ঢাকা, বুধবার, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

অগ্রগতি ৩২ শতাংশ, ২০২২ সালেই বঙ্গবন্ধু টানেল

মফিজুল সাদিক, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩৩৫ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৩, ২০১৯
অগ্রগতি ৩২ শতাংশ, ২০২২ সালেই বঙ্গবন্ধু টানেল ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেল’

ঢাকা: চীনের বাণিজ্যিক নগর সাংহাইয়ের ‘ওয়ান সিটি টু টাউন’র আদলে গড়ে তোলা হচ্ছে বাংলাদেশের বাণিজ্যিক রাজধানী চট্টগ্রামকে। এ ধরনের উন্নয়ন কাজ বাংলাদেশে এবারই প্রথম।

‘কন্সট্রাকশন অব মাল্টি লেন রোড টানেল আন্ডার দ্য রিভার কর্ণফুলী’ প্রকল্পের আওতায় এটি নির্মিত হচ্ছে। পরবর্তীতে ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেল’ নামে প্রকল্পটির নামকরণ করা হয়।

 

২০১৫ সালের নভেম্বর মাসে টানেল নির্মাণ প্রকল্পের কাজ শুরু হয়। ইতোমধ্যেই প্রকল্পের কাজ ৩২ শতাংশ সম্পন্ন হয়েছে। ২০২২ সালের ডিসেম্বর মাসেই কাজ শেষ হওয়ার কথা।
 
বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ সূত্র জানায়, ৩ দশমিক ৩২ কিলোমিটার টানেলের নির্মাণ ব্যয় ৯ হাজার ৮৮০ কোটি টাকা। এর মধ্যে ঋণ হিসেবে চাইনিজ এক্সিম ব্যাংক দেবে ৫ হাজার ৯১৩ কোটি টাকা।  ইতোমধ্যে প্রকল্পে খরচ হয়েছে ১ হাজার ৭৭৭ কোটি টাকা।
 
টানেল টিউব দৃশ্যমান করতে ২০১৮-১৯ অর্থবছরের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে (এডিপি) ২ হাজার ১৯০ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। কর্ণফুলী নদীর তলদেশে টানেল নির্মাণের মূল কাজ ২৪ ফেব্রুয়ারি শুভ উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রকল্প এলাকায় চীন থেকে নির্মাণ সামগ্রীর দু’টি বড় জাহাজ ইতোমধ্যে এসেছে।  

কর্ণফুলী নদীর তলদেশে দেশের প্রথম টানেলটির নির্মাণ কাজ শেষ হলে বদলে যাবে চট্টগ্রামের চিত্র। নগরটি বিস্তৃত হওয়া ছাড়াও আমূল পরিবর্তন আসবে অর্থনৈতিক আঙিনায়। বৃদ্ধি পাবে বন্দরের সক্ষমতাও। প্রতিষ্ঠিত হবে বহুমুখী যোগাযোগ ব্যবস্থা। ফলে চাপ কমবে নগরের ওপর। এ লক্ষ্যে টানেলের কাজ এগিয়ে নিতে সংশোধিত এডিপিতে বরাদ্দ বাড়ছে।
 
কর্ণফুলী টানেলে নির্মাণ প্রকল্পের পরিচালক হারুনুর রশিদ চৌধুরী বাংলানিউজকে বলেন, ‘দ্রুত গতিতে প্রকল্পের কাজ এগিয়ে চলছে। ইতোমধ্যেই ৩২ শতাংশ কাজ সম্পূর্ণ হয়েছে। রোববার (২৪ ফেব্রুয়ারি) টানেল টিউব নির্মাণ কাজ শুরু হবে। প্রধানমন্ত্রী কনস্ট্রাকসন ইয়ার্ড টানেল প্রকল্প এলাকা থেকে এই কাজের উদ্বোধন করবেন। প্রকল্পে অর্থছাড় ঠিকঠাক আছে, ২০২২ সালেই টানেল উন্মুক্ত করা হবে। ’
 
চীনের সাংহাইয়ের আদলে কর্ণফুলী নদীর তলদেশে টানেল নির্মাণ করার মাধ্যমে যোগাযোগ ব্যবস্থার কেন্দ্রস্থল হিসেবে চট্টগ্রামের ভূমিকা শক্তিশালী করা হবে। বর্তমানে চালু দু’টি ব্রিজের উপর দিয়ে যানবাহন চলাচলের চাপ কমানো এবং সাংহাইয়ের আদলে ‘ওয়ান সিটি টু টাউন’ ব্যবস্থা গড়ে তোলার উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে।
 
প্রকল্পটি বাস্তবায়নের মাধ্যমে ঢাকা-চট্টগ্রাম-কক্সবাজারের জাতীয় মহাসড়কের যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন করা হবে। এছাড়া এখানে দেশের সর্ববৃহৎ ৬শ’ মেগাওয়াট করে ১২শ’ মেগাওয়াটের দুটি আলট্রাসুপার ক্রিটিক্যাল কোল ফায়ার্ড পাওয়ার প্লান্ট নির্মাণ করা হচ্ছে।
 
চট্টগ্রাম শহর কর্ণফুলী নদীর মাধ্যমে দুই ভাগে বিভক্ত। মূল শহর এবং বন্দর এলাকা কর্ণফুলী নদীর পশ্চিম পাশে অবস্থিত অন্য দিকে ভারি শিল্প এলাকা পূর্ব পাশে অবস্থিত।
 
বর্তমানে সচল দু’টি ব্রিজের মাধ্যমে ক্রমবর্ধমান যান চলাচল সামাল দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। এছাড়াও কর্ণফুলী নদীর তলায় পলি জমার কারণে চট্টগ্রাম বন্দরের স্বাভাবিক কার্যক্রম ব্যহত হচ্ছে। পলি জমার সমস্যা সমাধানের জন্য কর্ণফুলী নদীতে অন্য কোনো ব্রিজ নির্মাণের পরিবর্তে নদীর নিচ দিয়ে টানেল(সুরঙ্গ) নির্মাণ করা হচ্ছে।
 
টানেল নির্মাণ করা হলে কর্ণফুলী নদীর দুই পাশে নতুন নতুন শিল্প কারখানার বিপ্লব সৃষ্টি হবে। তাছাড়া, ভবিষ্যতে সোনাদিয়ায় গভীর সমুদ্র বন্দরের সঙ্গে ঢাকা এবং চট্টগ্রামের সরাসরি সড়ক যোগাযোগ স্থাপিত হবে। এটি এশিয়ান হাইওয়ের সঙ্গে যুক্ত হবে বিধায় প্রকল্পটি দ্রুত গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে।
 

প্রকল্পের আওতায়  ১২৯ হেক্টর জমি অধিগ্রহণ, ৫ দশমিক ৩৫ কিলোমিটার সংযোগ সড়ক, ৭৬ হাজার বর্গফুট টোল প্লাজার কাজ এবং ৭২৭ মিটার সেতুসহ সাতটি যানবাহন কেনা হয়েছে।
 
বাংলাদেশ সময়: ০৮১০ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৩, ২০১৯
এমআইএস/জেআইএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।