ঢাকা, বুধবার, ১০ বৈশাখ ১৪৩১, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

রাঙামাটি হানাদারমুক্ত হয় ১৭ ডিসেম্বর

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭০০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৭, ২০১৮
রাঙামাটি হানাদারমুক্ত হয় ১৭ ডিসেম্বর মুক্তিযুদ্ধ ক্যাম্প

রাঙামাটি: ১৯৭১ সালে সারাদেশের মতো রাঙামাটিতে যুদ্ধের দামামা বেজেছিলো। সে যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলো পার্বত্যবাসী।

২৭ মার্চ রাঙামাটি স্টেশন ক্লাবের মাঠে মুক্তিযুদ্ধের অস্থায়ী ট্রেনিং ক্যাম্প খোলা হয়। তৎকালীন পার্বত্যঞ্চলের জেলা প্রশাসক হোসেন তৌফিক ইমাম (এইচটিইমাম), অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক আবদুস সামাদ, পুলিশ সুপার বজলুর রহমান এবং মহকুমা প্রশাসক আবদুল আলীসহ স্বাধীনতাকামী মানুষ এগিয়ে আসেন।

 
 
২৯ মার্চ রাঙামাটি থেকে ৬০ জনের একটি দল প্রশিক্ষণের উদ্দেশে ভারতে রওনা হয়।  

মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য রসদ সরবরাহ, যানবাহনের জন্য রাঙামাটি আলম ডকইয়ার্ডে গড়ে উঠেছিল মুক্তিবাহিনীর অস্থায়ী ক্যাম্প। এখানে স্থাপন করা হয় ওয়ারলেস সেন্টার।

রাঙামাটি থেকে ভারতে যাওয়া প্রথম মুক্তিযোদ্ধা দলটি এক সপ্তাহের প্রাথমিক প্রশিক্ষণ শেষে ক্যাপ্টেন আবদুল কাদেরের নেতৃত্বে ৩টি গ্রুপে বিভক্ত হয়ে ১৫ এপ্রিল রাঙামাটি আসে।

কিন্তু স্থানীয়দের বিশ্বাসঘাতকার কারণে প্রথম দলটি রাঙামাটি জেলা প্রশাসকের বাংলো এলাকায় হানাদার বাহিনীর হাতে ধরা পড়ে শহীদ হয়।  

দ্বিতীয় দলটি রাঙামাটি আলম ডকইয়ার্ডে উঠে সেখানে অবস্থান নেয় এবং তৃতীয় দলটি সদর এলাকার বাকছড়িতে অবস্থান নেয় এবং পরদিন হানাদার বাহিনীর ওপর হামলা চালায়।  

৫ মে ১ নম্বর সেক্টরের অধীনে ২৫ সদস্যের পার্বত্য চট্টগ্রাম মুক্তিযোদ্ধা দল গঠন করা হয়। হেমদা রঞ্জন ত্রিপুরাকে কোম্পানি কমান্ডার নিযুক্ত করা হয়। ১ নম্বর সেক্টর হেডকোয়ার্টার ছিলো হরিণা।  

১ নম্বর সেক্টরের অধীনে হরিণা থেকে ৩০ কিলোমিটার দূরবর্তী ভারতের বৈষ্ণবপুরে আগস্ট মাসের শুরুতে সাব-সেক্টর স্থাপন করা হয়।  

মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন ভারতের বিএসএফ ট্রেনিং সেন্টার থেকে ট্রেনিং প্রাপ্তদের একটি দল গ্রুপ কমান্ডার নাজিম উদ্দিনের নেতৃত্বে ৯ ডিসেম্বর কাউখালী উপজেলার বেতবুনিয়া ও বালুখালীতে গেরিলা অপারেশন পরিচালনা করলে গ্রুপ কমান্ডার নাজিম এবং মুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ জাফর শহীদ হন।

মুক্তিযোদ্ধাদের ট্রেনিং সেন্টার১১ ডিসেম্বর মুক্তিযোদ্ধা মাহবুব আলম চৌধুরীর নেতৃত্বে বেতবুনিয়াস্থ চট্টগ্রাম-রাঙামাটি সড়কে অবস্থিত কালভার্টের ওপর অতর্কিতভাবে হানাদার বাহিনীর গাড়িতে গেরিলা আক্রমণ চালালে ঘটনাস্থলে চালকসহ ২জন পাকিস্তানি অফিসারের মৃত্যু হয়।

এদিকে আগস্টের মধ্যভাগে পাইলট মান্নানসহ মুক্তিবাহিনীর একটি দল পাহাড়ি এলাকায় পথ হারিয়ে রাতের অন্ধকারে ফারুয়াস্থ হানাদার বাহিনীর ক্যাম্পে ঢুকে পড়লে কয়েকজন স্থানীয়দের সহায়তায় বাঁচতে পারলেও বাকিরা শহীদ হয়।

১৪ ডিসেম্বর সকাল ১০টায় ফারুয়ার হানাদার বাহিনীর ওপর বাংলাদেশ বিমান বাহিনী আক্রমণ চালায়। সেখানে ৭৫০ জন পাকিস্তানি সেনার অবস্থান ছিল।

অন্যদিকে মিত্র ও মুক্তিবাহিনীরা জৈলানন্দ সিং এবং সুলতান আহমদ কুসুমপুরীর নেতৃত্বে  ৫০০ মুক্তিযোদ্ধা বরকলে অগ্রসর হয়।  

১৫ ডিসেম্বর মিত্র ও মুক্তিবাহিনী ভোরে হানাদার বাহিনীর ওপর আক্রমণ করলে বিকেলে তারা রাঙামাটির উদ্দেশে পালিয়ে যায়। তাদের অনুসারী বাঙালি রাজাকার, আলবদর ও বেলুচ সৈন্যদের দলটি যৌথবাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণ করে।  

এ ব্যাপারে মুক্তিযোদ্ধা কর্নেল মনীষ দেওয়ান জানান, ১৫ ডিসেম্বর সকালে ভারতের দেমাগ্রী থেকে কমান্ডার সুজান সিং উবানের নির্দেশে মেজর সুরীর নেতৃত্বে হেলিকপ্টারে করে রাঙামাটির কুতুকছড়িতে এলে আমাদের হেলিকপ্টারে হানাদার বাহিনী গুলিবর্ষণ করে। পরে হেলিকপ্টারটি আমাদের কুতুকছড়িতে নামিয়ে দিয়ে আরও সৈন্য আনতে চলে যায়।  

সেদিন সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত হানাদার বাহিনীর সঙ্গে আমাদের লড়াই হয়। ১৬ ডিসেম্বর সকালে মেজর সুরী ও আমরা যখন পরিস্থিতি দেখতে বের হই তখন হানাদার বাহিনী আবারো গুলিবর্ষণ করে।  

১৭ ডিসেম্বর সকালে বন্ধু শামসুদ্দীনকে নিয়ে কাউখালীতে গেলে জানতে পারি হানাদার বাহিনী পালিয়ে গেছে। ওইদিন দুপুরে রাঙামাটি শহরে এসে পুরাতন কোর্ট বিল্ডিং এলাকায় আমি স্বাধীন দেশের পতাকা উত্তোলন করি। ১৮ ডিসেম্বর সকালে রাঙামাটিতে শেখ ফজলুল হক মণি, এসএম ইউসুফ, শেখ সেলিম, আমাদের কমান্ডার সুজান সিং ওভান আসেন।

বাংলাদেশ সময়: ১১৫২ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৭, ২০১৮
আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।