ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

‘সমাজকে দুর্নীতি-মাদকের কালো ব্যাধি হতে মুক্ত করবো’

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭৪৮ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২০, ২০১৯
‘সমাজকে দুর্নীতি-মাদকের কালো ব্যাধি হতে মুক্ত করবো’

ঢাকা: দুর্নীতি, মাদক ও সন্ত্রাসের মতো ‘কালো ব্যাধি’মুক্ত সমাজ গড়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

রোববার (২০ জানুয়ারি) সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় পরিদর্শনে এসে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের এজন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশনা দেন প্রধানমন্ত্রী।
 
দুর্নীতি, মাদক ও সন্ত্রাসকে সমাজের ‘কালো ব্যাধি’ হিসেবে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা সবসময় এটাই চাই।

আমরা এ সমস্ত ‘কালো ব্যাধি’ থেকে সমাজকে মুক্ত করা। তার জন্য যা যা করা সেটা আমাদের করতে হবে।
 
তিনি বলেন, একটা দেশকে উন্নত করতে চাইলে এ সমস্ত মাদক, সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ এবং দুর্নীতির হাত থেকে দেশকে মুক্ত করতে হবে। এক্ষেত্রে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে বিশেষ দৃষ্টি দিতে হবে।
 
দুর্নীতি প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের সমাজে যে সমস্যাগুলো আছে, তার মধ্যে দুর্নীতি কালো ব্যাধির মতো ছড়িয়ে আছে। দুর্নীতিই একটা কালো ব্যাধি, এটা সমাজের অগ্রগতি যথেষ্ট ব্যাহত করে। সেক্ষেত্রে সবাইকে সচেতন হতে হবে। দুর্নীতি বন্ধ করতে হবে।
 
এ সময় তিনি সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ব্যাপকহারে বেতনসহ অন্যান্য সুযোগ সুবিধার বাড়ানোর কথা তুলে ধরেন।
 
সন্ত্রাস-মাদকের বিরুদ্ধে অভিযান অব্যাহত থাকবে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী মাদক কারবারীদের খুঁজে বের করতে এবং মাদক নির্মূলে বহুমুখী পদক্ষেপ নেওয়া নির্দেশ দেন। সরকারপ্রধান বলেন, মাদকের বিরুদ্ধে অভিযান অব্যাহত রাখার পাশাপাশি মাদকমুক্ত করা, মাদক কারা আনে, তৈরি করে, পাচারকারী, সরবরাহ করে, কারা মাদক সেবন করে বা দেয়- তাদের খুঁজে বের করতে হবে। যারা মাদক সেবন করে শুধু তারাই নয়, যারা মাদক আনে, তৈরি করে, সাপ্লাই দেয় তাদেরকেও ধরতে হবে।
 
সুস্থ জীবনে ফিরতে আগ্রহীদের সুযোগ তৈরি করে দেওয়ার পরামর্শ দিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, যারা সুস্থ হয়ে সমাজে ফিরতে চাইবে তাদের সেই সুযোগ করে দিতে হবে। কোনো পরিবারে মাদকাসক্ত সন্তান থাকলে সেই পরিবারের কী কষ্ট সেটা আমরা উপলব্ধি করতে পারি।
 
নতুন নতুন সরকারি মাদক নিরাময় কেন্দ্র স্থাপনের ওপরও গুরুত্বারোপ করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি মাদকের বিরুদ্ধে সচেতনতা সৃষ্টি এবং প্রতিটি বাহিনীকে মাদকবিরোধী কার্যক্রমে সম্পৃক্ত করার নির্দেশনাও দেন।
 
মাদকের বিরুদ্ধে জনগণকে সম্পৃক্ত করতে পারলে এটি নির্মূল সহজ হবে বলে উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী। এক্ষেত্রে তিনি জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে অভিযানের পাশাপাশি বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার জনগণকে সম্পৃক্ত করার সুফলের কথা তুলে ধরেন।
 
জঙ্গিবাদ নিয়ন্ত্রণে সরকারের সফলতার কথা তুলে ধরেন এবং এজন্য আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে ধন্যবাদ দেন প্রধানমন্ত্রী।
 
অপরাধ ও অপরাধী শনাক্তে প্রযুক্তি ব্যবহারের আরও বেশি দক্ষতা অর্জনের ওপর গুরুত্বারোপ করে সরকারপ্রধান বলেন, যারা অপরাধী তারা হয়তো আরও বেশি ভালো প্রযুক্তি ব্যবহার করে। সেখানে আমাদের যারা অপরাধ নিয়ন্ত্রণ করবে তাদের আরও বেশি উন্নত মানের হওয়া দরকার। যেন সঙ্গে সঙ্গে অপরাধী শনাক্ত করা, গ্রেফতার করা এবং ব্যবস্থা নেওয়া যায়। সেদিক থেকে আমরা অবশ্য যথেষ্ট অগ্রগামী আছি।

