ঢাকা, মঙ্গলবার, ১০ বৈশাখ ১৪৩১, ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

দাহ্য রাসায়নিকে 'পুড়ে যেতে পারে' পুরান ঢাকা!

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫৫১ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৭, ২০১৯
দাহ্য রাসায়নিকে 'পুড়ে যেতে পারে' পুরান ঢাকা! গুদামে রক্ষিত রাসায়নিব দ্রব্য। ছবি: বাংলানিউজ

ঢাকা: পুরান ঢাকার পুরো এলাকা যেন মৃত্যুফাঁদ। সেখানে রয়েছে কেমিক্যাল ও রাসায়নিক দ্রব্যের গুদাম। সম্প্রতি ওই এলাকার ‘ওয়াহেদ ম্যানশনে’ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় ৬৭ জনের মৃত্যু হয়েছে। আবারো যদি এ ধরনের ঘটনা ঘটে তবে 'পুড়ে যেতে পারে' পুরান ঢাকা। 

সরেজমিন অনুসন্ধানে দেখা গেছে, পুরান ঢাকার স্যার সলিমুল্লাহ (মিটফোর্ড) মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের পাশেই রয়েছে অসংখ্য কেমিক্যাল ও পারফিউমের দোকান এবং গুদাম। এসব গুদামের কিছু কিছু ভবন পুরান ও জরাজীর্ণ।

যার নিচতলায় ও দোতলায় এসব  রাসায়নিকের দোকান আর গুদাম। উপরে বাসাবাড়ি। এসব আমদানি করা কেমিক্যাল এখানেই বহুকাল ধরে মজুদ রেখে আসছেন এখানকার এসব ব্যবসায়ীরা।

গত ২০ ফেব্রুয়ারি (বুধবার) রাত ১০টা ২৮ মিনিটে চকবাজারের নন্দকুমার রোডের চুড়িহাট্টায় ‘ওয়াহেদ ম্যানশনে’ লাগা ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে সরকারি হিসেব অনুযায়ী প্রাণ হারিয়েছেন ৬৭ জন। ঘটনার পাঁচদিন পর ওয়াহেদ ম্যানশনের ভেতর থেকে বের করে আনা হচ্ছে সব মজুদ রাখা অক্ষত রাসায়নিক দ্রব্যভর্তি বস্তা।


গত বুধবার (২০ ফেব্রুয়ারি) রাতের এ অগ্নিকাণ্ডের কারণ খুঁজতে সরকারের বিভিন্ন দপ্তরের আটটিরও বেশি তদন্ত দল কাজ শুরু করেছে। তদন্ত শেষে তারা ভবিষ্যৎ করণীয় ও চূড়ান্ত মতামত জানাবেন। এ ঘটনায় ফায়ার সার্ভিস, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বিস্ফোরক অধিদপ্তর পৃথকভাবে তদন্ত করে আসছে।

বিস্ফোরক অধিদপ্তরের প্রধান পরিদর্শক শামসুল আলমের কাছে, এ অগ্নিকাণ্ডের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বাংলানিউজকে বলেন, ‘আমরা সবকিছু বিবেচনা করছি দুই-একদিনের মধ্যেই প্রতিবেদন জমা দিতে পারব বলে আশা করছি এখনই কোনো মন্তব্য করতে চাই না। ’ 

সিলিন্ডার বিস্ফোরণের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘শুধু সিলিন্ডার কেন, যে কোনোভাবেই বিস্ফোরণ ঘটতে পারে যেহেতু সিলিন্ডারটি অক্ষত থাকতে দেখা গেছে বা বিকৃতরূপ পাওয়া যায়নি, বিস্ফোরিত সিলিন্ডারও দেখা যায়নি। সেজন্য অন্যান্য সম্ভাবনাগুলো নিয়েও আমরা কাজ করছি। ’

শনিবার (২৩ ফেব্রুয়ারি) ও রোববার (২৪ ফেব্রুয়ারি) দুই দিনে রাসায়নিক ভর্তি বস্তা ট্রাকে করে সরিয়ে নিতে দেখা গেছে। এসব ট্রাকে করে দাহ্য রাসায়নিক নিয়ে যাওয়া হচ্ছে বলে জানান উপস্থিত এক ব্যবসায়ী। তবে এসব রাসায়নিক ভর্তি ট্রাক কোথায় নিয়ে যাওয়া হচ্ছে তা নিয়ে ধোঁয়াশা রয়েছে।

