ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

পুরান ঢাকার অলিগলি-রাস্তা সংস্কার, সরবে কেমিক্যাল গুদাম

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬৩৪ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৩, ২০১৯
পুরান ঢাকার অলিগলি-রাস্তা সংস্কার, সরবে কেমিক্যাল গুদাম ঢামেক হাসপাতালে বক্তব্য রাখছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ছবি: পিআইডি

ঢাকা: ঘনবসতিপূর্ণ এলাকা পুরান ঢাকা থেকে রাসায়নিক ব্যবসা সরানোর পাশাপাশি অলি-গলি ও রাস্তাগুলোকে নতুনভাবে গড়ে তোলা হবে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তবে উদ্যোগ নেওয়ার পরও পুরান ঢাকা থেকে রাসায়নিকের গুদাম না সরানো দুঃখজনক বলে মন্তব্য করেছেন তিনি। 

পুরান ঢাকার চকবাজারে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে দগ্ধ হয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রোগীদের দেখে সরকারপ্রধান এ মন্তব্য করেন। দগ্ধ ও আহতদের দেখতে শনিবার (২৩ ফেব্রুয়ারি) সকাল সোয়া ১০টার পর ঢামেকে আসেন প্রধানমন্ত্রী।

বেলা ১১টার দিকে বেরিয়ে যান তিনি।
 
গত বুধবার (২০ ফেব্রুয়ারি) রাতের ওই অগ্নিকাণ্ডে এখন পর্যন্ত ৬৭ জনের প্রাণহানির খবর মিলেছে, দগ্ধ-আহত হয়েছেন বহু মানুষ। তাদের মধ্যে অনেককে ঢামেক হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে ভর্তি করা হয়েছে।  
 
এলাকাবাসীর ভাষ্যে, অগ্নিকাণ্ড যে ওয়াহিদ ম্যানশন থেকে ছড়িয়েছে, সেখানে রাসায়নিকের গুদাম ছিল বলে আগুন এভাবে ছড়িয়েছে। যদিও শিল্পমন্ত্রী নুরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন তা অস্বীকার করেছিলেন। পরে বাংলানিউজসহ সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদনে জানা যায়, ওয়াহিদ ম্যানশনের বেজমেন্ট ছিল রাসায়নিকে ঠাসা।  
 
প্রধানমন্ত্রী বলেন, পুরান ঢাকা থেকে রাসায়নিকের গুদাম না সরানো দুঃখজনক। সরানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল, কিন্তু বাস্তবে কিছু দিন কাজ হওয়ার পর আর হয়নি।  
 
তিনি বলেন, আমরা মোবাইল কোর্ট বসিয়েও কারখানগুলো অপসারণ করেছি। কিন্তু সেগুলো আবার বসেছে। এগুলো দ্রুত সরিয়ে নিতে হবে। আমাদের নিজেদের সচেতন হতে হবে। পুরান ঢাকার ঘনবসতির এলাকায় যেন আর কেমিক্যাল না থাকে সে ব্যাপারে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
 
পুরান ঢাকায় রাসায়নিক ব্যবসা, গুদাম সরাতে সবার সহযোগিতাও চান প্রধানমন্ত্রী।
 
পুরান ঢাকার অলি-গলি প্রশস্ত করা হবে
পুরান ঢাকার অলি-গলি ও ঘিঞ্জি সড়কগুলোকে নতুন করে গড়ে তোলার কথা জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, এখানকার রাস্তাঘাট একেবারে সরু। সেই রাস্তায় ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি ঢোকার কোনো উপায় নেই। এই অলি-গলি, রাস্তা; এগুলো আমাদের নতুনভাবে গড়ে তুলতে হবে, প্রশস্ত করতে হবে। যেন ফায়ার সার্ভিসের লোকেরা ঢুকতে পারে।
 
তিনি বলেন, পুরান ঢাকায় এতো গলি যে, আমরা হেলিকপ্টার দিয়েও পানি দিতে পারিনি। এটাও খেয়াল রাখতে হয়েছে যে হেলিকপ্টারের বাতাস থেকেও আগুন ছড়িয়ে যেতে পারে। তাই নিরাপদ দূরত্ব থেকে হেলিকপ্টারে সহায়তা দেওয়া হয়েছে।
 
জাতীয় শোকের সিদ্ধান্ত জানানো হবে রোববার
চকবাজারের অগ্নিকাণ্ডে জাতীয় শোক ঘোষণা করা হবে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এটা একটা বড় ধরনের দুর্ঘটনা যা আমাদের সবাইকে ব্যথিত করেছে। আমরা একটি শোক দিবস ঘোষণা করবো। আজ ছুটির দিন। আগামীকাল রোববার (২৪ ফেব্রুয়ারি) অফিস খুললে ক্যাবিনেট (মন্ত্রিসভা) সদস্যদের সঙ্গে আলোচনা করে শোকের ঘোষণা দেওয়া হবে।
 
