ঢাকা, শুক্রবার, ৬ বৈশাখ ১৪৩১, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

খুলনায় নলকূপে উঠছে না পানি!

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১৪৩ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৭, ২০১৯
খুলনায় নলকূপে উঠছে না পানি! ...

খুলনা: জীর্ণ শরীর নিয়ে সর্বশক্তি প্রয়োগ করে নলকূপ থেকে পানি ওঠানোর চেষ্টা করছেন পঞ্চাশোর্ধ্ব আমিনা। বার বার চেষ্টা করে পানি তুলতে না পেরে হতাশ হয়ে হাঁপিয়ে উঠছেন তিনি।

খুলনার প্রাণকেন্দ্র তারের পুকুরপাড় এলাকার একটি নলকূপ থেকে তাকে শুক্রবার (১৫ জানুয়ারি) দুপুরে পানি ওঠানোর ব্যর্থ চেষ্টা করতে দেখা গেছে।

এ সময় আমিনা বাংলানিউজকে বলেন, “ওরে পানি তো ওঠে না।

দ্যাহেন এক মাস ধরে আমরা পানি উঠাতে পারছি না। একটু দোকানে পানি দিয়ে (বিক্রি করে) খাই। এখন পানি টানি পাই না। মানুষ বকাবকি করে। মসজিদ থেকে পানি আনতি হয়। রাগ করে। প্রায় একমাস পানি উঠে না। মাঘ মাসের কিছুদিন পানি ছিলো। তারপর থেকে এই অবস্থা। ”

এখন কোথায় পানি পাচ্ছেন এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন,  “যাদের বাড়ি সাপলাইয়ের পানি আছে সেন্তে ২/১ কলস নিয়ে আসি। তারা দিতি চায় না। বকাবকি করে। ”

৫-৬ বছর ধরে পানি বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করছেন আমিনা। এবারের মতো এত আগে থেকে টিউবয়েলে পানি ওঠা বন্ধ আগে কখনও হয়নি।

শনিবার (১৬ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে খান জাহান আলী রোডের একটি মেসের শিক্ষার্থী মো. তৌফিক আকুঞ্জি বাংলানিউজকে বলেন, টিউবওয়েলের পানি আমাদের একমাত্র খাবার পানির উৎস। এখন থেকে শুরু করে বর্ষা ঋতুর আগ পর্যন্ত কল থেকে মোটেও পানি উঠানো যায় না। যার কারণে আমাদের মতো যারা মেসে বসবাস করছে তাদের খাবার পানির একটা বিরাট সমস্যার সম্মুখীন হতে হচ্ছে।

এস এম নাজমুস সাকিব নামের আরেক শিক্ষার্থী বাংলানিউজকে বলেন, টিউবওয়েলে পানি না থাকায় এখন পানি কিনে খেতে হচ্ছে। এতে আমাদের অর্থিকভাবে কষ্ট হচ্ছে। যে পানি কিনে খাচ্ছি তা কতটা বিশুদ্ধা তা জানি না।

তিনি আরো বলেন, শুধু টিউবওয়েলের নয়। মেসের মটরেও মাঝে মাঝে পানি উঠাতে পারছে না। আজ দুপুরে পানি না থাকায় গোসল করতে পারিনি।

মহানগরীর সোনাডাঙ্গা এলাকার বাসিন্দা সরওয়ার সাজু বলেন, শুষ্ক মৌসুম শুরু না হতেই খুলনার বেশিরভাগ এলাকার পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ায় হাতে চালিত নলকূপে পানি উঠছে না। ফলে সুপেয় পানির তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে।

আক্ষেপ করে তিনি বলেন, কয়েক বছর ধরে শুকনো মৌসুমে এই অবস্থা হয়। কিন্তু এবার আগেই শুরু হয়েছে।

ভুক্তভোগী নগরবাসীরা জানান, গ্রীষ্ম শুরু হওয়ার আগেই এবার পানির সংকট দেখা দিয়েছে। পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ার কারণে পানি উঠছে না অধিকাংশ টিউবওয়েলে।