রাসায়নিক ভর্তি বস্তা ২৮টি ট্রাক কাকে বুঝিয়ে দেয়া হচ্ছে এবং কোথায় নেয়া হচ্ছে তা জানতে চাইলে সিটি করপোরেশনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট উদয়ন দেওয়ান বাংলানিউজকে বলেন, আমরা সমন্বিতভাবে কাজটি করছি এটি আমাদের নিয়মিত কাজ। পুলিশ মূলত মালিকপক্ষ ও সমিতির মাধ্যমে এই মালামালগুলো বুঝিয়ে দিচ্ছে।

এ বিষয়ে চকবাজার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা-ওসি (অপারেশন) মনির হোসেন বলেন, আবাসিক এলাকা থেকে এগুলো দ্রুত সরিয়ে ফেলতে হবে, এজন্যই আমরা মূলত মালিকের কাছে তা বুঝিয়ে দিচ্ছি। যেকোনো সময় এগুলো খোয়া যেতে পারে বা হারিয়ে যেতে পারে কিংবা কেউ এসে দাবি করতে পারে সেরকম কিছু যেন না হয় সেজন্যই আমরা সুষ্ঠুভাবে এসব বুঝিয়ে দিচ্ছি।

সিটি কর্পোরেশনের নিজস্ব ট্রাক ও মালিকদের ভাড়া করা ট্রাকে করে অন্যত্র এসব দ্রব্য সরিয়ে নিতে দেখা গেছে সোমবার (২৫ ফেব্রুয়ারি) সকালেও।

ওয়াহেদ ম্যানশন ভবনের বেজমেন্ট থেকে বের হয়ে আসা এতো বিপুল পরিমাণ বস্তা দেখে অবাক হয়েছেন উপস্থিত এলাকাবাসীরাও। একটু দূরের এক বাসার বাসিন্দা তানজিম ইসলাম  বলেন, যদি আগুন এই ভবনের নিচতলায় ছড়িয়ে পড়তো তাহলে হয়তো পুরো এলাকা আর খুঁজে পাওয়া যেত না। ভবনটি মাটির নিচে দেবে তো যেত এবং প্রাণহানিও কয়েকগুণ বেশি হতো।

অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় ভবনের দুই মালিকের নাম উল্লেখ করে এবং ১০-১২ জন অজ্ঞাত ব্যক্তির বিরুদ্ধে ২১ ফেব্রুয়ারি বৃহস্পতিবার থানায় মামলা করেন মোহাম্মদ আসিফ নামের এক ব্যক্তি, আসিফের বাবা মোহাম্মদ জুম্মান এই অগ্নিকাণ্ডে মারা যান।  

এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা চকবাজার থানার ওসি (তদন্ত) মুরাদুল বাংলানিউজকে বলেন, এ বাসাটি মূলত ভাড়া বাসা। কেউই এ ভবনে স্থায়ীভাবে থাকতেন না। মাঝে মাঝে আসতেন।  আমরা আসামিদের গ্রেফতার করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।  

স্থানীয় এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে এই ভবনের মালিক সাবেক কমিশনার ওয়াহিদ হাজী। তার মৃত্যুর পর দুই ছেলে ও তাদের মা এই ভবনে বাস করতেন।

বুধবার রাতে অগ্নিকাণ্ডের পর থেকেই লাপাত্তা এই ভবনের বর্তমান মালিক মোহাম্মদ হাসান ও মোহাম্মদ শহীদ।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগের অধ্যাপক নাসরিন নাহার বাংলানিউজকে বলেন, পুরান ঢাকায় কেমিক্যাল ও রাসায়নিক পদার্থ ব্যবহারের ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক কোনো নিয়মই মানা হয় না। ব্যবসায়ীরা যদি নিরাপত্তার কথা বিবেচনা না করেন তাহলে এমন ঘটনা আবারো ঘটবে। আবারো এ ধরনের ঘটনা ঘটলে 'পুড়ে যেতে পারে' পুরান ঢাকা। আর সেই রাসায়নিকের দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব ফেলবে এই এলাকার মানুষ ও পরিবেশের ওপর।
 
বাংলাদেশ সময়: ১০৪২ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৭, ২০১৯
ডিএসএস/আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।