ঢাকা, বুধবার, ৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

‘৭ মার্চের ভাষণেই মুক্তিযুদ্ধের নির্দেশনা ছিলো’

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৬২৬ ঘণ্টা, মার্চ ৮, ২০১৯
‘৭ মার্চের ভাষণেই মুক্তিযুদ্ধের নির্দেশনা ছিলো’ সংসদ অধিবেশন। ফাইল ফটো

জাতীয় সংসদ ভবন থেকে: বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের কালজয়ী ভাষণকে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের মুলমন্ত্র হিসেবে অখ্যায়িত করেছেন একাদশ জাতীয় সংসদের সদস্যরা (এমপি)। 

৭ মার্চ উপলক্ষে জাতীয় সংসদে দেয়া বক্তব্যে তারা বলেন, ৭ মার্চ বঙ্গবন্ধু তার ঐতিহাসিক ভাষণে স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছিলেন। এ ভাষণেই মুক্তিযুদ্ধের নির্দেশনা ছিলো।

২৬ মার্চ ছিলো এর ধারাবাহিকতা মাত্র।  

বৃহস্পতিবার (৭ মার্চ) জাতীয় সংসদের অধিবেশনে পয়েন্ট অব অর্ডারে বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চের ভাষণের ওপর আলোচনায় অংশ নিয়ে সরকারি দল আওয়ামী লীগ ও বিরোধী দল জাতীয় পার্টির সদস্যরা এ মত ব্যক্ত করেন।  

এর আগে বিকেলে সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে দিনের কার্যক্রম শুরু হয়।  

আলোচনায় অংশ নিয়ে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম বলেন, ১৯৭১ সালের ৭ মার্চসহ ওই সময়ে যা কিছু হয়েছে, তা বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে ও পরিকল্পনায় হয়েছে। এক্ষেত্রে অন্য কারো কোনো বিশেষ কৃতিত্ব নেয়ার কিছু নেই।  

‘তখন ঢাকা শহরে মাত্র ১২ লাখ মানুষের বসবাস ছিলো। কিন্তু সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে জনসভায় ঢাকা শহর ছিলো লোকে লোকারণ্য। বিবিসির খবরে বলা হয়েছিলো- ওই জনসভায় ১০ লাখের বেশি মানুষ অংশ নেয়। ৭ মার্চের ভাষণে মুক্তিযুদ্ধের নির্দেশনা ছিলো। এই ভাষণ জাতিকে যুদ্ধে উদ্বুদ্ধ করেছিলো। ’
 
জাসদ সভাপতি ও এমপি হাসানুল হক ইনু বলেন, বঙ্গবন্ধু একটি বিপ্লব, একটি ইতিহাস, একটি অভ্যূত্থান, একটি ধ্রুবতারা। বাঙালি জাতীয়তাবাদের চেতনায় অনেক রাজনৈতিক নেতার জন্ম হয়েছে কিন্তু তারা বাঙালির স্বাধীনতার স্বাদ দিতে পারেননি। বঙ্গবন্ধু বাঙালির স্বাধীনতা দিয়েছেন।  

‘তিনি (বঙ্গবন্ধু) জনতার মধ্যে অভূতপূর্ব সেতুবন্ধন তৈরি করেছিলেন। জনতা তাকে হৃদয়ে স্থান দেয়। ৭ মার্চের ভাষণ ইতিহাসের দরজা খুলে দিয়েছে। ওই ভাষণ ইতিহাস বদলে দেয়ার ভাষণ, নির্বাচন গণআন্দোলনের অপূর্ব সমন্বয় সাধনের ভাষণ, নিরস্ত্র জনগণকে সশস্ত্র করার ভাষণ, অস্ত্র হাতে তুলে নেয়ার ভাষণ, বাংলাদেশের কর্তৃত্ব গ্রহণের ভাষণ। ’

জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য মুজিবুল হক চুন্নু বলেন, ভাষা আন্দোলনের কারণে একমাত্র বঙ্গবন্ধুই বেশি দিন কারাগারে ছিলেন। ভাষা আন্দোলনের জন্য বঙ্গবন্ধুর চেয়ে বেশি কেউ জেল খাটেননি। বঙ্গবন্ধুকে বলা হয় হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি। কিন্তু আমি এর সঙ্গে একমত নই। বঙ্গবন্ধু সর্বকালের শ্রেষ্ঠ বাঙালি।  

