ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

পদ্মায় স্পিডবোট ডুবি, থেমে নেই অদক্ষ চালকদের দৌরাত্ম্য

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১০৫ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৪, ২০১৮
পদ্মায় স্পিডবোট ডুবি, থেমে নেই অদক্ষ চালকদের দৌরাত্ম্য পদ্মায় স্পিডবোট ডুবি। (ফাইল ফটো)

মাদারীপুর: দেশের ব্যস্ততম নৌরুট কাঁঠালবাড়ী-শিমুলিয়া। রাজধানী ঢাকার সঙ্গে দক্ষিণাঞ্চলের যোগাযোগের জন্য অন্যতম নৌপথ এটি। 

এ রুটে পদ্মা নদী পাড়ি দেওয়ার জন্য রয়েছে লঞ্চ, স্পিডবোট ও ফেরি। তবে দ্রুত যোগাযোগের জন্য স্পিডবোটের জনপ্রিয়তা একটু বেশি।

কিন্তু চালকদের অদক্ষতায় বোট চালানোয় পদ্মায় ঝরে যাচ্ছে অসংখ্যা প্রাণ।  

এ নৌরুটে চলাচলরত যাত্রীদের অভিযোগ, স্পিডবোট দুর্ঘটনায় প্রতি বছরই মারা যাচ্ছে যাত্রীরা। এরপরও তেমন কোনো পদক্ষেপ নেয়নি প্রশাসন। দুর্ঘটনারোধে নেওয়া হয়নি তেমন কোনো উদ্যোগও।  

গত রোববার (১১ নভেম্বর) বিকেলে একটি ডাম্প ফেরির সঙ্গে ধাক্কা লেগে একটি স্পিডবোট ডুবে যায়। এ দুর্ঘটনার জন্য চালকের অদক্ষতাকে দায়ী করছে ডুবে যাওয়া বোট থেকে উদ্ধার হওয়া যাত্রীরা। তবে ওই বোটের ২১ জন যাত্রীকে উদ্ধার করা সম্ভব হলেও পরদিন সোমবার (১২ নভেম্বর) দুপুরে তিনজনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়।

এ দুর্ঘটনায় প্রাণ হারান গোপালগঞ্জ জেলার মুকসুদপুর থানার  প্রসন্নপুর গ্রামের আব্দুর রহমান উকিলের ছেলে মেরাজুল ইসলাম রাজু (২২), মেরাজুলের স্ত্রী সাদিয়া আক্তার লিমা আক্তার (১৮) এবং পটুয়াখালী জেলার বাউফল উপজেলার আমিরাবাদ গ্রামের রুবেল গাজির মেয়ে ফাতেমা আক্তার (০৮)।

এদের মধ্যে রাজু ও লিমা নবদম্পতি। উদ্ধার হওয়া এই দম্পতির মরদেহ পরস্পরকে আকড়ে ধরে রেখেছিল। আর নতুন বউয়ের সাজেই ছিলো নিহত লিমা। এই নবদম্পতির মরদেহ দেখে আবেগ তাড়িত হয়েছিলেন উদ্ধারকর্মীরাও।

এ বিষয়ে ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরী দলের স্টেশন মাস্টার আব্দুর রহমান 
বাংলানিউজকে জানান, সোমবার (১২ নভেম্বর) বেলা সাড়ে ১১টার দিকে কাঁঠালবাড়ী ঘাট সংলগ্ন পদ্মানদী থেকে নিখোঁজ তিনজনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। এরমধ্যে রাজু ও লিমা নামের এই দম্পতির মরদেহ পরস্পরকে আঁকড়ে ধরা অবস্থায় ছিলো। আর একটু দূরেই ছিল শিশু ফাতেমার মরদেহ। পুরো চিত্রটি খুবই মর্মান্তিক ছিলো।

জানা যায়, রোববার (১১ নভেম্বর) বিকেলে শিমুলিয়া ঘাট থেকে শামীম মাতুব্বরের মালিকানাধীন একটি স্পিডবোট ২৪ জন যাত্রী নিয়ে শিবচরের কাঁঠালবাড়ীর উদ্দেশে রওনা হয়। মাঝ পদ্মা পেরিয়ে লৌহজং টার্নিং পয়েন্টের কাছে গেলে ইঞ্জিন বিকল হয়ে যায়। এসময় পাশ দিয়ে যাওয়া একটি ডাম্প ফেরির সঙ্গে বোটটির ধাক্কা লেগে পানিতে পুবে যায়। তাৎক্ষণিকভাবে নদীতে টহলরত সেনা সদস্যরা ২১ জন যাত্রীকে উদ্ধার করলেও রাজু, লিমা ও শিশু ফাতেমা নিখোঁজ হয়। এরপর রাতে উদ্ধার অভিযান শুরু করা হলেও সোমবার সাড়ে ১১টার দিকে নিখোঁজ হওয়া তিনজনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়।

নিহত রাজু ও লিমার পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, মেরাজুল ইসলাম রাজু কিশোরগেঞ্জ কারারক্ষী পদে চাকরি করতেন। পাঁচ দিনের ছুটিতে অসুস্থ দাদাকে দেখতে বাবা ও নতুন বৌকে সঙ্গে নিয়ে গ্রামের বাড়ি মাদারীপুরের টেকেরহাট যাচ্ছিলেন। পদ্মায় চালকের অদক্ষতায় থেমে থাকা বোটটি ফেরিতে ধাক্কা লেগে ডুবে যায়। প্রাণ হারান তারা। তবে রাজু সাঁতার জানলেও তার স্ত্রী সাঁতার জানতেন না। দুইজনে বাঁচার চেষ্টায় তাদের মর্মান্তিক মৃত্যু হয়।  

এ নৌরুটে যাতায়াতকারী যাত্রীরা অভিযোগ করে বাংলানিউজকে বলেন, স্পিডবোট চালকদের দৌরাত্ম্য দেখা যায় পদ্মা নদীতে। তারা কোনো রকম নিয়মকানুন ছাড়াই নিজের ইচ্ছেমত স্পিডবোট চালায়। ধারণক্ষমতার চেয়েও তিন/চারজন যাত্রী বেশি নেয়। যাত্রীরা প্রতিবাদ করলে লাঞ্ছিত হতে হয় চালকদের হাতে। এ পর্যন্ত বিভিন্ন সময়ে স্পিডবোট দুর্ঘটনায় অসংখ্য যাত্রীর প্রাণহানি ঘটলেও চালকদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে বলে শুনিনি। এজন্য তাদের বেপরোয়া ভাবও কমেনি।

শিবচর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জাকির হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, চালকের অদক্ষতার জন্য দুর্ঘটনাটি ঘটেছে বলে প্রাথমিকভাবে জানা গেছে। এ বিষয়ে শিবচর থানায় মামলা প্রক্রিয়াধীন।

বাংলাদেশ সময়: ০৫৫৭ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৪, ২০১৮
এনটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।