ঢাকা, শুক্রবার, ৬ বৈশাখ ১৪৩১, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

একটি প্রয়াণে কাঁদছে সব

মাসুদ আজীম, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৯৫০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৬, ২০১৮
একটি প্রয়াণে কাঁদছে সব প্রয়াত চলচ্চিত্র নির্মাতা আমজাদ হোসেন বাড়ি

রাজধানীর আদাবরে কোলাহলমুক্ত পরিবেশে স্তব্ধ দাঁড়িয়ে চারতলা একটি বাড়ি। রিকশার টুংটাং আওয়াজ, মাঝে মাঝে দুই-একটি গাড়ির হর্ন। কান্না শেষের মানুষের মতো বিষাদগ্রস্ত হয়ে আছে পশু-পাখি-কংক্রিটের দেয়ালসহ পরিবেশের প্রতিটি উপাদান। এ বাড়িতেই থাকতেন দেশবরেণ্য চলচ্চিত্র নির্মাতা ও অভিনেতা আমজাদ হোসেন।

আদাবরের ১২ নম্বর রোডে আমজাদ হোসেনের বাড়ির সামনেই রয়েছে বেশ কয়েকটি চায়ের টঙ দোকান। যেখানে জমপেশ আড্ডা চলে প্রতিদিন।

শনিবার (১৫ ডিসেম্বর) চায়ের দোকানগুলোতে গিয়ে দেখা যায় অনেকটা বিমর্ষভাব।

আমজাদ হোসেনের বাড়ি কোনটা? জানতে চাইলে রফিক হাওলাদার নামে স্থানীয় এক বাড়িওয়ালা হাহাকার করে বলে ওঠেন, ওই গাছওয়ালা বিল্ডিংটাই আমজাদ হোসেনের। তিনি তো বেঁচে নাই, মারা গেছেন! ভালো, নির্ভেজাল মানুষ ছিলেন।

বাড়িতে ঢুকতেই একটি অন্ধকার গ্যারেজ। সেখানে রয়েছে আমজাদ হোসেনের সিলভার রঙের টয়োটা ব্যান্ডের গাড়িটি। পুরনো বাড়িটির বাউন্ডারি গেটে ঝুলছে বড় একটি তালা। দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষা করেও বাড়িতে কাউকে উঠতে নামতে দেখা গেল না। কিছুক্ষণ পর দেখা মিললো বাড়ির দারোয়ান মোহাম্মদ আতাউর রহমানের। বাড়িতে কেউ আছেন কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, বাড়িতে কেউ নাই।

আমজাদ হোসেন সম্পর্কে বাড়ির দারোয়ান বলেন, মানুষের সঙ্গে মিশতে খুব পছন্দ করতেন, কোনো ভেদাভেদ ছিল না। আমার সঙ্গে খুব ভালো ব্যবহার করতেন। হেসে হেসে খবর নিতেন। এখন আর কেউ খবর নেবে না! সবসময় হাশিখুশি থাকতেন। যেদিন অসুস্থ হয়ে পড়েন তার আগের দিন সকালেও হাসিমুখে বেরিয়েছিলেন। বেতন ছাড়া অনেক বোনাসও দিতেন আমাকে।

মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ হওয়ায় গত ২৬ দিন আগে অসুস্থ হয়েছিলেন চলচ্চিত্রকার আমজাদ হোসেন। ব্যাংককের বামরুনগ্রাদ হাসপাতালে টানা ১৬ দিন চিকিৎসাসেবা দেওয়ার পরও বাঁচানো যায়নি আমজাদ হোসেনকে। শুক্রবার (১৪ নভেম্বর) বাংলাদেশ সময় বেলা ২টা ৫৭ মিনিটে তিনি মারা যান। এর আগে দেশে (১৮ নভেম্বর থেকে) তেজগাঁওয়ের ইমপালস হাসপাতালে আইসিইউতে চিকিৎসারত ছিলেন তিনি।  

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০ নভেম্বর গুণী এই চলচ্চিত্র পরিচালকের খোঁজখবর নেন এবং তার চিকিৎসার দায়িত্ব নেওয়ার কথা জানান। আমজাদ হোসেনের উন্নত চিকিৎসার খরচ বাবদ ২০ লাখ টাকা এবং এয়ার অ্যাম্বুলেন্সের ভাড়া বাবদ ২২ লাখ টাকা পরিবারের হাতে তুলে দেন প্রধানমন্ত্রী। ২৭ নভেম্বর মধ্যরাতে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে করে তাকে ব্যাংককে নেওয়া হয় এবং বামরুনগ্রাদ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

চারতলা বাড়িটির দোতলায় স্ত্রী সুরাইয়া আকতারসহ থাকতেন আমজাদ হোসেন। কিংবদন্তি চলচ্চিত্র নির্মাতা, গীতিকার ও চিত্রনাট্যকার, অভিনয়শিল্পী এবং লেখক আমজাদ হোসেন মৃত্যুকালে স্ত্রী, চার ছেলে, এক মেয়েসহ অসংখ্য গুণগ্রাহী রেখে গেছেন। আর প্রতিবেশী হিসেবে এই গুণী ও প্রতিভাবান শিল্পীর সংস্পর্শের কারণে এলাকাবাসীদের মনও যেন ঢুকরে কেঁদে উঠছে। তেমনটাই জানা গেলো তাদের সঙ্গে কথা বলে।

আদাবরের ১২ নম্বর রোডে বেশ কিছু নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দোকান। তার মধ্যে একটি মাংসের দোকান রয়েছে। দোকানটির মাংস বিক্রেতা আফজাল রহমান বাংলানিউজকে বলেন, উনি মাঝে মাঝে আসতেন মাংস কিনতে। খুব ভালো মনের মানুষ ছিলেন। মনে কখনো কোনো অহংকার দেখিনি।

বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী রোজি হাসান এই দেশবরেণ্য শিল্পী সম্পর্কে মন্তব্য করতে গিয়ে বলেন, মানুষ মরণশীল হলেও তার মৃত্যুটা স্বাভাবিকভাবে গ্রহণ করতে আমাদের অনেক কষ্ট হয়। এই মানুষটা মিশে গিয়েছিলেন আমাদের অন্তরে। উনার বাসার সামনে দিয়ে হেঁটে যেতে যেতে তাকিয়ে থাকতাম একবার তার দর্শন পাওয়ার জন্য। সদা হাস্যোজ্জ্বল মানুষটির প্রতিবেশী হিসেবে নিজেকে গর্বিত মনে হতো। আতকে উঠেছিলাম যখন তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন। আমরা আমাদের অনেক বড় একটি রাষ্ট্রীয় সম্পদ হারালাম। এই ক্ষতি ঠিক পুষিয়ে উঠতে পারবো বলে মনে হয় না।

বাংলাদেশ সময়: ০৪৪২ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৬, ২০১৮
এমএএম/এমজেএফ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।