ঢাকা, মঙ্গলবার, ১০ বৈশাখ ১৪৩১, ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

অন্তঃসত্ত্বা ইউএনওকে ওএসডির ঘটনা তদন্তের দাবি সংসদে

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৯৪৬ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১২, ২০১৯
অন্তঃসত্ত্বা ইউএনওকে ওএসডির ঘটনা তদন্তের দাবি সংসদে

ঢাকা: অন্তঃসত্ত্বা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) হোসনে আরা বেগম বীণাকে ওএসডির (বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা) ঘটনায় জাতীয় সংসদে তদন্তের দাবি করেছেন দু’জন এমপি। হোসনে আরা নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার ইউএনও।

সোমবার (১১ ফেব্রুয়ারি) জাতীয় সংসদে অনির্ধারিত আলোচনায় অংশ নিয়ে প্রথমে সাবেক মহিলা ও শিশু প্রতিমন্ত্রী মেহের আফরোজ এমপি এ দাবি করেন। এরপর নারায়ণগঞ্জ সদরের এমপি শামীম ওসমানও একই দাবি করেন।

সংসদের বৈঠকে ৭১ বিধির নোটিশ নিষ্পত্তির পর পয়েন্ট অব অর্ডারে ফ্লোর নিয়ে নারায়ণগঞ্জ সদরের ইউএনওকে ওএসডির করার প্রেক্ষাপট হিসেবে তার ফেসবুক স্ট্যাটাসের প্রসঙ্গটি তুলে ধরেন মেহের আফরোজ এমপি।

একজন নারী সন্তান সম্ভাব্য হলে বিভিন্ন সমস্যার মধ্য দিয়ে সময় অতিবাহিত করতে হয় উল্লেখ করে সাবেক এ প্রতিমন্ত্রী বলেন, একজন ইউএনও অত্যন্ত বেদনাবিধুর স্ট্যাটাস দিয়েছেন। তিনি ৯ বছর পর মা হতে যাচ্ছিলেন। নির্বাচনের সময় তিনি সহকারী রিটার্নিং অফিসার হিসেবে যথাযথভাবে দায়িত্ব পালন করেছেন। দায়িত্বে কোনো গাফিলতি ছিল না। এপ্রিল মাসে তার সন্তান জন্মগ্রহণের কথা ছিল। তিনি যখন ডাক্তারের কাছে গেলেন তখন জানতে পারলেন ওএসডি হয়েছেন। খবরটি শুনে মানসিকচাপে অসুস্থ হয়ে পড়েন এবং তিনি সন্তান প্রসব করেন। সময়ের আগে সন্তানটি প্রসব করার কারণে শিশুটি আশঙ্কাজনক অবস্থায় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে। ৯ বছর পর মা হওয়া এই নারীর মানসিক অবস্থা কী তা আমরা নিশ্চয়ই উপলব্ধি করতে পারছি।

মেহের আফরোজের প্রশ্ন, একজন ইউএনওর দায়িত্ব অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তিনি যদি সেই দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করে থাকেন তাহলে সন্তান সম্ভবা অবস্থায় কেন তাকে ওএসডি করা হলো? এটি আমাদের কাছে স্পষ্ট নয়। একজন অন্তঃসত্ত্বা নারীর সঙ্গে কেমন আচরণ করা উচিত সমাজ এখনও সেই বিষয়টি উপলব্ধি করতে পারে না। এই সময় এমন আচরণ করা উচিত নয় যা সন্তান বা মায়ের ক্ষতির কারণ হতে পারে। সন্তান সুস্থভাবে জন্ম না নিলে তা কেবল মা বা তার পরিবার নয়, দেশের জন্য বোঝা হয়ে যেতে পারে।

সাবেক প্রতিমন্ত্রী এ ঘটনার জন্য জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে বিভাগীয় তদন্ত করার দাবি জানান।

পরে শামীম ওসমান ফ্লোর নিয়ে বলেন, আমি ওমরা হজে থাকার সময় এ ঘটনার কথা জানতে পারি। আমার পরম আত্মীয়ের সঙ্গে এ ঘটনা ঘটলে যতটা দুঃখ পেতাম এ ঘটনায় তেমন দুঃখ পেয়েছি। এ ঘটনায় আমি লজ্জিত। তিনি আমার নির্বাচনী এলাকা সদর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা। তিনি সৎ কর্মঠ ও অত্যন্ত ভালো সরকারি কর্মকর্তা।  

কার নির্দেশে ওই কর্মকর্তাকে ওএসডি করা হয়েছে, প্রশ্ন রেখে শামীম ওসমান বলেন, এ ঘটনার প্রেক্ষাপটে খারাপ কিছু হলে আমি নিজেও নিজেকে ক্ষমা করতে পারবো না।

স্পিকারের উদ্দেশে তিনি বলেন, আমি মনে করি জনপ্রশাসন মন্ত্রীকে কোনো দিকনির্দেশনা থাকলে তা দিতে পারেন।

এদিকে কাজের চাপে সন্তানসম্ভবা ইউএনওর অসুস্থতা আরও বাড়তে পারে সেজন্য তাকে বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওএসডি) করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সচিব ফয়েজ আহম্মদ।

তিনি বলেন, যে আদেশ আমার অনুবিভাগ করেছে তা মন্ত্রণালয়ের সচিব হিসেবে আমি জাস্টিফাইড মনে করেছি, এটায় কোনো অন্যায় হয়নি, যথার্থ হয়েছে।

গত ৪ ফেব্রুয়ারি হোসনে আরা বেগমকে ওএসডি করে আদেশ জারি করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। এরপর গত ৯ ফেব্রুয়ারি ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস তিনি। স্ট্যাটাসে তিনি সন্তানসম্ভবা হওয়ার পর একজন বিশেষ কর্মকর্তা তাকে অযোগ্য হিসেবে উপস্থাপন করে নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলা থেকে বদলির পাঁয়তারা করেই চলেছিল বলে দাবি করেন।

আমার সন্তান প্রসবের সম্ভাব্য তারিখ ছিল ২০ এপ্রিল, কিন্তু ওএসডি হওয়ার খবর শুনে প্রচণ্ড মানসিক চাপে ফুসফুসে ব্লাড সার্কুলেশন অস্বাভাবিকভাবে কমে যায়, ফলে পেটের সন্তানের অক্সিজেন সাপ্লাই বন্ধ হয়ে যায় এবং হঠাৎ করেই পেটের বাবু নড়াচড়া পুরোপুরি বন্ধ করে দেয় বলে জানান তিনি স্ট্যাটাসে।

৫ ফেব্রুয়ারি তার ৩১ সপ্তাহ বয়সী প্রি-ম্যাচিউর বাচ্চা সিজার করে বের করে ফেলা হয়। এখন সে স্কয়ার হাসপাতালের এনআইসিওতে বেঁচে থাকার জন্য প্রাণপণ যুদ্ধ করে যাচ্ছে বলে স্ট্যাটাসে উল্লেখ করেন তিনি।

‘এই নিষ্ঠুর অমানবিকতার পৃথিবীতে কোনো কর্তা ব্যক্তিদের কাছে আমি এ অন্যায়ের বিচার চাই না, শুধু আমার সৃষ্টিকর্তাকে বলব তুমি এর বিচার করো!!!’

বাংলাদেশ সময়: ০৪৩৮ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১২, ২০১৯
এমএফআই/এনটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।