ঢাকা, শুক্রবার, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

৭ মার্চের ভাষণ নিষিদ্ধকারীরা নিঃশেষ হয়ে যাবে

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০০৫৪ ঘণ্টা, মার্চ ৮, ২০১৯
৭ মার্চের ভাষণ নিষিদ্ধকারীরা নিঃশেষ হয়ে যাবে ৭ মার্চের আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

ঢাকা: জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণকে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ ভাষণ হিসেবে উল্লেখ করে আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, এ ভাষণের আবেদন কখনো শেষ না।

বৃহস্পতিবার (০৭ মার্চ) বিকেলে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ৭ মার্চ ১৯৭১- এর ভাষণের উপর বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ কর্তৃক আয়োজিত আলোচনা সভায় এ কথা বলেন তিনি।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, বিশ্বের অন্যান্য ভাষণ সেগুলো একবার দেওয়ার পর সেখানেই থেমে গেছে।

সারা বিশ্বে ৭ মার্চের ভাষণ একমাত্র ভাষণ যেটা এখনো আবেদন রাখে।  

তিনি বলেন, এ আবেদন কোনো দিন নিঃশেষ হওয়ার নয়। এটা যুগ যুগ ধরে মুক্তিকামী মানুষের জন্য যেমন আছে, তেমনি আমরা যারা স্বাধীনতা পেয়েছি, এর প্রেরণাটা রাজনীতিতে আমাদের আদর্শবান হওয়ার, দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হওয়ার, দেশের জন্য ত্যাগ স্বীকার করার এক মহান প্রেরণা আমরা পেতে পারি।  

বঙ্গবন্ধু কন্যা বলেন, যুগের পর যুগ চলে গেছে। কিন্তু এ ভাষণ এখনো মানুষের মধ্যে প্রেরণা যোগাচ্ছে। এটাই হলো সবচেয়ে বড় কথা। পৃথিবীর অন্য কোনো নেতার ভাষণ মানুষের ওপর এতোটা আবেদন রাখতে পারে নাই। ভবিষ্যতে পারবে কি না জানি না।  

তিনি বলেন, যে কারণে এ ভাষণকে বলা হয় সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ ভাষণ। আর সেটাই হচ্ছে সত্য।  

৭ মার্চের ভাষণের প্রতিটি শব্দ গুরুত্বপূর্ণ, অনুপ্রেরণার উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি একটা উদ্যোগ নিয়েছি, এ ভাষণ থেকে কোটেশন তৈরি করবো। আমি যখন এটা করতে গেলাম দেখলাম এর প্রতিটি লাইনই একেকটা কোটেশন। ৩৯টা পর্যন্ত কোটেশন তৈরি করে বললাম সবইতো কোটেশন। এর প্রতিটি লাইন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। প্রতিটি অক্ষর, প্রতিটি শব্দ আমাদের জন্য যে কতটা গুরুত্বপূর্ণ, তা...।

তিনি বলেন, ৭ মার্চের ভাষণ, সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ ভাষণ, যা জাতির পিতার মহান অবদান, এটা শুধু বাংলাদেশের মুক্তিকামী, সারা বিশ্বের মুক্তিকামী মানুষের প্রেরণা হিসেবে থাকবে।

৭ মার্চের ভাষণ মুক্তিযোদ্ধাসহ সব বাঙালির জন্য অনুপ্রেরণার ছিল উল্লেখ করে আ্ওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, বজ্র কণ্ঠের এ বক্তৃতা মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র থেকে প্রতিনিয়ত বাজানো হত। বিশেষ করে এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম আমাদের স্বাধীনতার সংগ্রাম- অনবরত বাজতো। যেটা থেকে আমাদের মুক্তিযোদ্ধারা অনুপ্রেরণা পেতেন।

তিনি বলেন, আমরা যারা দেশের ভেতরে বন্দী ছিলাম আমাদের কাছে এ ভাষণ ছিল বেঁচে থাকার অবলম্বন। সবার জন্য বিরাট প্রেরণা ছিল এ ভাষণ।

