ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

হাওর কাণ্ডে ৩৪ জনকে অব্যাহতি দিয়ে দুদকের চার্জশিট

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০২২৪ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১১, ২০১৯
হাওর কাণ্ডে ৩৪ জনকে অব্যাহতি দিয়ে দুদকের চার্জশিট বাঁধ ভেঙে তলিয়ে যায় হাওর, ছবি: বাংলানিউজ সংগৃহীত

ঢাকা: হাওরে বাঁধ নির্মাণে দুর্নীতির কারণে ভয়াবহ সংকটে পড়েছিল দেশ। আগাম পাহাড়ি ঢল ও বানের পানিতে ভেসে গিয়েছিল সিলেট, সুনামগঞ্জ, মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, নেত্রকোনা ও ময়মনসিংহের হাজার হাজার হেক্টর জমির বোরো ধান। এই সংকট কাটাতে লাখ লাখ টন চাল আমদানি করতে হয় দেশকে। চালের দর বেড়ে যায় হু হু করে। বাজার নিয়ন্ত্রণে সরকার চাল আমদানিতে তুলে নেয় আমদানি কর। তবু দুই বছর ভোগান্তি কম হয়নি মানুষের।

অথচ, হাওরের এ বাঁধ নির্মাণে দুর্নীতি, অনিয়ম ও কর্তব্যে অবহেলার অভিযোগে দুদকের করা মামলায় ৩৪ জনকে বাদ দিয়ে বাকি ২৭ জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট অনুমোদন করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন। এছাড়া নতুন করে এ চার্জশিটে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে ছয়জনকে।

রোববার (১০ ফেব্রুয়ারি) কমিশন থেকে ৩৩ জনের বিরুদ্ধে চার্জশিটটি অনুমোদন দেওয়া হয় বলে দুদকের জনসংযোগ কর্মকর্তা প্রণব কুমার ভট্টাচার্য্য বাংলানিউজকে নিশ্চত করেছেন।

চার্জশিট থেকে বাদ যাওয়া অন্যতম কয়েক আসামি হলেন- পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সিলেট অঞ্চলের সাবেক অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী আব্দুল হাই (পিএলআর), সাবেক তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী নুরুল ইসলাম (বর্তমানে পূর্বাঞ্চলের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী), স্থানীয় যুবলীগ নেতা ও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স ইব্রাহিম ট্রেডার্স অ্যান্ড শামিম আহসানের মালিক বাচ্চু মিয়া।

২০১৭ সালের ২ জুলাই হাওরে ফসল রক্ষা বাঁধ নির্মাণে দুর্নীতির অভিযোগে পাউবোর ১৫ কর্মকর্তা এবং ৪৬ ঠিকাদার ও প্রতিষ্ঠানসহ ৬১ জনকে আসামি করে মামলা দায়ের করে দুদক। প্রতিষ্ঠানটির সহকারী পরিচালক ফারুক আহমেদ বাদী হয়ে সুনামগঞ্জ সদর মডেল থানায় এ মামলা দায়ের করেন।

দীর্ঘ তদন্ত শেষে এজাহারভুক্ত ৬১ আসামির মধ্যে ৩৪ জনকে বাদ দিয়ে নতুন ছয়জনকে অন্তর্ভুক্ত করে কমিশনে চার্জশিট জমা দেন তদন্ত কর্মকর্তা ফারুক আহমেদ।

এ নিয়ে দুদক বলছে, আসামিরা দেওয়ানির সঙ্গে ফৌজদারি অপরাধ করেছেন বলে তদন্তে এসেছে। দেখা গেছে, ১৯ ঠিকাদার ও পাউবোর ১৪ কর্মকর্তা পরস্পর যোগসাজশে প্রতিবছর বন্যা আসার সময় ও আশঙ্কা সম্পর্কে অবহিত থাকা সত্ত্বেও ক্ষমতার অপব্যবহার করে সরকারি আট কোটি ১৪ লাখ টাকা আত্মসাৎ করেন। তাদের অর্থ আত্মসাৎ ও অবহেলার কারণেই হাওর অঞ্চলে ভয়াবহ বন্যায় কৃষক ও জনসাধারণের আর্থিক ক্ষতি হয়েছে।