তিনি বলেন, ডিজিটাল বাংলাদেশের সুযোগ উভয়পক্ষই পায়। এটা হলো বাস্তবতা। বিভিন্ন অ্যাপস ব্যবহার করে অপরাধীরা যেমন সুযোগ নেয়, যারা নিয়ন্ত্রণ করে তাদেরও ব্যবস্থা নেওয়ার সুযোগ আছে। সারাবিশ্বে প্রতিনিয়ত প্রযুক্তি উন্নত হচ্ছে, সেইসঙ্গে তাল মিলিয়ে আমাদের চলতে হবে। এই মন্ত্রণালয় খুব বেশি গুরুত্বপূর্ণ বলে আমি মনে করি।

কারাগারকে সংশোধনাগার হিসেবে ব্যবহারের নির্দেশনা দিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, কারাবন্দিদের প্রশিক্ষণ, তাদের দিয়ে কিছু উৎপাদন করানো এবং সেগুলো বাজারজাত করে লভ্যাংশটা যারা কাজ করবে তাদের জন্য রেখে দেওয়া, বা তাদের পরিবার নিয়ে যাবে, অথবা যখন মুক্তি পাবে, সেই টাকা দিয়ে সে যেন একটা কর্মসংস্থান করতে পারে- সেই ব্যবস্থাটা আমরা করতে চাই।
 
অপরাধীদের অপরাধে সম্পৃক্ত হওয়ার কারণ খুঁজে বের করার পরামর্শ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, অপরাধীরা অপরাধে সম্পৃক্ত হয় কেন সেটা যেমন খুঁজে বের করা প্রয়োজন, অপরাধীদের বিরুদ্ধে শুধু অ্যাকশন নিলেই তারা ভালো হয়ে যাবে তা নয়। বরং তাদের সুস্থ জীবনে ফিরিয়ে আনতে পারা- এটাও কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ।
 
ভবিষ্যতে উন্নত সমৃদ্ধ দেশ গড়ার পরিকল্পনা ও কার্যক্রমের কথা তুলে ধরে টানা তিনবার এবং সব মিলিয়ে বাংলাদেশের ইতিহাসে প্রথম চারবারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, কী কী করেছি তা বলার অপেক্ষা রাখে না। বরং ভবিষ্যতে মানুষকে আরও বেশি সেবার দেওয়ার জন্য কী করণীয়, সেই বিষয় নিয়ে আরও বেশি আলোচনা করতে চাই।
 
তিনি বলেন, উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছি সেটা ধরে রেখে সামনে এগিয়ে যেতে হবে। উন্নয়নশীল দেশ থেকে উন্নত দেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে হবে। উন্নত দেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে গেলে খুব স্বাভাবিক মানুষের জীবনের নিরাপত্তা বিধান করা, উন্নয়ন প্রকল্পগুলো যথাযথভাবে বাস্তবায়ন করা। মানুষের জানমালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, একটা শান্তিপূর্ণ পরিবেশ ছাড়া উন্নয়নের পথে এগিয়ে যাওয়া সম্ভব নয়।
 
আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে আরও বেশি জনগণের আস্থাভাজন হওয়ার তাগিদ দিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, যারা জনগণের নিরাপত্তা দেবে তাদের জনগণের আস্থা বিশ্বাস অর্জন করতে হবে। আস্থা বিশ্বাসটা তখনই অর্জন করতে পারবে, যখন তারা সঠিক সেবাটা জনগণের কাছে পৌঁছে দিতে পারবে।
 
সামরিক স্বৈরশাসকরা বাংলাদেশে সন্ত্রাস-দুর্নীতি-মাদকের গোড়াপত্তন করেছে অভিযোগ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, যখনই কোনো দেশে মিলিটারি ডিকটেটর আসে, তারা কিন্তু সমাজকে ধ্বংস করে দেয়। দুর্নীতিটাকে তারা নীতি হিসেবে নেয়। মাদককে ঘরে ঘরে ছড়িয়ে দেয়।
 
জনবল সংকটে কার্যক্রম ব্যাহত হওয়া প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্রজেক্টগুলো যখন তৈরি করা হয়, তখনই কতো জনবল রাজস্ব খাতে প্রয়োজন সঙ্গে সঙ্গে সেটা উল্লেখ করে দেওয়া দরকার। যেন আমরা প্রজেক্ট পাশ করার সঙ্গে সঙ্গে জনবল নিয়োগের ব্যবস্থা নিতে পারি।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন, জননিরাপত্তা বিভাগের সচিব মোস্তাফা কামাল উদ্দীন, সুরক্ষা সেবা বিভাগের সচিব ফরিদ উদ্দিন আহম্মদ চৌধুরীসহ সংশ্লিষ্ট বাহিনী প্রধানগণ উপস্থিত ছিলেন।
 
বাংলাদেশ সময়: ১২৪২ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২০, ২০১৯
এমইউএম/এইচএ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।