ঢাকা, শুক্রবার, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

নতুন উচ্চতায় যাচ্ছে বাংলাদেশ-সৌদি সম্পর্ক

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৪১৩ ঘণ্টা, মার্চ ৮, ২০১৯
নতুন উচ্চতায় যাচ্ছে বাংলাদেশ-সৌদি সম্পর্ক বাংলাদেশ-সৌদি আরবের পতাকা

ঢাকা: বাংলাদেশের বাণিজ্য-বিনিয়োগ বৃদ্ধি, শক্তিশালী অর্থনৈতিক সর্ম্পক স্থাপনে করতে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন সৌদি বাদশা সালমান বিন আবদুল আজিদ আল সৌদ। 

সৌদি বাদশা ও ক্রাউন প্রিন্সের বিশেষ অ্যাসাইনমেন্টে দেশটির প্রভাবশালী দুই মন্ত্রীর নেতৃত্বে উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধি ৩৪ সদস্যের প্রতিনিধি বাংলাদেশ সফর করছেন। দুটি চুক্তি ও ৪টি সমঝোতা স্মারক সই হয়েছে দুই দেশের মধ্যে।

বাংলাদেশে ২৫ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করার আগ্রহও প্রকাশ করেছে সৌদি আরব।  
 
সৌদি বাদশার আগ্রহ এবং তাদের এ যাবৎ কালের সবচেয়ে বিনিয়োগ প্রস্তাব ও গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি চুক্তি- সবমিলিয়ে বাংলাদেশ সৌদি আরবের সম্পর্ক নতুন উচ্চতায় যাচ্ছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
 
বৃহস্পতিবার (০৭ মার্চ) সফররত সৌদি আরবের বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বিষয়ক মন্ত্রী মাজিদ বিন আবদুল্লাহ আল কাসাভি এবং অর্থ ও পরিকল্পনামন্ত্রী মোহাম্মদ বিন মাজিদ আল-তাওজরি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে বৈঠকে সৌদি বাদশার এই আগ্রহের কথা জানান।
 
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত এ বৈঠক বিষয়ে পরে প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন।
 
বাংলাদেশে আসার আগে সৌদি বাদশার সঙ্গে বৈঠকের কথা উল্লেখ করে সৌদি বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বিষয়ক মন্ত্রী মাজিদ বিন আবদুল্লাহ আল কাসাভি বলেন, বাদশা সালমান বাংলাদেশের সঙ্গে শক্তিশালী অর্থনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন করতে আগ্রহী।
 
বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ককে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যেতে  সৌদি আগ্রহের কথা জানান করেন মাজিদ কাসাভি।
 
সৌদি মন্ত্রী বলেন, রেলওয়ে, অ্যারোনেটিক, ডাক ও টেলিযোগাযোগ, বিদ্যুৎ-জ্বালানিসহ তারা সহযোগিতা বাড়াতে ৭টি সেক্টর চিহ্নিত করেছেন।
 
‘সৌদি বিনিয়োগকারীরা বাংলাদেশে বিনিয়োগে আগ্রহী,’ বলেন তিনি।
 
প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে সৌদি আরবের সফররত দুইমন্ত্রী।  ছবি: পিআইডিবৈঠকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে সৌদি বাদশাহ ও ক্রাউন প্রিন্সের অভিনন্দন পৌঁছে দেন তারা।
 
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক ও আর্তসামাজিক উন্নয়নে প্রশংসা করেন সৌদি প্রতিনিধি দল। বিশেষ করে বাংলাদেশের রপ্তানি আয় ১০ বিলিয়ন থেকে ৩৭ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছে যাওয়ার প্রশংসা করেন তারা।
 
শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশের উন্নয়নের কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রীকে কাসাভি বলেন, আপনার নিজের ও আপনার টিমের জন্য গর্ব করা উচিৎ।
 
অতি দরিদ্রের হার কমে আসায় সৌদি মন্ত্রী বাংলাদেশের প্রশংসা করে আশা প্রকাশ করেন করছেন এটা আরও কমে আসবে।
 
বাংলাদেশকে এশিয়ার টাইগার হিসেবে মন্তব্য করেন কাসাভী।
 
সৌদি দুই মন্ত্রীসহ প্রতিনিধি দলকে স্বাগত জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দুই দেশে ঐতিহ্যগত সম্পর্কের কথা তুলে ধরেন।
 
বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সেখানে বিনিয়োগকারীদের জমি দেওয়া হচ্ছে। বাংলাদেশের বিরাট অভ্যন্তরীণ বাজারের কথাও তুলে ধরেন তিনি।
 
লালমনিরহাটে এভিয়েশন অ্যান্ড অ্যারোস্পেস বিশ্ববিদ্যালয় করা হচ্ছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বৈঠকে বলেন, এ লক্ষ্যে ইতোমধ্যে আইন পাস করা হয়েছে।  
 
বৈঠকে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন- অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল, পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন, পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নান, বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি, প্রধানমন্ত্রীর জ্বালানি উপদেষ্টা তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী, বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপু, প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব নজিবুর রহমান, প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের সচিব সাজ্জাদুল হাসান,  বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) নির্বাহী চেয়ারম্যান কাজী এম আমিনুল ইসলাম প্রমুখ।
 
 সৌদি-বাংলাদেশ ২ চুক্তি, ৪ সমঝোতা সই
 
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সৌদি প্রতিনিধি দলের বৈঠকের পর প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ে তাদের উপস্থিতিতে দুটি চুক্তি ও চারটি সমঝোতা স্মারক সই করেছে বাংলাদেশ ও সৌদি আরব।
 
