ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

অর্থ সঙ্কটে বড়পুকুরিয়া খনির শ্রমিকদের বেতন বন্ধ

উপজেলা করসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭২৬ ঘণ্টা, মার্চ ৬, ২০১৯
অর্থ সঙ্কটে বড়পুকুরিয়া খনির শ্রমিকদের বেতন বন্ধ

পার্বতীপুর (দিনাজপুর): দিনাজপুরের পার্বতীপুরে বড়পুকুরিয়া খনির উৎপাদন, ব্যবস্থাপনা ও রক্ষণাবেক্ষণ চীনা ঠিকাদার মেসার্স এক্সএমসি-সিএমসি অর্থ সংকটে পড়ায় খনি শ্রমিকদের ফেব্রুয়ারি মাসের বেতনভাতা দিতে পারেনি। এতে শ্রমিকদের মধ্যে চাপা ক্ষোভ দেখা দিয়েছে।

মঙ্গলবার (৫ মার্চ) নির্ধারিত দিনে বেতন নিতে গিয়ে শ্রমিকরা জানতে পারেন তাদের অর্ধেক মাসের বেতন দেওয়া হবে। এতে ক্ষুদ্ধ হয়ে বেতন গ্রহণ করেননি শ্রমিকরা।

এদিকে, প্রায় ২০০ কোটি টাকা বকেয়া পাওনা পরিশোধ করা না হলে খনির কয়লা উত্তোলন সম্ভব নয় বলে পেট্রোবাংলাকে জানিয়ে দিয়ে গত ৫ দিন (১ মার্চ) ধরে কয়লা উত্তোলন বন্ধ রেখেছে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানটি।  

জানা গেছে, প্রতিমাসের ৫ তারিখে শ্রমিকদের বেতনভাতা দিয়ে থাকে এক্সএমসি-সিএমসি। মঙ্গলবার ছিল বেতনভাতা দেওয়ার দিন। নির্ধারিত দিনে শ্রমিকরা গিয়ে জানতে পারেন তাদের অর্ধেক মাসের বেতন দেওয়া হবে। এতে শ্রমিকরা ক্ষুদ্ধ হয়ে বেতন গ্রহণ করেননি।

বড়পুকুরিয়া কয়লা খনি শ্রমিক কর্মচারী ইউনিয়নের সভাপতি রবিউল ইসলাম জানান, শ্রমিকরা এমনিতেই ১৯ মাসের বকেয়া ছুটির দিনের টাকা পাবে। তার ওপর অর্ধেক বেতন দিতে চাওয়ায় তারা তা গ্রহণ করেননি।

সূত্র জানায়, বড়পুকুরিয়া খনির চীনা ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান মেসার্স এক্সএমসি-সিএমসি কনসোর্টিয়াম বর্তমানে ৩য় দফা চুক্তির আওতায় ২০১৭ সালের ১১ আগস্ট থেকে কয়লা উত্তোলন করে আসছে।  

এর আগে ২য় দফা চুক্তির মেয়াদ শেষ হয় ২০১৭ সালের ১০ আগস্ট। ঠিকাদারের সঙ্গে চুক্তি অনুযায়ী প্রতিমাসের উৎপাদন বিলের ১০ শতাংশ রিটেনশন (জামানত) বাবদ কেটে রেখে বিল পরিশোধ করা হতো। ঠিকাদার উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী সময়মত কয়লা উত্তোলন করলে চুক্তি মেয়াদ শেষে ৮৬ দিনের মধ্যে কর্তনকৃত টাকা ফেরত পাওয়ার কথা।  

দ্বিতীয় দফা চুক্তির আওতায় ৭২ মাসে ৫.৫ মিলিয়ন টন লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে ৫.৫১ মিলিয়ন টন কয়লা উৎপাদন করে। এতে করে জামানত বাবদ প্রায় ১৩০ কোটি টাকা এবং ওই সময়ে যন্ত্রপাতি ক্রয় বাবদ ৫৬ কোটি টাকা সবমিলে এক্সএমসি-সিএমসি কনসোর্টিয়ামের পাওনা প্রায় ১৮৬ কোটি টাকা। বার বার তাগাদা দেয়া হলেও দেড় বছরেও এ অর্থ পরিশোধ করেনি খনি কর্তৃপক্ষ। এ অবস্থায় অর্থ সংকটে পড়ে এক্সএমসি-সিএমসি কনসোর্টিয়াম।

সূত্রমতে গত ১৯ ফেব্রুয়ারি দেশি-বিদেশি শ্রমিকদের বেতন পরিশোধ করার পর পুরোপুরি আর্থিক সংকটে পড়ে যায় এক্সএমসি-সিএমসি। সুদসহ জামানতের অর্থ ও মাইনিং ইক্যুইপমেন্ট বাবদ পাওনা টাকা পরিশোধ করা না হলে তাদের পক্ষে কয়লা উত্তোলন কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়া সম্ভব নয় বলে সম্প্রতি পেট্রোবাংলাকে জানিয়ে দেয় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটি। সর্বশেষ গত ২৬ ফেব্রুয়ারি পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যানকে চিঠিতে কয়লা উৎপাদন বন্ধের আলটিমেটাম দিয়ে গত ১ মার্চ থেকে নতুন ১৩০৮ নম্বর কোল ফেস থেকে কয়লা উত্তোলন বন্ধ রাখে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটি।

এ বিষয়ে বড়পুকুরিয়া কোল মাইনিং কোম্পানি লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. ফজলুর রহমান বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান দেড়শ’ কোটি টাকার মত পাবে। তাদের টাকা পরিশোধের চেষ্টা করা হচ্ছে। আগামী বৃহস্পতিবার খনির বোর্ড মিটিং রয়েছে। সেখানে সিদ্ধান্ত নিয়ে কিছু টাকা দিয়ে হলেও ঠিকাদারের সঙ্গে সমঝোতা করা হবে। পেট্রোবাংলাও বিষয়টি দেখছে। শিগগির বিষয়টির সমাধান হয়ে যাবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

বাংলাদেশ সময়: ১২২২ ঘণ্টা, মার্চ ০৫, ২০১৯
আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
welcome-ad