ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

ডিজিটাল যুগেও লন্ড্রিতে কয়লার আয়রন

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩৫৫ ঘণ্টা, নভেম্বর ২১, ২০১৮
ডিজিটাল যুগেও লন্ড্রিতে কয়লার আয়রন লোহার তৈরি আয়রন মেশিনের ভেতরে জ্বলন্ত কয়লা। ছবি: বাংলানিউজ

ঠাকুরগাঁও: প্রযুক্তিনির্ভর ডিজিটাল যুগেও লোহার তৈরি আয়রন মেশিনের ভেতরে জ্বলন্ত কয়লা দিয়ে সেই তাপে কাপড় আয়রন করা হচ্ছে। ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার লক্ষ্মীরহাট বাজারে তজমুলের লন্ড্রির দোকানে এ পদ্ধতিতেই কাপড় আয়রন করা হয়ে থাকে। 

তজমুলের বাড়ি ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার ৪ নম্বর বড়গাঁও ইমরানের চামেশ্বরী গ্রামে। স্ত্রী আর তিন সন্তান নিয়ে তার সংসার।

বড় মেয়ে কিশামত চামেশ্বরী মাদ্রাসায় নবম শ্রেণিতে, ছেলে ষষ্ঠ শ্রেণিতে আর ছোট্ট ছেলের বয়স দুই বছর।

তজমুলের সঙ্গে কথা হলে তিনি বলেন, কৃষক পরিবারের ছেলে আমি। অল্প কিছু জমি আছে তাতে চাষাবাদ করি এবং কৃষিকাজের পাশাপাশি  প্রতিদিন বিকেলে লক্ষ্মীরহাট বাজারে কাপড় ইস্ত্রি করি। দোকানে বিদ্যুৎ থাকা সত্বেও আমি কয়লার আগুনের তাপে কাপড় ইস্ত্রি করি। কারণ বিদ্যুতে কাপড় ইস্ত্রি করলে খরচ বেশি হয়। কয়লার আগুনে খরচ অনেক কম।

তিনি আরো বলেন, প্রতিদিন ক্ষেতে কৃষিকাজ শেষ করে লক্ষ্মীরহাট বাজারে এসে দোকান খুলে কাপড় ইস্ত্রি শুরু করি। ২০ টাকার কয়লা পুড়িয়ে যে কাপড় ইস্ত্রি করা যায় তাতে ১০০ টাকা পর্যন্ত আয় হয়। তাই আমি বিদ্যুৎ ব্যবহার না করে লোহার ইস্ত্রি মেশিনে কয়লা দিয়ে কাপড় ইস্ত্রি করি।
লোহার তৈরি আয়রন মেশিনের ভেতরে জ্বলন্ত কয়লা।  ছবি: বাংলানিউজ
বিভিন্ন হোটেলে রান্নার জন্য কাঠ-খড়ি পোড়ানোর পর যে কয়লা থাকে সেই কয়লা সংগ্রহ করে ইস্ত্রি মেশিনের মধ্যে দিয়ে কাপড় ইস্ত্রি করি। এতে আমার প্রতিদিন ১৫০ থেকে ২০০ টাকা আয় হয়। এই টাকা দিয়ে আমি প্রতিদিনের বাজার এবং সংসারের টুকিটাকি খরচ করি।

লক্ষ্মীরহাট বাজারের খেনপাড়া এলাকার আইনুল ইসলাম বলেন, বৈদ্যুতিক ইস্ত্রি মেশিন দিয়ে কাপড় ইস্ত্রি করার চেয়ে কয়লার ইস্ত্রি মেশিন দিয়ে কাপড় ইস্ত্রি  অনেক আরামদায়ক। এছাড়া কয়লার ইস্ত্রি মেশিন দিয়ে ইস্ত্রি করা কাপড় অনেক টেকসইও হয়। তাই আমি প্রায় সময় তজমুলের দোকান থেকে কাপড় ইস্ত্রি করিয়ে নিয়ে যাই।  
ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার কেশুবাড়ী গ্রামের ইউসুফ আলী বলেন, এই দোকানে কয়লার ইস্ত্রি মেশিন দিয়ে কাপড় ইস্ত্রি করা দেখে আগের যুগের কথা মনে পড়ে যায়।

আগে আমাদের বাপ-দাদারা কয়লার ইস্ত্রি মেশিন দিয়ে কাপড় ইস্ত্রি করতেন। আমরাও কয়লার ইস্ত্রি মেশিন দিয়ে কাপড় ইস্ত্রি করেছি।  

তজমুল ভাই প্রতি পিস কাপড় ৫ টাকা করে রাখেন। আর বৈদ্যুতিক ইস্ত্রি মেশিনে কাপড় ইস্ত্রি করলে প্রতি পিস ৬ থেকে ৮ টাকা করে দিতে হয়।

ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার ৪ নম্বর বড়গাঁও ইউনিয়নের চেয়ারম্যান প্রভাত সিংহ জানান, একমাত্র ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলায় লক্ষ্মীরহাট বাজারে তজমুলের লন্ড্রির দোকানে কয়লার ইস্ত্রি মেশিন দিয়ে কাপড় ইস্ত্রি করতে দেখা যায়। আসলে আগের যুগের মানুষরা বেশিরভাগ এই মেশিন দিয়ে কাপড় ইস্ত্রি করতেন। তজমুল যে এখনো আগের যুগের সংস্কৃতি ধরে রেখেছেন তাই এটি চোখে পড়ার মতো। বর্তমান যুগে আমাদের ছেলে মেয়েরা জানেও না যে আগের যুগে মানুষ কিভাবে কাপড় ইস্ত্রি করতেন। তাই পুরোনো সংস্কৃতিকে টিকিয়ে রাখার জন্য আমাদের সবার এগিয়ে আসা উচিত।

বাংলাদেশ সময়: ০৮৫৫ ঘণ্টা, নভেম্বর ২১, ২০১৮ 
আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।