ঢাকা, শুক্রবার, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

মুগ্ধতায় সংগীতের শেষ সন্ধ্যার মঞ্চ

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৫৩২ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৮, ২০১৮
মুগ্ধতায় সংগীতের শেষ সন্ধ্যার মঞ্চ অর্ণব-ছবি:রাজীন চৌধুরী-বাংলানিউজ

ঢাকা: সন্ধ্যা থেকেই রাজধানীর আর্মি স্টেডিয়াম লোকে লোকারণ্য। লাল নীল হলুদ সাদা আলোর মঞ্চে তখন শুধুই উৎসবের হলি। সে হলির রং মেখে নিজেদের রাঙিয়ে নিয়েছে সামনে উপস্থিত দর্শক শ্রোতারাও। ঢাকির ঢোলের তালের মতো নিজেদের সে তালে দোলাচ্ছিলেন প্রায় সবাই। সুর মেলাচ্ছিলেন অন্যরাও। আর সে সুরেই উচ্ছাস ছড়ালেন দেশের জনপ্রিয় সংগীত শিল্পী শায়ান চৌধুরী অর্ণব।

শনিবার (১৭ নভেম্বর) ঢাকা আন্তর্জাতিক লোকসংগীত উৎসবের (ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ফোক ফেস্ট) শেষ দিনে লোকজ সংগীত ভালোবাসা মানুষের জন্য বিশেষ আকর্ষণ ছিল শিল্পী অর্ণব। তার লোকজ গানের ছন্দ-সুরে চারদিকে শুধুই নিজেকে তখন মেলে ধরার আহ্বান।

যেন সে আহ্বানের ঘোরেই কেটে যায় অনেকটা সময়।

গানের ভুবনে নিজস্বতা তৈরি করে প্রথমেই অর্ণব শুধু কণ্ঠে পরিবেশন করেন জনপ্রিয় গান 'সোনা দিয়া বান্ধাইয়াছি ঘর'। এরপর একে একে 'কে বোঝে মওলার আলেকবাজি', 'আমার সোনার ময়না পাখি', 'মাঝে মাঝে তব দেখা পাই, চিরদিন কেন পাইনা?', আমার হাড় কালা করলাম রে'সহ দলের বিভিন্ন পরিবশনা শুরু থেকেই মুগ্ধ করে দর্শকদের।

গান আর যন্ত্রের সুরের র্ঝনাধারায় নিজেদের এসময় মেলে ধরেছিলেন লোকসংগীত প্রেমিকেরা। গানের তালে তালে নাচছিলেন আলাদা আলাদা দলে। ছিল আনন্দ উল্লাস আর ভালোবাসার চিৎকার। প্রত্যেকটি গানই যেন ছিল সবার প্রাণের গান।

অর্ণবের পর আরো মুগ্ধতার রেশ মাখালেন পাকিস্তানের লোকজ সংগীতের জন্য বিশ্বের সংগীত মহলে সমাদৃত শিল্পী শাফকাত আমানাত আলী।

শিল্পীর প্রথম পরিবেশনা 'মওলা তেরা নূর' গানে দর্শক সারিতে যখন উল্লাস আর মাতামাতির আয়োজন, ঠিক তখনই বাংলার জন্য, তার মায়ের জন্য তিনি বাংলায় গেয়ে উঠলেন 'কেউ কোনদিন আমারে তো কথা দিলো না!' আর তাতেই যেনো সাত আসমান ভেঙে আনন্দ ছড়িয়ে পড়লো পুরো আর্মি স্টেডিয়ামের হাজারো দর্শক-শ্রোতার হৃদয়ে।

