতো করে কাজ করে যাব। ভালো-মন্দ উপলব্ধি করার দায়িত্ব জনগণের। ওনারাই মূল্যায়ন করবেন যে আমি কেমন কাজ করেছি। এখানে কার পাল্লা ভারী সেটা মাপার কিছু নেই।
 
বাংলানিউজ: আনিসুল হক অনেকটা ‘অ্যাকশন ধর্মী’ ছিলেন। আপনার কাজের স্টাইলটা কেমন হবে?

আতিকুল: প্রথমত, আমি একটু দেখে-শুনে ও বুঝে কাজ করতে চাই। তবুও অ্যাকশন তো নিতেই হবে, নেবো। এই যে আমরা কাজ শুরু করে দিয়েছি এটাই তো একটা অ্যাকশন। যেমন একটা বিষয় বলি, আমরা মঙ্গলবার (১২ মার্চ) থেকেই মাঠ পর্যায়ে কাজে নেমেছি। ঢাকা শহরের যে জায়গাগুলোতে পানি জমে থাকে সেখানি আমি যাবো। এ বিষয়ে দ্রুত কার্যকর ব্যবস্থা নেবা। আবার আমার টিম এটিকে ফলোআপ করবে। এর দুই-তিন দিন পর আমি আবার সরেজমিনে গিয়ে কাজের অগ্রগতির খবর নেব। একবার গিয়েই আমার দায়িত্ব শেষ করে দেবো না। কারও অবহেলার জন্য জনগণের ভোগান্তি হবে সেটা আমি বরদাস্ত করব না।
 
বাংলানিউজ: আপনি সম্প্রতি বলেছেন যে আপনি শর্ট, মিড এবং লং-টার্ম ভিত্তিতে কাজ বা প্রকল্প হাতে নেবেন। কোন ধরনের কাজ কোন ধরনের মেয়াদে আপনি ফেলতে চান?

আতিকুল: আমার নির্বাচনী ইশতেহার ছিল- আমরা একটি সুস্থ, সচল এবং আধুনিক গতিময় ঢাকা গড়ে তুলতে চাই। সেখানেও আছে যে আমরা কোন কাজটা কখন করব। যেমন ধরেন মশা; এটা একটা শর্ট টার্ম ভিত্তিক কাজ। প্রত্যেক দোকানের সামনে দু’টি করে গাছের টব এবং বাসা বাড়ির ছাদে অথবা বারান্দায় বনায়নের কথা বলেছি আমি। যারা এ আহ্বানে সাড়া দেবেন তাদের জন্য পুরষ্কার থাকবে; যারা সাড়া দেবেন না তাদের জন্য শাস্তির ব্যবস্থা থাকবে। পুরষ্কারের মধ্যে তাদের কর রেয়াতের একটি বিষয় থাকবে। শাস্তির মধ্যে একটা হতে পারে- যে/যারা সহযোগিতা করবেন না তার ব্যবসায়িক লাইসেন্স আমি নবায়ন করবো না। এধরনের ছোট ছোট কাজগুলোর মাধ্যমেই আমাকে লং টার্ম মেয়াদে একটি জায়গায় যেতে হবে। এই কাজগুলোই দেখা যাবে যে পাঁচ-ছয় বছর পর একটি বৈপ্লবিক পরিবর্তন এনে দিয়েছে আমাদের সামনে।
 
বাংলানিউজ: ঢাকা শহরে সিটি করপোরেশন ছাড়াও আরও প্রায় ৫১টি সংস্থা কাজ করে। ঢাকা শহরের উন্নয়নের অন্তরায় এসব সংস্থাগুলোর মধ্যে সমন্বয়ের অভাব, আমলাতান্ত্রিক জটিলতা এগুলো অনেক বড় সমস্যা। আপনি নিজেও বলেছেন যে ঢাকার উন্নয়নে স্বার্থে কোথাও কোনো ফাইল আটকে থাকলে আপনি নিজে প্রয়োজনে সেখানে যাবেন। এধরনের সমস্যা সমাধানে নগরবিদেরা ‘নগর সরকার’ প্রণয়নের পরামর্শ দেন। আপনি কী মনে করেন যে ঢাকার উন্নয়নে আসলেই এ সংস্থাগুলোকে একটি ছাতার নিচে নিয়ে আসা উচিত? আর যদি মনে করেন তাহলে নগর সরকার গঠনে আপনি কোনো পদক্ষেপ নেবেন কী না?

আতিকুল: আমরা চেষ্টা করবো সবাইকে নিয়ে কাজ করার। সবাই মিলে সবার ঢাকা। আজকে টিঅ্যান্ডটি’তে যারা রয়েছেন, ওয়াসায় যারা রয়েছেন, গ্যাসে যারা আছেন, ইলেক্ট্রিসিটিতে যারা আছেন সবাই কিন্তু ঢাকায় থাকি; সবাই কিন্তু ঢাকার উন্নয়নে কাজ করবে; ঢাকাবাসীর জন্য করবে। আমরা সিটি করপোরেশনের যারা আছি আমরাও কিন্তু ঢাকা ও ঢাকাবাসীর উন্নয়নে কাজ করব। সবাই যদি ‘কালেকটিভ ওয়েতে’ কাজ করি তাহলে আমাদের সবার জন্য ভালো। সম্মিলিতভাবে যদি কাজ করা যায় তাহলে সময় যেমন বাঁচে তেমনি অর্থনৈতিকভাবে আমরা অনেক এগিয়ে যাবো। একই সঙ্গে নগরবাসীর দুর্ভোগ পোহাতে হবে না। আমরা একটি রাস্তা করলাম আর পরে যদি টিঅ্যান্ডটি বা গ্যাস (বা অন্য সংস্থা) কেটে দেয় তাহলে কিন্তু সব নষ্ট হয়ে যাবে। আমরা মনে করি যে এখন সময় এসেছে একটি রাস্তা করার আগে সব সংস্থার সঙ্গে কথা বলবো যে আমরা একটি রাস্তা করতে যাচ্ছি এবং রাস্তায় আগামী পাঁচ বছরে কাউকে হাত দিতে দেব না। এজন্য আসুন, পাঁচ বছরে যেন রাস্তায় হাত না দিতে হয়। এজন্য সব সংস্থাকে আমি অনুরোধ করব, আপনারা আসুন এবং এসে আমরা সম্মিলিতভাবে একটি কাজ করি যাতে আমাদের নগরের দুর্ভোগ কমবে, অর্থনৈতিকভাবে সাশ্রয় হবে, সময় বাঁচবে।
  
বাংলাদেশ সময়: ১০০৫ ঘণ্টা, মার্চ ১৩, ২০১৯
এসএইচএস/এসএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
welcome-ad