ঢাকা, শুক্রবার, ৩ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ১৭ মে ২০২৪, ০৮ জিলকদ ১৪৪৫

জাতীয়

নানা আয়োজনে ফাদার মারিনো রিগনের জন্মদিন

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯৪৮ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ৫, ২০১৯
নানা আয়োজনে ফাদার মারিনো রিগনের জন্মদিন

বাগেরহাট: ‘মুক্তিযুদ্ধ মৈত্রী সম্মাননা’প্রাপ্ত ও বাংলাদেশের নাগরিকত্ব অর্জনকারী ইতালির খ্রিস্ট ধর্মযাজক ফাদার মারিনো রিগনের ৯৫তম জন্মবার্ষিকী বিভিন্ন আয়োজনে পালিত হচ্ছে।

এ উপলক্ষে মঙ্গলবার (৫ ফেব্রুয়ারি) সকালে বাগেরহাটের মোংলা উপজেলার শেহলাবুনিয়ার ক্যাথলিক গির্জা প্রাঙ্গণে রিগনের সমাধিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে একটি শোভাযাত্রা বের হয়। শোভাযাত্রাটি শেহলাবুনিয়া-বটতলা এলাকা প্রদক্ষিণ করে মোংলা সরকারি কলেজে গিয়ে শেষ হয়।

পরে মোংলা সরকারি কলেজ, সেন্ট পলস উচ্চ বিদ্যালয় ও উপজেলা সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের আয়োজনে মোংলা সরকারি কলেজ চত্বরে এক স্মরণসভা অনুষ্ঠিত হয়। স্মরণসভায় প্রধান অতিথি হিসেবে ছিলেন খুলনা সিটি করপোরেশনের (কেসিসি) মেয়র তালুকদার আব্দুলখালেক।

মোংলা সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ গোলাম সরোয়ারের সভাপতিত্বে স্মরণসভায় আরও উপস্থিত ছিলেন- উপজেলা চেয়ারম্যান আবু তাহের হাওলাদার, উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. রবিউল ইসলাম, থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. ইকবাল বাহার চৌধুরী, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের নেতা নূর আলম শেখ, উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সুনীল কুমার বিশ্বাসসহ বিভিন্ন সামাজিক এবং সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতারা।

মারিনো রিগন ১৯২৫ সালের ৫ ফ্রেব্রুয়ারি ইতালির ভেনিসের অদূরে ভিন্নাভেরলা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। খ্রিস্ট ধর্মযাজক হিসেবে তিনি ১৯৫৩ সালে বাংলাদেশে আসেন। বাংলাদেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে ঘুরে ঘুরে শেষে তিনি মোংলার শেলাবুনিয়া গ্রামে একটি চার্চ ও একটি স্কুল প্রতিষ্ঠা করেন এবং ওই গ্রামেই তার স্থায়ী আবাস গড়ে তোলেন।

বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের প্রতি ছিল তার অকুণ্ঠ সমর্থন। যুদ্ধ চলাকালে যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধাদের চিকিৎসাসেবা দিতে নিজের প্রতিষ্ঠিত চার্চে গোপনে একটি চিকিৎসা ক্যাম্প স্থাপন করেছিলেন তিনি। তার এই ক্যাম্পে চিকিৎসাসেবা নিয়ে অনেক মুক্তিযোদ্ধা সুস্থ হয়ে পুনরায় রণাঙ্গনে ফিরে গেছেন। তাদের মধ্যে বিখ্যাত হেমায়েত বাহিনীর প্রধান হেমায়েত উদ্দিন বীর বিক্রমও ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধে ফাদার মারিনো রিগনের অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ বাংলাদেশ সরকার তাকে ২০০৯ সালে সম্মানসূচক নাগরিকত্ব দেয়। এরপর ২০১২ সালে দেয় ‘মুক্তিযুদ্ধ মৈত্রী সম্মাননা’।

বাংলাদেশে বসবাসের পর থেকে তিনি বাংলা ভাষা শিখতে শুরু করেন এবং বাংলা সাহিত্যের প্রতি তার কৌতূহল ও নিবিড় ভালবাসার জন্ম হয়। তিনি রবীন্দ্রনাথের রচনাবলী, লালনের সংগীত ও দর্শনের প্রতি বিশেষভাবে আকৃষ্ট হন। তার মাধ্যমে ইতালিয়ান ভাষায় অনূদিত হয়েছে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘গীতাঞ্জলী’সহ প্রায় ৪০টি কাব্য, জসীমউদ্দীনের ‘নক্সী কাঁথার মাঠ’ ও অন্যান্য কাব্যগ্রন্থ, লালনের গানসহ অসংখ্য সাহিত্যকর্ম।

সব থেকে আশ্চর্যের বিষয় হলো, মোংলাতে থাকা অবস্থায় ফাদার রিগন যখন খুব অসুস্থ হয়ে পড়েন তখন তার পরিবারের লোকজন তাকে ইতালিতে নিয়ে যেতে আসেন। তখন রিগন মারা গেলে তার মরদেহ মোংলাতে সমাহিত করার শর্তে ইতালিতে যান। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ২০১৭ সালে ২০ অক্টোবর মারা যান ফাদার রিগন।  

মৃত্যুর একবছর পর বাংলাদেশ সরকার ফাদার রিগনের শেষ ইচ্ছের প্রতি সম্মান দেখিয়ে ২০১৮ সালের ২২ অক্টোবর তার দেহাবশেষ বাংলাদেশের মাটিতে তারই স্থাপিত শেলাবুনিয়া চার্চের পাশে সমাহিত করার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়।

বাংলাদেশ  সময়: ১৪৪৮ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০৫, ২০১৯
জিপি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।