শনিবার (১৭ নভেম্বর) ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ফোক ফেস্টের শেষ শিল্পী হিসেবে সংগীত পরিবেশন করাচী দ্যা মিউজিক অ্যাওয়ার্ড (টিএমএ) ২০০৮ এ “বেস্ট লাইভ অ্যাক্ট” অ্যাওয়ার্ড ও ২০১৭ সালে ১৪ আগস্ট “প্রেসিডেন্ট প্রাইড অফ পারফরমেন্স”-এ ভূষিত এ শিল্পী।

এসময় তিনি পরিবেশন করেন 'আখো কি সাগার লে ডুবে হামে', 'আজ যানেকি জিদ না ক্যারো', 'বিন তেরে বিন তেরে কয়ি খালিশ হ্যায়', 'দিওয়ানে চালে সাব সাথ', 'এ চান ঢালে ঢালে', 'তেরে ন্যাইনা রে', 'মিতুয়া'সহ বাংলায় 'ভালোবাসি তোমায় বলবো না' গানটি। আপন মুগ্ধতায় নিজেদের মতোই বড্ড আপন করে বিদেশি গানগুলোকে আয়োজনে আতিথেয়তা দিলেন বাঙালি দর্শক শ্রোতারাও।

গানের বিভিন্ন পর্যায়ে দর্শক-শ্রোতাদের হাততালি আর অভিবাদনের সুর ছিল আতিথেয়তার বড় প্রমাণ। মঞ্চের গায়েনদের তালে তালে নেচে তাদের সাথে তাল মিলিয়েছেন গান পাগল মানুষদের অনেকেই। অভিবাদন জানিয়েছেন দু’হাত নেড়ে। শিল্পীও নেমেছিলেন দর্শক সারিতে। গলা মিলিয়ে গান গেয়েছেন গান প্রেমীদের সঙ্গে।

শাফকাত আমানাত আলী-ছবি:রাজীন চৌধুরী-বাংলানিউজ

পাকিস্তানের স্বনামধন্য ওস্তাদ আমানাত আলী খানের ছেলে , পাটিয়ালা ঘরানার নবম বংশধর। ১৯৬৫ সালে ২৬শে ফেব্রুয়ারি পাকিস্তানের লাহোরে জন্মগ্রহণ করা এই শিল্পী চার বছর বয়স থেকেই হিন্দুস্তানি ক্লাসিকাল সঙ্গীতের তালিম নেন। শিল্পীর গায়কীতে প্রভাব রয়েছে তার বাবা এবং চাচা ওস্তাদ ফাতেহ্ আলী খান সাহেবের। সেই সাথে রোশনারা বেগমের গায়কী থেকেও গানের অনুপ্রেরণা পেয়েছেন তিনি।

আয়োজন শেষ হয় শিল্পীর 'চাহে কুছ না ক্যাহে না' গানের মধ্য দিয়ে। আর ততক্ষণে মুগ্ধতায় বুদ হয়ে গেছে দর্শক সারির সকলেই। তাইতো তখনো আওয়াজ উঠছিলো 'ওয়ানস মোর' এর। সে ভালোবাসাতেই লোকজ সঙ্গীতের এমন আয়োজনের জন্য বাংলাদেশকে ধন্যবাদ জানিয়ে গাইলেন আয়োজনের শেষ গান 'দামাদাম মাস্ত ক্যালেন্ডার'।

এর আগে আয়োজনে বিদেশি দল হিসেবে সংগীত পরিবেশন করেন স্পেনের দল 'লাস মিগাস'। অনেকে তাদের গানগুলোকে মেডিটেরিয়ান গান বা আত্মার গান হিসেবে আখ্যায়িত করেন। সত্যিই তাই, লাস মিগাসের সংগীতকে আখ্যায়িত করা গেল নির্দিষ্ট কোনো ঘরনায়। মূলত নিজস্ব ছন্দের অনুপ্রেরণা থেকেই এসময় সংগীত প্রেমীদের হৃদয়ে জায়গা করে নেন তারা।

বাংলাদেশ সময়: ০০২৮ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৮, ২০১৮
এইচএমএস/এসআইএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।