ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

মশার উপদ্রব থেকে নিস্তার নেই মেয়রের ওয়ার্ডেও!

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১১৫ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৫, ২০১৯
মশার উপদ্রব থেকে নিস্তার নেই মেয়রের ওয়ার্ডেও! ময়লা-আবর্জনায় পূর্ণ খানাখন্দ আর ড্রেনে বংশ বিস্তার করছে মশা | ছবি: জিএম মুজিবুর

ঢাকা: রাজধানীর উত্তর অংশের বাসিন্দাদের মশার উপদ্রব থেকে রক্ষা করার দায়িত্ব সরকারি যে সংস্থাটির সেই ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের (ডিএনসিসি) ভারপ্রাপ্ত মেয়রের নিজ ওয়ার্ডেই মশার কাছে জিম্মি বাসিন্দারা। অভিযোগ আছে, প্রধান সড়ক লাগোয়া এবং গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা ছাড়া অন্য কোথাও মশার ওষুধ খুব একটা দেওয়া হয় না। ফলে মশার উপদ্রবে অতিষ্ট এ ওয়ার্ডের কয়েক হাজার বাসিন্দা।

প্রথমে ডিএনসিসির নির্বাচিত মেয়র আনিসুল হক এবং পরবর্তীতে প্যানেল মেয়র-১ মো. ওসমান গণির মৃত্যুর পর কর্পোরেশনের ভারপ্রাপ্ত মেয়র হিসেব দায়িত্ব পান প্যানেল মেয়র-২ এবং ডিএনসিসির ৪নং ওয়ার্ডের ওয়ার্ড কাউন্সিলর মো. জামাল মোস্তফা। রাজধানীতে সাধারণত শীতকালে যখন মশা ও পোকামাকড়ের প্রকোপ বেড়ে যায় তেমন একটি সময়ে দায়িত্বে আসা এই মেয়রের নিজ এলাকাতেই মশার প্রকোপ চরমে।

মিরপুর ১৩ ও ১৪ নম্বর সেকশনের বাইশটেকি এলাকা নিয়ে গঠিত ৪ নম্বর ওয়ার্ড এলাকা ঘুরে দেখা যায়, বিভিন্ন সড়ক সংস্কার এবং সেবা প্রদানকারী সংস্থাগুলোর কাজের জন্য বিভিন্ন জায়গায় জড়ো করে রাখা হয়েছে বিভিন্ন ধরনের আবর্জনা। আবার সড়ক মেরামতের কারণে সড়কের পাশে থাকা ড্রেনের নালাগুলো হয়ে আছে উন্মুক্ত। এছাড়াও সড়কে থাকা ময়লার ডাস্টবিন এবং ঘন গাছপালাপূর্ণ জায়গার কারণে বাড়ছে মশার উপদ্রব।

স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, এসব বিষয়ে উদাসীন সিটি কর্পোরেশন এবং ওয়ার্ডের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। আর এতে মশাবাহিত রোগে সবচেয়ে ঝুঁকিতে আছেন নিম্ন আয়ের মানুষেরা।  

মিরপুর ১৩ নম্বরের স্বর্ণালি গার্ডেন ভবনের সামনে থাকা একটি চায়ের দোকানে কথা হয় এলাকার বেশ কয়েকজন রিকশাচালকের সঙ্গে। এ সময় মোহাম্মদ মোতালেব নামে এক রিকশাচালক বাংলানিউজকে বলেন, আমাদের বাড়িঘর কেমন তা তো জানেন, আমরা যা আয় করি তা দিয়ে রোজ রোজ মশার কয়েল কিনতে পারি না। তাই সিটি কর্পোরেশনের লোকজন মশার ওষুধ দিলে কিছু সময় ভালো থাকি।  
ময়লা-আবর্জনায় পূর্ণ খানাখন্দ আর ড্রেনে বংশ বিস্তার করছে মশা | ছবি: জিএম মুজিবুরমশার ওষুধ খুব একটা দেওয়া হয় না বলে অভিযোগ করেন আবদুর রহিম নামে আরেক ব্যক্তি। তিনি বলেন, সিটি কর্পোরেশন ওষুধ দেয় না। এই নতুন বছরে এখনও একবারও এই দিকে ওষুধ দিতে দেখি নাই। হুন্ডায় করে দুই একবার মেশিন দিয়ে ওষুধ দিয়ে গেছে এই স্বর্ণালি গার্ডেনের ভেতরে। এখানে বড় বড় স্যারেরা থাকে। তাই দিয়ে যায়। মনে হয়, অ্যাপার্টমেন্টের মশা বের করে আমাদের দিকে দেয়।  

মশার কামড়ে দাগ বসে যাওয়া পা দেখিয়ে লিয়াকত আলী নামের আরেক ব্যক্তি অনেকটা ক্ষোভ নিয়েই বলেন, মন্ত্রী-এমপি-মেয়রদের বাসায় ওষুধ দেওয়া হোক। সেখানে দিলেই হবে। আমাদের জন্য দেওয়া লাগবে না!

প্রায় একই অবস্থা এলাকার মধ্যবিত্ত বাসিন্দাদেরও। এ-ব্লকের একটি বাসার গৃহিণী শামসুন নাহার বাংলানিউজকে বলেন, মশার অবস্থা এতো ভয়াবহ যে, দিনের বেলায়ও মশারি দেওয়া থাকে বিছানায়। আর রাতে মশারি থাকা অবস্থায়ও সারা বাড়িতে ধূপ ও কয়েল জ্বালানো থাকে। সামনে ছেলের এসএসসি পরীক্ষা। মশার কামড়ে যেন কোনো রোগ-বালাই না হয় সেদিকে খুব খেয়াল রাখতে হচ্ছে।

সাধারণ মানুষের ভোগান্তি ও রোগে আক্রান্তের ঝুঁকির মাঝেও মশার উপদ্রব আগের যেকোনো সময়ের থেকে কম বলে দাবি করেছেন ডিএনসিসির ভারপ্রাপ্ত মেয়র ও ৪ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মো. জামাল মোস্তফা।  

বাংলানিউজকে তিনি বলেন, আমরা পুরো উত্তর অংশেই প্রচুর পরিমাণে ওষুধ দিচ্ছি। এখন মশা আগের থেকে অনেক কম। আর আমাদের এখনকার যে ওষুধগুলো দেওয়া হচ্ছে সেগুলো খুব ইফেক্টিভ। মশা মরে যায়।

৪ নম্বর ওয়ার্ডের মশা নিয়ন্ত্রণের পরিস্থিতি নিয়ে জানতে চাইলে জামাল মোস্তফা বলেন, আমাদের যে মেশিনগুলো আছে সেগুলো তো একসাথে সব জায়গায় দেওয়া যায় না। তার মাঝেও প্রতিদিনই ওষুধ দিচ্ছি। রুটিন ওয়ার্ক চলছে। আগে দেখেন, কোথাও হাঁটা যেতো না, দোকানে বসা যেতো না। এখন তো সেরকম নাই। মশা অনেক কমে গেছে। আর যা কিছু একটু আছে সেটাও থাকবে না।

বাংলাদেশ সময়: ১৬০৭ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৫, ২০১৯
এসএইচএস/এমজেএফ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।