ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৭ রমজান ১৪৪৫

জাতীয়

রাসায়নিক কারখানার জমি ৩ মাসের মধ্যে

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২৩৩৫ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৪, ২০১৯
রাসায়নিক কারখানার জমি ৩ মাসের মধ্যে সচিবালয়ে আন্তঃমন্ত্রণালয় সভা

ঢাকা: আগামী তিন মাসের মধ্যে রাসায়নিক কারখানার জমি বন্দোবস্তের জন্য ঢাকা জেলা প্রশাসনকে নির্দেশ দিয়েছে দুযোর্গ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়।

চকবাজারের অগ্নি দুর্ঘটনার পর রোববার (২৪ ফেব্রুয়ারি) সচিবালয়ে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এক আন্তঃমন্ত্রণালয় সভা থেকে এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।

সভা শেষে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা প্রতিমন্ত্রী এনামুর রহমান বলেন, জরুরিভিত্তিতে আবাসিক এলাকা থেকে রাসায়নিক কারখানা বা রাসায়নিক গুদামগুলো সরিয়ে নেওয়ার সুপারিশ করা হয়েছে।

কতদিনের মধ্যে সরানো হবে জানতে চাইলে একই মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব শাহ কামাল বলেন, আজকে থেকে সরানোর কাজ শুরু হচ্ছে। ইমিডিয়েটলি।

তিনি বলেন, আবাসিক এলাকায় যাদের লাইসেন্স আছে তাদের সরিয়ে নেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে, তাদের লাইসেন্সের আর কার্যকারিতা থাকবে না।

প্রতিমন্ত্রী বলেন, অগ্নিকাণ্ডের পর ছয়টি কমিটি গঠন করা হয়। কমিটিগুলোর কাজ সমন্বয়ের জন্য আমরা বসেছিলাম। ২০১০ সালের নিমতলীর ঘটনার পর যে সুপারিশগুলো এসেছিল তার সঙ্গে আজকের সুপারিশগুলোর মিল খুঁজে পেয়েছি। আমরা জোর দিয়েছি সুপারিশগুলো দ্রুত বাস্তবায়ন করে ভবিষ্যতে চকবাজার বা পুরান ঢাকাতেই নয়, সারা বাংলাদেশে যাতে এ রকমের ভয়াবহ দুর্ঘটনা যাতে না ঘটে সেজন্য আমরা সবাই সমন্বিতভাবে কাজ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।

‘সুপারিশগুলোর মধ্যে রয়েছে, জরুরিভিত্তিতে আবাসিক এলাকা থেকে রাসায়নিক কারখানা বা রাসায়নিক গুদামগুলো সরিয়ে নেওয়া। ঢাকার বাইরে সরকারি কোন জায়গায় প্লাট বরাদ্দ দিয়ে পল্লি তৈরি করা। ঢাকা জেলা প্রশাসক ৫২ একরের জমির কথা বলেছেন, সেটা তিনি ভূমি মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে কথা বলে এবং শিল্প মন্ত্রণালয়ের প্রস্তাবনার পরিপ্রেক্ষিতে বরাদ্দ দেওয়ার জন্য কাজ করবেন। এটা কেরানীগঞ্জে হতে পারে। তিন মাসের মধ্যে জায়গার বন্দোবস্তের ব্যবস্থা গ্রহণের পরিকল্পনা করা হয়েছে। ’ 

প্রতিমন্ত্রী জানান, সিটি করপোরেশন থেকে সুপারিশ এসেছে অনুমোদনহীন কারখানাগুলোর বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া। অগ্নিপ্রতিরোধ ও নির্বাপণ আইন, ২০০৩ ও ন্যাশনাল বিল্ডিং কোড অনুযায়ী ভবন তৈরি করার জোর দেওয়া হয়েছে। রাসায়নিক দ্রব্যের মজুদ, বাজারজাতকরণ এবং বিক্রির জন্য লাইসেন্স দেওয়ার ক্ষেত্রে তদারকি জোরদার করতে বলা হয়েছে।

‘আবাসিক এলাকায় রাসায়নিক বা বিস্ফোরক দ্রব্যের মজুদ বা বিপণনের বিরুদ্ধে জনমত গঠন করার জন্য উদ্যোগ গ্রহণের সিদ্ধান্ত নিয়েছি। দ্রুত অগ্নি নির্বাপণের জন্য স্থানীয়ভাবে পানির লাইনসহ হাইড্রেন্ট পয়েন্ট স্থাপনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে। ’

তিনি আরো জানান, বিভিন্ন এলাকায় যে পুকুরগুলো আছে সেগুলো পুনঃখনন করে পানির রিজার্ভ বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছি। খালগুলো যেগুলো অবৈধভাবে দখল হয়ে আছে সেগুলো দখলমুক্ত করে পানি সরবরাহের ব্যবস্থা করা হয়েছে। কারণ ফায়ার সার্ভিস এবার অভিযোগ দিয়েছে যে তাদের পানির সরবরাহ পেতে বেশ কষ্ট পেতে হয়েছে। জেলখানার পুকুর ও অনেক বাড়ির রিজার্ভ পানির ট্যাঙ্ক থেকে সহায়তা নেওয়া হয়েছে। এজন্য প্রত্যেক এলাকায় একটি করে রিজার্ভ পুকুরের সাজেশন এসেছে এবং আমরা সিদ্ধান্ত দিয়েছি।   

ফায়ার সার্ভিসের আধুনিকায়ন ও সক্ষমতা বাড়ানোর জন্য উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে জানিয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ভবিষ্যতে যাতে আমাদের নাগরিকদের আর প্রাণ দিতে না হয় সেজন্য সুনিশ্চিত ব্যবস্থা গড়ে তোলা।

রাসায়নিকের গুদাম বা কারখানা সরানোতে দেরির কারণ নিয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ব্যবসায়ীদের অনিহাটাই আজকে মূল কারণ হিসেবে বলা হয়েছে।

সচিব বলেন, ট্রমায় থাকা রোগীদের জন্য মানসিক সেবা প্রদান করা অর্থাৎ যারা বেঁচে গেল তাদের যে ট্রমা সৃষ্টি হয়েছে সেই ট্রমা থেকে বের করে নিয়ে আসতে আমাদের টিম কাজ করছে। ভবিষ্যতে এই ধরনের ঘটনা যেন না ঘটে সেজন্য পূর্ব প্রস্তুতি ও কী ধরনের সমন্বিত প্রচেষ্টা নিতে হবে সে বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। অগ্নিনির্বাপণ সংস্থাগুলোকে আরো কীভাবে সমন্বয় করা যায়, তার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।

তিনি জানান, এ পর্যন্ত ৬৭টি মৃতদেহের মধ্যে ৪৮টি হস্তান্তর করা হয়েছে। বাকি ১৯টি ডিএনএ নমুনা নেওয়া হয়েছে। সেগুলোর এক সপ্তাহের মধ্যে প্রতিবেদন পাওয়া যাবে বলে আশা করি।
 
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী, রেড ক্রিসেন্ট, অধিদফতরের মহাপরিচালকসহ কর্মকর্তারা সভায় উপস্থিত ছিলেন।

বাংলাদেশ সময়: ১৮৩০ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৪, ২০১৯
এমআইএইচ/জেডএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।