‘২৬ মার্চ স্বাধীনতার ঘোষণা হয়। আসলে স্বাধীনতার ঘোষণা ৭ মার্চই হয়েছিলো। বঙ্গবন্ধুর এই ভাষণে বাঙালি জাতি উজ্জীবিত হয়ে যুদ্ধের প্রস্তুতি শুরু করে। ’
 
বাংলাদেশ জাসদের কার্যকরী সভাপতি মঈনুদ্দিন খান বাদল বলেন, বঙ্গবন্ধু এক দিকে ডেমোক্র্যাটিক মুভমেন্ট অন্য দিকে যুদ্ধের  জন্য সশস্ত্র প্রস্তুতি দুটোই একসঙ্গে নিয়েছেন। তার ৭ মার্চের ভাষণে তিনি মহাত্মা গান্ধীকেও অনুসরণ করেছেন আবার সুভাষ চন্দ্র বসুকে অনুসরণ করেছেন।  

‘৭ মার্চের ভাষণে বাঙালির অন্তরের বাজনা, সেতার বাদক হয়ে বঙ্গবন্ধু সেটাই বাজিয়েছিলেন। বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা হয়ে যায় ৭ মার্চেই, ২৬ মার্চ ধারাবাহিকতা মাত্র। ’
 
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণেই স্বাধীনতার ঘোষণা করেছেন। ৭ মার্চের ভাষণেই স্বাধীনতার কথা তিনি বলেছিলেন। এই ভাষণ সারা বাংলাদেশের মানুষের হৃদয়ে গেঁথে গিয়েছিলো। তিনি সবাইকে একমঞ্চে ডাক দিয়ে ঐক্যবব্ধ করতে পেরেছিলেন বলেই মাত্র ৯ মাসেই আমরা বিজয় লাভ করতে পেরেছিলাম।
 
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মতিয়া চৌধুরী বলেন, বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ ৪৮ বছর হয়ে গেছে। বঙ্গবন্ধুকে ফিদেল কাস্ট্রো হিমালয়ের সঙ্গে তুলনা করেছিলেন, যা আজও জ্বল জ্বল করছে। বঙ্গবন্ধু সম্পর্কে সেই উক্তি যথাযর্থ ছিলো।  

‘আমরা কাছে থেকে যেভাবে দেখেছি দূর থেকে বিদেশের যারা দেখেছিলেন তাদের দেখাটা একটু আলাদা। ফিদেল কাস্ট্রো সেভাবেই দেখেছিলেন বঙ্গবন্ধুকে। ’
 
ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন বলেন, বঙ্গবন্ধুর একটি বক্তৃতা সমস্ত জাতিকে যুদ্ধ করতে উদ্ধুদ্ধ করে। স্বাধীনতার জন্য জাতিকে শহীদ হওয়ার আকাঙ্ক্ষায় উদ্ধুদ্ধ করেছিলেন তিনি। এই বক্তৃতা শুধু বাঙালির জন্য নয়, সারা বিশ্বের মানুষের অনুপ্রেরণার বিষয় ছিলো।

আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য আমির হোসেন আমু বলেন, বঙ্গবন্ধুর এই বক্তৃতা ছিলো মুক্তির দিক-নির্দেশনা। সব দিকেই তিনি নির্দেশনা দিয়েছিলেন। তার এক নির্দেশনায় বাঙালি জাতি মুক্তিযুদ্ধের জন্য সশস্ত্র জাতিতে পরিণত হয়। ৭ মার্চের ভাষণই স্বাধীনতার প্রকৃত ঘোষণা ছিলো। এই ভাষণের নির্দেশনায় জাতি মুক্তির পথ বেছে নেয়।
 
আওয়ামী লীগের আরেক উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য তোফায়েল আহমেদ বলেন, ৭  মার্চের জন্য বঙ্গবন্ধু অপেক্ষা করছিলেন। তার সামনে দুটি পথ খোলা ছিল। একটি হল- স্বাধীনতার ঘোষণা পাঠ করা, আরেকটি যাতে তাকে বিচ্ছিন্নতাবাদী হিসেবে আখ্যা না করতে পারে সেটা।  

‘বঙ্গবন্ধু দুইটাই করেছিলেন। সেই তাত্ত্বিক ভাষণে মুক্তিযুদ্ধে কি করণীয় সে নির্দেশনা দিয়েছিলেন। নিরস্ত্র বাঙালি জাতিকে সশস্ত্র জাতিতে পরিণত করে এক কাঁতারে দাঁড় করিয়ে তিনি একটি দেশ দিয়ে গেলেন। ’

বাংলাদেশ সময়: ০১২৫ ঘণ্টা, মার্চ ০৮, ২০১৯ 
এসকে/এমএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।