১০০ মেগাওয়াট সোলার আইপিপি নির্মাণে আলফানার কোম্পানি এবং ইলেকট্রিক জেনারেশন কোম্পানি বাংলাদেশ লিমিটেডের সঙ্গে চুক্তি সম্পন্ন হয়। চুক্তিতে সই করেন ইলেকট্রিক জেনারেশন কোম্পানি বাংলাদেশ লিমিটেডের ম্যানেজিং ডিরেক্টর অরুণ কুমার সাহা এবং আলফানার কোম্পানির সেলস অ্যান্ড মার্কেটিং এর ভাইস প্রেসিডেন্ট খালিদ বিন কাবেল আল সুলামি।
 
ট্র্যান্সফর্মার এবং ইলেকট্রিসিটি ডিভাইস উৎপাদনে জেনারেল ইলেকট্রিক ম্যানুফেকচারিং কোম্পানি লিমিটেড এবং ইঞ্জিনিয়ারিং ডাইমেনশনের মধ্যকার চুক্তিতে সই করেন জেনারেল ইলেকট্রিক ম্যানুফেকচারিং কোম্পানি লিমিটেডের ম্যানেজিং ডিরেক্টর সুলতান আহমেদ ভূঁইয়া এবং ইঞ্জিনিয়ারিং ডাইমেনশনের প্রধানমন্ত্রী নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ বিন নাজিব আল হাজি।
 
জনশক্তি বিষয়ে একটি সমঝোতা স্মারক সই করে বিএমইটি এবং আল মাম ট্রেডিং এস্টেট। এতে সই করেন ব্যুরো অব ম্যানপাওয়ার এমপ্লয়মেন্ট অ্যান্ড ট্রেনিং (বিএমইটি) ভারপ্রাপ্ত মহাপরিচালক এস কে রফিকুল ইসলাম এবং আল মাম ট্রেডিং এস্টেটের চেয়ারম্যান ইউসুফ আবদুল্লাহ আল মুশির।
 
ইউরিয়া ফরম্যালডিহাইড-৮৫ প্ল্যান্ট নির্মাণে একটি সমঝোতা স্মারক সই করে বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ কর্পোরেশন এবং ইউসুফ আল রাজি কনস্ট্রাকশন এস্টেট। এতে সই করেন শিল্প মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. আবদুল হালিম এবং বিনিয়োগকারী ইউসুফ বিন আব্দুল্লাহ আল রাজি।
 
সৌদি-বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব বায়ো-মেডিকেল ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড টেকনোলজি স্থাপন বিষয়ে একটি সমঝোতা স্মারক সই করে বাংলাদেশ সুগার অ্যান্ড ফুড ইন্ডাস্ট্রিজ কর্পোরেশন এবং আল আফিলিক গ্রুপ (এএইচ গ্রুপ)। এতে সই করেন শিল্প মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. আবদুল হালিম এবং এএইচ গ্রুপের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ আব্দুল আজিজ এস আলফালেক।
 
ক্যাবল উৎপাদনে একটি সমঝোতা স্মারক সই করে বাংলাদেশ স্টিল অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং করপোরেশন (বিএসইসি) এবং রিয়াদ ক্যাবলস গ্রুপ অব কোম্পানি। এতে সই করেন শিল্প মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. আবদুল হালিম এবং রিয়াদ ক্যাবলস গ্রুপ অব কোম্পানির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ মুস্তাফা মোহাম্মদ রাফিয়া।
 
চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রী ও সচিবরা উপস্থিত ছিলেন।
 
এর আগে রাজধানীর একটি হোটেলে মন্ত্রী পর্যায়ে যৌথ একটি সভায় সৌদি বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বিষয়ক মন্ত্রী মাজিদ বিন আবদুল্লাহ আল কাসাভি বলেন, বাংলাদেশ ও সৌদি আরবের সর্ম্পকের মধ্যে একটি নতুন অধ্যায় দেখছি।
 
বড় পরিসরে বিনিয়োগ সুযোগ খুঁজতে তাদের এ সফর বলেও জানান তিনি।
 
সৌদি মন্ত্রী বলেন, তার দেশ বাংলাদেশের সঙ্গে বাণিজ্য-বিনিয়োগ বাড়াতে সিরিয়াস।
 
একই অনুষ্ঠানে বিডার নির্বাহী চেয়ারম্যান কাজী আমিনুল বলেন, প্রধানমন্ত্রীর শেখ হাসিনার হাত ধরে দেশে বিনিয়োগের পরিবেশ তৈরি হয়েছে। সৌদি আরব ২৫ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করতে চায়।
 
অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, জাতির পিতার হাত ধরেই সৌদি আরবের সঙ্গে আমাদের সুসম্পর্ক। ২০১৮ সালের অক্টোবর মাসে প্রধানমন্ত্রী সৌদি আরব সফর করেছিলেন। তার ফল আসতে শুরু করেছে। দুই দেশের মধ্যে সব সম্পর্ক আরও গভীর হবে।
 
সৌদি প্রতিনিধি দলের বাইরে এই অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের পক্ষে ছিলেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল, পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান, প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) বিষয়ক মুখ্য সমন্বয়ক আবুল কালাম আজাদ।
 
বাংলাদেশ সময়: ২৩৫১ ঘণ্টা, মার্চ ০৭, ২০১৯
এমইউএম/এমএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।