৭ মার্চের ভাষণ ইউনেস্কোর ওয়ার্ল্ড হেরিটেজে স্থান পাওয়ার কথা উল্লেখ করে টানা তিনবারসহ চারবারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আমি বার বার একটা প্রশ্ন করে কেউ উত্তর দিতে পারে না, হয়তো পারবেও না। পৃথিবীর বহু দেশে বহু নেতাকর্মী ভাষণ দিয়েছেন। আড়াই হাজার বছরের ভাষণ নিয়ে গবেষণা হয়েছে, সেখানেই এ ভাষণটা হয়ে গেছে সর্বশ্রেষ্ঠ ভাষণ। আজকে ইউনেস্কো বিশ্ব প্রামাণ্য দলিলে এটিকে হেরিটেজ হিসেবে স্থান করে দিয়েছে। অথচ এ ভাষণ ৭৫ এর পর নিষিদ্ধ করা হয়েছিল।  

৭ মার্চের ভাষণ পৃথিবীতে সর্বাধিক বাজানো ভাষণ মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এ ভাষণ যতবার বাজানো হয়েছে পৃথিবীর কোনো ভাষণ, যতই শ্রেষ্ঠ ভাষণ থাক কোনো ভাষণ কিন্তু এতবার বাজানো হয়নি। এটা কতদিন বাজানো হয়েছে, কত ঘণ্টা বাজানো হয়েছে, কত মিনিটি বাজানো হয়েছে কেউ হিসেব করে বলতে পারবে না- কারণ এটা এত বেশি বার বাজানো হয়েছে। এবং কত মানুষ শুনেছে।

শেখ হাসিনা বলেন, আজকে স্বাধীনতার ৪৭ বছর পার হয়ে গেছে। এ ভাষণেরও ৪৮ বছর চলছে। ৪৮ বছরে প্রতি ৭ মার্চ এ ভাষণ বাজানো হয়েছে, জাতির পিতার জন্মদিনে বাজানো হয়েছে, ২৬ মার্চ বাজানো হয়েছে, ১৬ ডিসেম্বর বাজানো হয়েছে, এটা বার বার বাজানো হয়েছে।  

৭৫ পরবর্তী সময়ের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, যারা এক সময় এ ভাষণ নিষিদ্ধ করেছিল তারা ধীরে ধীরে আস্তাকুড়ে যাচ্ছে, তারা আস্তাকুড়েই চলে যাবে, আর নিঃশেষ হয়ে যাবে। বেঁচে থাকবে তারাই যারা মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় যারা বাংলাদেশকে, এদশের মানুষকে ভালোবাসবে তারাই।

পাকহানাদার বাহিনীর অপছন্দের কারণে ৭৫ পরবর্তী সময়ে জিয়াউর রহমান ৭ মার্চের ভাষণ নিষিদ্ধ করেছিল মন্তব্য করে শেখ হাসিনা বলেন, ৭৫ এর ১৫ আগস্টের পর এ ভাষণটা নিষিদ্ধ কেন করা হয়েছিল। সেটা আপনারা বিবেচনা করে দেখবেন। … এ ভাষণ বাংলাদেশে নিষিদ্ধ। বঙ্গবন্ধুর ছবিও নিষিদ্ধ, সব কিছু নিষিদ্ধ ছিল। প্রশ্ন হচ্ছে- এ নিষিদ্ধ কেন হয়েছি। যে ভাষণ পাকিস্তানিরা পছন্দ করে নাই। পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর পছন্দ ছিল না বলেই জিয়াউর রহমান এ ভাষণ নিষিদ্ধ করে দিয়েছিল।

বঙ্গবন্ধুর আদর্শকে ধারণ করতে গিয়ে আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীদের ত্যাগের কথা স্মরণ করে তিনি বলেন, আর সেটাই (৭ মার্চের ভাষণ নিষিদ্ধ) অনুসরণ করে গিয়েছিল একের পর এক মিলিটারি ডিকটেটর যারা এসেছিল। বা যারা ক্ষমতা ওই ক্যান্টনমেন্টে বন্দি করে রেখেছিল। নিষিদ্ধ থাকলেও আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীরা পিছিয়ে থাকেনি। সারা বাংলাদেশে হাটে, মাঠে-ঘাটে। এ ভাষণ বাজাতে থাকে। ভাষণ বাজাতে গিয়ে আওয়ামী লীগের বহু নেতা-কর্মী জীবন দিয়েছে।

আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী, আমির হোসেন আমু, তোফায়েল আহমেদ, মতিয়া চৌধুরী, শেখ ফজলুল করিম সেলিম, মোহাম্মদ নাসিমসহ আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতারা।

বাংলাদেশ সময়: ১৯৫১ ঘণ্টা, মার্চ ০৭, ২০১৯
এমইউএম/এসএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।