ঢাকা, মঙ্গলবার, ৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

গৌরব, প্রেরণা আর অহংকারের অমর একুশ

হোসাইন মোহাম্মদ সাগর, ফিচার রিপোর্টার | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৫৪৫ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২১, ২০১৯
গৌরব, প্রেরণা আর অহংকারের অমর একুশ প্রতীকী

ঢাকা: বাঙালির জীবনে শুধু একবার নয়, বারবার আসে একুশে ফেব্রুয়ারি। প্রতিবছর তার উজ্জ্বল আলোক সম্পাতে আমরা স্নাত হই। প্রতিবারই একুশ আমাদের শক্তি ও সাহস জোগায়, দেশপ্রেম ও ভাষা চেতনাকে শাণিত করে। আমাদের সৃজন-মেধায় যোগ করে নতুন মাত্রা। এক কথায়- একুশ আমাদের অহংকার, গৌরব, জাতিসত্তা ও প্রেরণার জায়গা।

রক্তস্নাত ভাষা আন্দোলনের স্মৃতিবহ মহান শহীদ দিবস, অমর ২১ শে ফেব্রুয়ারি বৃহস্পতিবার। একই সঙ্গে দিনটি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস।

১৯৫২ সালের এ দিনে মাতৃভাষা বাংলার মর্যাদা রাখতে গিয়ে বুকের রক্ত ঢেলে দিয়েছিল রফিক, সালাম, বরকত, সফিউর, জব্বাররা। তাদের রক্তে শৃঙ্খলমুক্ত হয়েছিল দুঃখিনী বর্ণমালা, আমাদের মায়ের ভাষা। বাঙালি জাতিসত্তা বিকাশের যে সংগ্রামের সূচনা সেদিন ঘটেছিল, মুক্তিযুদ্ধের গৌরবময় পথ বেয়ে স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের মধ্য দিয়ে তা চূড়ান্ত পরিণতি লাভ করে। একুশে ফেব্রুয়ারি তাই বাঙালির কাছে অন্তহীন প্রেরণার প্রতীক।

বাঙালি তরুণদের সেদিনের আত্মদান শুধু ভাষার অধিকার প্রতিষ্ঠার মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকেনি। তারপর থেকে তা একটি গণতান্ত্রিক ও ন্যায়ভিত্তিক আধুনিক রাষ্ট্রব্যবস্থার স্বপ্ন ও অঙ্গীকারে দানা বেধেছিল। সে স্বপ্নই স্বাধীনতা সংগ্রাম, সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধসহ ইতিহাসের প্রতিটি গুরুত্বপূর্ণ পর্যায়ে আমাদের পথ দেখিয়েছে, এখনো দেখায়। তারপর আমাদের একুশে ফেব্রুয়ারির মিলেছে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি; দিবসটি এখন আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসও বটে। মাতৃভাষা বাংলার জন্য বাঙালির আত্মত্যাগের মহিমা ব্যাপ্ত হয়েছে পৃথিবীর সব জাতি-গোষ্ঠীর মাতৃভাষার স্বীকৃতির মধ্য দিয়ে। এর থেকে বড় গৌরবের আর কি হতে পারে!

বাঙালির সে গৌরবে শ্রদ্ধার ফুলে ভরে যায় শহীদ মিনার। খালি পায়ে শিশির ভেজা শ্রদ্ধা নিবেদনে খুঁজে পাওয়া যায় বাঙালির আবেগ। একুশের প্রভাত ফেরি আর কণ্ঠে অমর সঙ্গীত- ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি’, এ দু’টোই যেন সমার্থক। একুশের প্রভাত ফেরি আমাদের শ্রদ্ধা, ভালোবাসা, প্রতিবাদের প্রভাত ফেরি।

তবে দুঃখজনক হলেও সত্য, স্বাধীনতার এত বছর পর আজও একুশের অম্লান চেতনা সর্বস্তরে ছড়িয়ে দেওয়া যায়নি। রাষ্ট্রভাষা হিসেবে দেশের সংবিধানে বাংলার স্বীকৃতি মিললেও সর্বস্তরে তা চালুর দাবি পুরোপুরি বাস্তবায়ন হয়নি। তবে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষশক্তির সরকার ক্ষমতাসীন থাকায় জাতি অনেকটা আশান্বিত।

একুশের প্রথম প্রহর থেকেই জাতি কৃতজ্ঞ চিত্তে ভাষা শহীদদের স্মরণ করছে। দিবসটি সরকারি ছুটির দিন। সারাদেশে দিনের শুরু হবে শহীদ মিনারে পুষ্পাঞ্জলি নিবেদনের মধ্য দিয়ে। বিশ্বের দেশে দেশে নানা ভাষা, নানা বর্ণ, নানা সংস্কৃতির মানুষ গাইবে একুশের গান।

দিবসটি উপলক্ষে বিভিন্ন সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও রাজনৈতিক দল কর্মসূচি নিয়েছে। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের উদ্যোগে একুশের প্রথম প্রহরে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ করা হবে। এছাড়া দেশের সব দলীয় কার্যালয়ে জাতীয় এবং দলীয় পতাকা অর্ধনমিতকরণ ও কালো পতাকা উত্তোলন এবং সকাল ৭টায় কালো ব্যাজ ধারণ ও প্রভাতফেরি নিয়ে আজিমপুর কবরস্থানে ভাষা শহীদদের কবরে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ ও শ্রদ্ধা নিবেদনের কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়েছে।

মহান শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথক পৃথক বাণী দিয়েছেন। এসব বাণীতে তারা ভাষার জন্য আত্মোৎসর্গকারী বীর শহীদদের স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানিয়েছেন। একইসঙ্গে ভাষা আন্দোলনের চেতনায় শহীদদের স্বপ্ন পূরণে দেশ ও জাতির কল্যাণে এগিয়ে আসার জন্য আহ্বান জানিয়েছেন দেশবাসীর প্রতি।

বাংলাদেশ সময়: ০০৩০ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২১, ২০১৯
এইচএমএস/এসএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।