ঢাকা, শুক্রবার, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৮ রমজান ১৪৪৫

জাতীয়

মাহফুজা হত্যায় জড়িত একাধিক ব্যক্তি!

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২২০১ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১১, ২০১৯
মাহফুজা হত্যায় জড়িত একাধিক ব্যক্তি! ইডেন কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ মাহফুজা চৌধুরী পারভীন

ঢাকা: স্বামী ইসমত কাদির গামা ও তিন গৃহকর্মীকে নিয়ে রাজধানীর সায়েন্সল্যাবের সুকন্যা টাওয়ার নামের একটি বহুতল ভবনের ডুপ্লেক্স বাসায় থাকতেন ইডেন কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ মাহফুজা চৌধুরী পারভীন। দুই ছেলেও থাকতেন তাদের পরিবার নিয়ে। রোববার (১০ ফেব্রুয়ারি) রাতে হঠাৎ খবর পেয়ে পুলিশ বাসা থেকে মাহফুজার মরদেহ উদ্ধার করে।
 

পরে ময়নাতদন্তের জন্য মরদেহ ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের মর্গে পাঠায় পুলিশ। ময়নাতদন্ত শেষে সোমবার (১১ ফেব্রুয়ারি) ঢামেক হাসপাতালের ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগের প্রধান ডা. সোহেল মাহমুদ বাংলানিউজকে বলেন, ‘মরদেহের একটি আঙুল ভাঙা ছিলো।

তাকে (মাহফুজা) মুখ চেপে শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হয়েছে। এই হত্যাকাণ্ড একজনের পক্ষে সম্ভব হয়নি। একাধিক ব্যক্তি এই হত্যার সঙ্গে জড়িত বলে মনে হয়। মৃত নারীর ঠোঁটে, মুখে, আঙুলে ধস্তাধস্তির চিহ্ন পাওয়া গেছে’।
 
নিউমার্কেট থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) স্বপন কান্তি দে মাহফুজার সুরতহাল প্রতিবেদন সম্পন্ন করেছেন। তিনি সুরতহালে উল্লেখ করেন, ‘মুখে রক্ত দেখা যায়, হাতের কয়েকটি আঙুলে কালো দাগ আছে। রোববার (১০ ফেব্রুয়ারি) বিকেল সাড়ে ৩টা থেকে সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার মধ্যে স্বামী ও সন্তানরা বাসায় না থাকায়, বাসার কাজের মেয়ে ও অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তিরা তাকে শ্বাসরোধে হত্যা করেছে’।
 
সোমবার সুকন্যা টাওয়ারে গিয়ে দেখা যায় মাহফুজা চৌধুরীর শোকার্ত স্বজনরা আহাজারি করছেন। পুরো ভবনেই বিরাজ করছে গুমোট আবহাওয়া। প্রতিবেশীরাও মেনে নিতে পারছেন না মাহফুজার এমন মৃত্যু।
 
সুকন্যা টাওয়ারের পাশের ভবনে থাকা মাহফুজ-গামা দম্পতির প্রতিবেশী জিয়াউদ্দীন ভুইয়া বাংলানিউজকে বলেন, এটি কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। উনি খুব ভালো, একজন অমায়িক মানুষ ছিলেন। তাদের কোনো শত্রু ছিলো না। কাজের মেয়ের মাধ্যমে এমন কিছু হবে তারা কেন, আমরাও ভাবতে পারছি না। মনের ভেতরে গভীর বেদনা অনুভব করছি।
 
নিহতের ভাগ্নে ওয়ালিদ হোসেন রুবেল বাংলানিউজকে বলেন, ‘দুই গৃহকর্মী রেশমা, স্বপ্না ছাড়াও আরেকজন রয়েছেন। আমাদের ধারণা তারাই আমার মামীকে হত্যা করেছে। আলমারি থেকে মূল্যবান জিনিসপত্র ও ব্যবহৃত মোবাইল নিয়ে গেছে। স্বপ্নার বাড়ি ফরিদপুরের বোয়ালমারী ও রেশমার বাড়ি কিশোরগঞ্জ’।
 
রেশমা ও স্বপ্না প্রায় মাসখানেক ধরে কাজ করছিলো এ বাসায়। ঘটনার পর যে ব্যক্তি গৃহকর্মী সরবরাহ করেছিলেন তাকেও জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট সূত্র।

সুকন্যা টাওয়ারের প্রবেশদ্বারে দারোয়ান রয়েছেন, রয়েছে সিসিটিভি। ঘটনার সময় সিসিটিভি সচল ছিলো বলে জানিয়েছে দারোয়ান নুরু।
 
ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) রমনা বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) মারুফ হোসেন সরদার বাংলানিউজকে জানান, মাহফুজা চৌধুরীর বাসার গৃহকর্মী পলাতক রয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে তাকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হয়েছে।
 
মাহফুজা চৌধুরী পারভীন ২০০৯ থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত ইডেন কলেজের অধ্যক্ষ ছিলেন। সুকন্যা টাওয়ারের ১৫ ও ১৬তলায় দু’টি ফ্ল্যাটে (ডুপ্লেক্স) বহুদিন ধরে তারা থাকছেন। ওপরের অংশে তারা থাকেন। নিচতলায় রান্নাঘর, গৃহকর্মীদের আবাস। তাদের দুই ছেলের একজন চিকিৎসক, আরেকজন ব্যাংকে চাকরি করেন বলে জানান নিহত মাহফুজার স্বজনরা।
 
ঘটনাস্থলে উপস্থিত পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা বাংলানিউজকে বলেন, যা দেখছি তাতে তাৎক্ষণিক মন্তব্য করা ঠিক হবে না। তবে সব আলামত মাথায় রেখেই তদন্ত চলছে। গৃহকর্মীরা আটক হলে পুরোটা জানা যাবে। প্রতিবেশী এবং ওই ভবনে বসবাসকারীদের সঙ্গে কথা বলে কিছু তথ্য পেয়েছি। তদন্তের স্বার্থে এখনই সেগুলো বলতে পারবো না।
 
নিহত নারীর স্বামী বাদী হয়ে নিউমার্কেট থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। নিউমার্কেট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আতিকুর রহমান জানান, মামলায় বাসার পলাতক দুই গৃহকর্মীকে আসামি করা হয়েছে।
 
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের রমনা বিভাগের উপ-কমিশনার মারুফ হোসেন সরদার বাংলানিউজকে বলেন, সুকন্যা টাওয়ারে নিজের ফ্ল্যাট থেকে মাহফুজার মরদেহ উদ্ধারের পর থেকে দুই গৃহকর্মী রেশমা ও স্বপ্না পলাতক। তাদের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে। রুনু নামে অন্য আরেকজন গৃহকর্মী ছিলেন, তার বিরুদ্ধে মামলা হয়নি। রেশমা ও স্বপ্নাকে গ্রেফতারে অভিযান চলছে।

বাংলাদেশ সময়: ১৬৫৫ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১১, ২০১৯
ডিএসএস/জেডএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।