তারা জানান, অনেকে প্রতিবেশীদের সাব মার্সেবল ও ওয়াসার লাইন থেকে পানি সংগ্রহ করছেন।

খুলনা মহানগরী ছাড়াও উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে পানি সঙ্কট দেখা দিয়েছে। শহরে ওয়াসা ও সাব মার্সেবল থেকে পানি পানের সুযোগ থাকলেও গ্রামে নলকূপই মানুষের শেষ ভরসা।

গ্রামের অনেককেই পানযোগ্য এক কলসি পানির জন্য কয়েক কিলোমিটার পথ পাড়ি দিতে হচ্ছে। তারপরই মিলছে কাঙ্ক্ষিত পানি। আর যারা ক্লান্ত শরীরে দীর্ঘ এ পথ পাড়ি দিতে পারছেন না তাদের নগদ টাকার বিনিময়ে কিনতে হচ্ছে খাবার পানি। এভাবেই গ্রীষ্ম শুরু হওয়ার আগেই পানি সংগ্রহে রীতিমতো যুদ্ধ করতে হচ্ছে তাদের।

খুলনা ওয়াসা সূত্রে জানা যায়, নগরে প্রতিদিন পানির চাহিদার ৪০ ভাগ পানি খুলনা ওয়াসা সরবরাহ করতে পারবো। খুলনা ওয়াসার মেগা প্রকল্পের পানি সরবরাহ শুরু হলে নগরবাসীর দীর্ঘদিনের দুর্ভোগ লাঘব হবে। টিউবওয়েলের পানির ভরসায় তাদের আর বসে থাকতে হবে না।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, খুলনা মহানগরের আটটি থানা এলাকায় প্রায় ২০ লাখ মানুষ বসবাস করেন। খুলনা ওয়াসা ৪০ ভাগ মানুষের পানির চাহিদা পূরণ করতে পারে। বাকি ৬০ ভাগ মানুষের পানি গভীর-অগভীর নলকূপ এবং ব্যক্তি উদ্যোগে সরবরাহের মাধ্যমে চাহিদা পূরণ হচ্ছে। ভূ-গর্ভস্থ পানি ব্যবহার করে চাহিদা মেটানো হচ্ছে। কিন্তু পানির স্তর ধীরে ধীরে নিচে নেমে যাওয়ায় টিউবওয়েলে পানি উঠছে না।

খুলনা ওয়াসার উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী মো. কামাল উদ্দিন আহমেদ বাংলানিউজকে বলেন, খুলনায় গ্রীষ্ম মৌসুম শুরু হতে না হতেই ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নিচে নেমে যাচ্ছে। হস্তচালিত টিউবওয়েলগুলোতে পর্যাপ্ত পানি উঠছে না। এতে খাবার পানির সংকট দেখা দিয়েছে। গত ৫ বছরে খুলনায় ৩ ফিটের বেশি পানির লেয়ার নিচে নেমে গেছে।

নগরবাসীর জন্য সুখবর দিয়ে তিনি বলেন, নগরবাসীর সুপেয় পানির চাহিদা মেটাতে  এ বছরের মার্চের মাঝামাঝি সময়ে শুরু হচ্ছে আড়াই হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত খুলনা ওয়াসার মেগা প্রকল্পের পানি সরবরাহ। প্রকল্পটি চালু হলে প্রতিদিন ১১ কোটি লিটার পানি সরবরাহ করা সম্ভব হবে। যা দিয়ে ৪৫ হাজার বাড়ির বহু প্রতীক্ষিত পানির চাহিদা মেটানো যাবে। জুন মাসে নগরবাসীর সবাই এ সুবিধা পাওয়া শুরু করবেন। যারা ইতিমধ্যে ওয়াসার লাইন নেননি তারা এখনও লাইন নিতে পারবেন।

বাংলাদেশ সময়: ০৬৪৫ ঘণ্টা,  ফেব্রুয়ারি ১৬, ২০১৯
এমআরএম/এমজেএফ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।