ঢাকা, রবিবার, ২২ বৈশাখ ১৪৩১, ০৫ মে ২০২৪, ২৫ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

রূপসা রেলসেতুর ৩০ শতাংশ কাজ সমাপ্ত

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪৪৭ ঘণ্টা, জানুয়ারি ৫, ২০১৯
রূপসা রেলসেতুর ৩০ শতাংশ কাজ সমাপ্ত রূপসা রেলসেতুর কাজ পরিকল্পনা অনুযায়ী এগিয়ে চলছে

খুলনা: ধাপে ধাপে এগিয়ে চলছে স্বপ্নের বিনির্মাণ। নদী শাসন ও পাইলিংয়ের পর উঠতে শুরু করছে পিলার। আর নির্মাণস্থলে স্প্যান বসানোর পর আকৃতি পাওয়ায় বোঝা যাচ্ছে কেমন হবে, খুলনা-মোংলা রেল প্রকল্পের রূপসা রেলসেতুর অবয়ব।

সেতুর পশ্চিমপাড় বটিয়াঘাটা উপজেলার পুটিমারী ও পূর্বপাড় খাড়াবাদ এলাকায় দিন-রাত বিরামহীন চলছে কর্মযজ্ঞ। সেতু এখন স্বপ্নের খোলস থেকে বেরিয়ে রূপ নিয়েছে দৃশ্যমান বাস্তবতায়।

কর্মী, শ্রমিক ও প্রকৌশলীদের যন্ত্রের টুং টাং শব্দে মুখর পুরো এলাকা।

দিন যতই যাচ্ছে রূপসার বুকে একের পর এক খুঁটি মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে শুরু করেছে। নদীর প্রবল স্রোত উপেক্ষা করে উভয় প্রান্তে চলছে নির্মাণযজ্ঞ। এখন কেউ এসে নদীর তীরে দাঁড়ালেই দেখতে পাবেন সেতুর অবয়ব। তাতে ধাপে ধাপে দৃশ্যমান হয়ে উঠছে রূপসা রেলসেতু।

পাইল স্থাপনের জন্য ব্যবহার করা হচ্ছে ভারী সব যন্ত্রপাতি। পুরোদমে পাইল স্থাপন ও পিলার তৈরির কাজ নিয়ে কর্মযজ্ঞ চলছে বহুল প্রত্যাশিত রূপসা রেলসেতু নির্মাণ। প্রকল্পের কাজ শেষ হলে মোংলা বন্দরের সঙ্গে সারাদেশের যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন হবে। নির্মাণ কাজ শেষে ২০২০ সালের মধ্যে খুলনা ও মোংলা বন্দরের সঙ্গে যুক্ত হবে সারাদেশের রেল যোগাযোগ।  

প্রকল্প সূত্রে জানা যায়, নির্দিষ্ট কর্মপরিকল্পনা অনুযায়ী এগিয়ে চলছে সুপার স্ট্রাকচারের এ রেলসেতুর নির্মাণ কাজ। তাই নির্ধারিত সময়ের মধ্যে প্রকল্পের কাজ শেষ হবে বলে আশা প্রকাশ করেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।

জানা যায়, ২০১০ সালের ২১ ডিসেম্বর জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক) খুলনা-মোংলা রেললাইন নির্মাণ প্রকল্পটি অনুমোদন করে। পরে ২০১২ সালের নভেম্বর প্রকল্পের পরামর্শক হিসেবে নিয়োগ পায় ভারতের সিইজি নিপ্পন কোয়ি জেভি প্রতিষ্ঠান। ২০১৭ সালের ১৫ অক্টোবর রূপসা রেলসেতুর পাইলিংয়ের কাজের উদ্বোধন করেন রেল মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. তোফাজ্জেল হোসেন।

প্রকল্প এলাকায় চলছে ব্যাপক কর্মযজ্ঞখুলনা-মোংলা রেলপথ প্রকল্পটির কাজ ৩টি অংশে বিভক্ত করা হয়েছে। একটি রেলসেতু, অপরটি রেললাইন এবং অন্যটি টেলিকমিউনিকেশন ও সিগন্যালিং। খুলনার ফুলতলা থেকে মোংলা পর্যন্ত ৮টি স্টেশন হচ্ছে। স্টেশনগুলো হচ্ছে ফুলতলা, আড়ংঘাটা, মোহাম্মদ নগর, কাটাখালী, চুলকাঠি, ভাগা, দিগরাজ ও মোংলা।  

খুলনা-মোংলা রেল প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে ৩ হাজার ৮০১ কোটি ৬১ লাখ টাকা। এর মধ্যে রেললাইনের জন্য ১ হাজার ১৪৯ কোটি ৮৯ লাখ এবং সেতুর জন্য ১ হাজার ৭৬ কোটি ৪৫ লাখ টাকা। অবশিষ্ট অর্থ জমি অধিগ্রহণে ব্যয় করা হয়েছে। বাংলাদেশ সরকারের নিজস্ব অর্থায়ন (জিওবি) ও ভারত সরকারের আর্থিক সহায়তায় এই রেলপথটি নির্মাণ করা হচ্ছে। ভারতীয় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান লারসেন অ্যান্ড টাব্র রূপসা নদীর ওপর মূল রেলসেতুর কাজ সম্পন্ন করছে।  

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, খুলনা-মোংলা রেলপথ নির্মাণ প্রকল্পটি প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুত। এটি সম্পন্ন হলে মোংলা বন্দরে আরও গতির সঞ্চার হবে। সেতুটি মোংলা বন্দরের সঙ্গে খুলনা তথা পুরো বাংলাদেশের রেল সংযোগ তৈরি করবে। কম খরচে ভারত, নেপাল ও ভুটানে মালামাল পরিবহন সহজ হবে। বিভিন্ন স্থান থেকে দেশি-বিদেশি পর্যটকরা সহজে ম্যানগ্রোভ ফরেস্ট সুন্দরবন ভ্রমণ করতে পারবেন।

রূপসা রেলসেতুর ইন্ডাস্ট্রিয়াল রিলেশন ম্যানেজার সুব্রত জানা শনিবার (০৫ জানুয়ারি) বাংলানিউজকে বলেন, শত শত শ্রমিক আর প্রকৌশলীর অক্লান্ত পরিশ্রমে ধাপে ধাপে এগিয়ে যাচ্ছে সেতুর মূল নির্মাণ কাজ।

তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশে প্রথম সুপার স্ট্রাকচারের রেলসেতু এটি। সিঙ্গেল ব্রডগেজের এ সেতুর দৈর্ঘ্য ৫ কিলোমিটার। ৮৩৬টি পাইলের মধ্যে কাজ শেষ হয়েছে ৬৩৭টির । পিয়ার ক্যাপ ১৩২টির মধ্যে ২১টির কাজ শেষ হয়েছে। ১৪২টি স্প্যানের মধ্যে দু’টি বসানো হয়েছে। ১৩২টি পিলারের মধ্যে ৭টি সম্পন্ন হয়েছে। পিলার ক্যাপ হয়েছে ১৩২টির মধ্যে ৬টি। এর মাধ্যমে সেতুর মোট ৩০ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। আর ২০২০ সালের মার্চ নাগাদ পুরো কাজ শেষ হবে বলে আশা প্রকাশ করেন রেলসেতুর কাজে নিয়োজিত এ কর্মকর্তা।  

বাংলাদেশ সময়: ০৯৪০ ঘণ্টা, জানুয়ারি ০৫, ২০১৯
এমআরএম/জেডএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।