গণমাধ্যমকর্মী ও উৎসুক মানুষের আচরণের সমালোচনা
চকবাজারে অগ্নিকাণ্ডের সময় উৎসুক মানুষের রাস্তায় ভিড় করা এবং  বারবার ফায়ার সার্ভিস কর্মীদের থামিয়ে প্রশ্ন করে আগুন নেভানো ও উদ্ধারকাজে সংবাদকর্মীদের প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টির সমালোচনা করেন প্রধানমন্ত্রী।

তিনি বলেন, বিশেষ করে টিভি সাংবাদিকেরা প্রশ্ন করেই যাচ্ছেন। এটা কি প্রশ্ন করার সময়? উত্তর আশা করেন কিভাবে? তারা কাজে যাবেন। অথচ তাদের আটকে রেখে প্রশ্ন করা হচ্ছে। চকবাজারে অগ্নিকাণ্ডে দগ্ধ হয়ে চিকিৎসাধীন ব্যক্তিদের দেখতে ঢামেক হাসপাতালে আসেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।  ছবি: পিআইডিঅগ্নিকাণ্ডের বিষয়ে দেশবাসীকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, দেশবাসীকে এইটুকু বলবো তারা যেন দোয়া করেন। আমাদের দেশে এ ধরনের দুর্ঘটনা যেন আর না ঘটে, সবাই সতর্ক থাকবেন।
 
জলাধারগুলো ভরাটের ফলে রাজধানীবাসীর বিপদ বেড়ে গেছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ঢাকায় অনেক পুকুর ছিল। ধোলাইখাল থেকে শুরু করে অনেক খাল ছিল, শান্তিনগর খাল, সেগুনবাগিচা খাল। দুর্ভাগ্য হলো সেগুলোতে হয় বক্স-কালভার্ট করা হয়েছে, অথবা বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছে। পুকুরগুলো একে একে ভরাট করা হয়েছে।
 
চকবাজারে আগুন নেভাতে পানি প্রাপ্তির অসুবিধার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, পানি পাওয়া এটা ছিল কষ্টকর। পুরোনো জেলখানার পুকুর থেকে পানি আনা হয়েছে। সব বাড়ি-ঘর থেকে পানি আনা হয়েছে, রিজার্ভ ট্যাংক থেকে পানি দিয়েছে, ওয়াসা সহযোগিতা করেছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই ধরনের আগুন লাগলে পানির যেন অভাব না হয় সে বিষয়টা সবাইকে খেয়াল করতে হবে।  
 
চিন্তা করবেন না, চিকিৎসার ব্যয়ভার সরকার দেখছে
‌ঢামেকে পৌঁছেই প্রধানমন্ত্রী বার্ন ইউনিটের দ্বিতীয় তলার নিবিড় পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রের (আইসিইউ) সামনে যান। সেখানে তার সঙ্গে ছিলেন ‘শেখ হাসিনা ন্যাশনাল বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউট’র প্রকল্প পরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল কালাম।
 
ডা. কালাম বাংলানিউজকে জানান, প্রধানমন্ত্রী আইসিইউতে এলেও চিকিৎসাধীনদের ইনফেকশন হবে বা চিকিৎসায় ব্যাঘাত ঘটবে চিন্তা করে ভেতরে ঢোকেননি। তিনি বাইরে অপেক্ষমান স্বজনদের সঙ্গে কথা বলেন।
 
প্রধানমন্ত্রী তাদের বলেন, ‘আপনারা চিন্তা করবেন না। চিকিৎসার ব্যয়ভার সরকার দেখছে। রোগীরা সুস্থ হলে তাদের পুনর্বাসনের চিন্তাও করছে সরকার। ’
 
চিকিৎসকদের উদ্দেশে সরকারপ্রধান বলেন, ‘আপনারা অনেক কষ্ট করছেন, করেছেন। রোগীরা যেন দ্রুত সুস্থ হয়ে ওঠে সেটাও দেখবেন। ’
 
অগ্নিকাণ্ডের পর ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) মেয়র সাঈদ খোকন বৃহস্পতিবার (২১ ফেব্রুয়ারি) ঘটনাস্থল পরিদর্শনে গিয়ে জানান, প্রধানমন্ত্রীর প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানে সারারাত উদ্ধার কাজ পরিচালনা করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী সারারাত জেগে উদ্ধার কাজ তদারক করেছেন। এ ঘটনা গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করেছেন তিনি।
 
বাংলাদেশ সময়: ১১২৭ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৩, ২০১৯
এমইউএম/এজেডএস/এইচএ/

** অগ্নিদগ্ধদের দেখতে ঢামেকে প্রধানমন্ত্রী

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।