ঠিকাদারসহ চার্জশিটে অন্তর্ভুক্ত ৩৩ আসামির মধ্যে ২৭ জন হলেন- পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী (অতিরিক্ত মহাপরিচালকের দফতর) আফছার উদ্দীন, সহকারী প্রকৌশলী (বি-বাড়িয়া) খলিলুর রহমান, উপ সহকারী প্রকৌশলী (ঢাকা) শহিদুল্লা, উপ-সহকারী প্রকৌশলী (নেত্রকোনা) ইব্রাহিম খলিল উল্লাহ খান, উপ সহকারী প্রকৌশলী (কক্সবাজার) খন্দকার আলী রেজা, উপ সহকারী প্রকৌশলী (ঢাকা) শাহ আলম, উপ সহকারী প্রকৌশলী (সাতক্ষীরা) মোহাম্মদ মাহমুদুল করিম, উপ সহকারী প্রকৌশলী (ঢাকা) মোছাদ্দেক ও উপ-সহকারী প্রকৌশলী (ঝালকাঠি) সজিব পাল। ঠিকাদাররা হলেন- আফজালুর রহমান, পার্থ সারথি পুরকায়স্থ, শেখ মিজানুর রহমান, আবুল মহসীন মাহবুব, নিয়াজ আহমেদ খান, মিলন কান্তি দে, খান ওয়াহিদ রনি, সোয়েব আহমেদ, ইউনুস, আব্দুল কাউয়ুম, আতিকুর রহমান, গোলাম সরোয়ার, নুরুল হক, শাহরিন হক মালিক, মোকসুদ আহমেদ, সাইদুল হক, কাজি হাসিনা আফরোজ ও শেখ আশরাফ উদ্দিন। বাঁধ ভেঙে তলিয়ে যায় হাওর, ছবি: বাংলানিউজ সংগৃহীতএছাড়া তদন্তে চার্জশিটে আন্তর্ভুক্ত নতুন ছয়জন হলেন- পাউবো সিলেট সার্কেলের সহকারী প্রকৌশলী লিংকন সরকার, উপ বিভাগীয় প্রকৌশলী (বি-বাড়িয়া)
রঞ্চন কুমার দাস, সহকারী প্রকৌশলী (সুনামগঞ্জ) অনিক সাহা, উপ সহকারী প্রকৌশলী ইমরান হোসেন, নিহার রঞ্চন দাস ও ঠিকাদার মোহাম্মদ ইউনুস অ্যান্ড ব্রাদার্সের পরিচালক (কন্সট্রাকশন) শরিফুল ইসলাম।

আর চার্জশিট থেকে অব্যাহতি পাওয়া ৩৪ জন হলেন- পাউবোর তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী নূরুল ইসলাম সরকার, সাবেক অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী আব্দুল হাই, উপ বিভাগীয় প্রকৌশলী দিপক রঞ্জন দাস, উপ সহকারী প্রকৌশলী শাখা কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম, বরকত উল্লাহ ভূঁইয়া, জাহাঙ্গীর হোসেন, ঠিকাদার খন্দকার শাহিন আহমেদ, জিল্লুর রহমান, সজিব রঞ্জন দাস, এমএ হান্নান, খাইরুল হুদা চপল, কামাল হোসেন, কাজি নাছিমুদ্দিন, খন্দকার আলী হায়দার, আকবর আলী, রবিউল আলম, আবুল হোসেন, শিবব্রত বসু, মোজাম্মেল হক মুন, বাচ্চু মিয়া, বিপ্রেশ তালুকদার বাপ্পি, জামিল ইকবাল, চিন্ময় কান্তি দাস, খাইরুজ্জামান, মফিজুল হক, মোখলেছুর রহমান, রেনু মিয়া, শামসুর রহমান, আব্দুল মান্নান, মাহতাব চৌধুরী, লুৎফুল করিম, কেফায়েতুল্লা, হুমায়ন কবির ও ইকবাল মাহমুদ।

এদিকে, মামলা দায়েরের দিনই (২০১৭ সালের ২ জুলাই) আসামির মধ্যে সুনামগঞ্জ পাউবোর বরখাস্ত হওয়া নির্বাহী প্রকৌশলী আফছার উদ্দীন ও বাচ্চু মিয়াকে গ্রেফতার করছিলেন তদন্তকারীরা।

হাওরের এই কাণ্ডে ২০১৭ সালের ২০ এপ্রিল দুদক পরিচালক বেলাল হোসেনের নেতৃত্বে একটি টিম কাজ শুরু করে।

টিমটির সদস্যরা হলেন- উপ পরিচালক আবদুর রহিম, সহকারী পরিচালক সেলিনা আক্তার মনি, সহকারী পরিচালক ফারুক আহমেদ এবং উপ সহকারী পরিচালক নেয়ামুল কাজী।

বাংলাদেশ সময়: ২১০০ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১০, ২০১৯
আরএম/টিএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।