ঢাকা, শুক্রবার, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৮ রমজান ১৪৪৫

জাতীয়

আদালতের নির্দেশও মানছে না খাগড়াছড়ি পৌরসভা

অপু দত্ত, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪১৩ ঘণ্টা, নভেম্বর ৬, ২০১৮
আদালতের নির্দেশও মানছে না খাগড়াছড়ি পৌরসভা .

খাগড়াছড়ি: উচ্চ আদালতের স্থগিতাদেশ এবং স্থানীয়দের বাঁধা ডিঙিয়ে আবারও ঐতিহ্যবাহী একটি পুকুর ভরাট করে মার্কেট নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছে খাগড়াছড়ি পৌরসভা।

মাঝখানে প্রায় দুই বছর স্থানীয়দের বাঁধার মুখে পড়ে অবৈধভাবে দখল করা ওই পুকুরে পৌরসভার মার্কেট নির্মাণ কাজ বন্ধ ছিল। এখন পুনরায় তাদের এ উদ্যোগ সচেতন মহলে নাড়া দিয়েছে।

শুধু তা-ই নয়, খাগড়াছড়ি শহরের পানবাজার পুকুরেও কফি হাউস নির্মাণাধীন তাদেরই তত্ত্বাবধানে।
 
এর বিরোধীতায় রোববার (০৪ নভেম্বর) সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা মানববন্ধন করেছিলেন। সেখানে তারা বলেন, খাগড়াছড়ি শহরের জগন্নাথ মন্দির সংলগ্ন বেদখল হওয়া ঐতিহ্যবাহী পুকুরটিতে মার্কেট নির্মাণ কাজ বন্ধ করতে হবে।  

অন্যথায় তারা আইনের আশ্রয় নেবেন বলে হুমকি দেন। এসময় তারা ওই পুকুরটি পুনরায় খননের দাবিও জানান।

২০১১ সালে মার্কেট উন্নয়নের নামে পৌর মেয়রের নির্দেশে ঐতিহ্যবাহী ওই পুকুরটি ভরাট করা হয়। এরপর ২০১৫ সালে সেই পুকুরের ওপরই বিশ্ব ব্যাংকের প্রায় আট কোটি টাকায় বাংলাদেশ মিউনিসিপ্যাল ডেভলপমেন্ট ফান্ড (বিএমডিএফ) প্রকল্প গ্রহণ করে।

যদিও বিরোধপূর্ণ পুকুরটির মালিকানা নিয়ে গত ১৬ বছর ধরে উচ্চ আদালতে খাগড়াছড়ি বাজার ফান্ড কর্তৃপক্ষের সঙ্গে স্থানীয় গোলাপ ফুল চৌধুরীর পরিবারের মামলা চলমান। পুকুরটির ওপর আদালতের স্থগিতাদেশও রয়েছে। কিছুদিনের মধ্যে এই মামলার শুনানিরও কথা।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সচেতন নাগরিকদের বাঁধাতো মানছেই না, এমনকি উচ্চ আদালতের স্থগিতাদেশও উপেক্ষা করছে পৌরসভাটি।

আদালতের নির্দেশ অগ্রাহ্য করে মেয়র রফিকুল আলম পুকুরেই স্থাপনা নির্মাণের কাজ অব্যাহত রেখেছেন। এদিকে, বিরোধপূর্ণ জায়গায় বিএমডিএফের অর্থায়ন নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। অভিযোগ রয়েছে- ভূমি জালিয়াতির আশ্রয় নিয়ে পৌরসভা ৩০ শতক জমির (পুকুর) ওপর নতুন করে এই ভবন নির্মাণ করতে যাচ্ছে। এছাড়া কোনো রকম পরিবেশগত ছাড়পত্র ছাড়াই বিএমডিএফের অর্থায়নে এই প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হচ্ছে।
 
এদিকে, পৌর মার্কেট নির্মাণ স্থানের জমির মালিকানা বিবাদ মিমাংসা সংক্রান্ত সভায় অংশ নিতে বিএমডিএফের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) সৈয়দ হাসিনুর রহমান খাগড়াছড়ি সফর করছেন।

সোমবার (০৫ নভেম্বর) সকালে তিনি ওই পুকুরের স্থানটি পরিদর্শন করেছেন। এছাড়া এ বিষয়ে খাগড়াছড়ি পৌরসভায় একটি বৈঠকও হওয়ার কথা রয়েছে।

ওই বৈঠকে উপস্থিত থাকতে জগন্নাথ মন্দির পুকুরের দাবিদার মৃত গোলাপ ফুল চৌধুরীর ছেলে রাপ্রুচাই চৌধুরীকে চিঠি দিয়েছে পৌরসভা।

বাংলানিউজকে রাপ্রুচাই চৌধুরী বলেন, আমাকে বৈঠকে থাকতে বলা হয়েছে। কিন্তু পুকুর নিয়ে পৌরসভার বৈঠকে থাকার সুযোগ নেই। কারণ ওই পুকুরে উচ্চ আদালতের নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। আশা করি খুব শিগগিরই মামলার শুনানি হবে।  

মূলত পৌর মেয়র রফিকুল আলম একক স্বার্থে এ কাজটি করছেন বলে অভিযোগ তুলেন তিনি।
 
অপরদিকে, রোববার সকালে এর বিরুদ্ধে খাগড়াছড়ি শাপলা চত্বরে খাগড়াছড়ি পরিবেশ সুরক্ষা আন্দোলনের উদ্যোগে মানববন্ধন ও প্রতিবাদ মিছিল হয়। এতে জেলার বিভিন্ন পরিবেশ সংগঠন ও বিশিষ্ট নাগরিকরা অংশ নেন। তাদের দাবি- এর নির্মাণ কাজ বন্ধ করতেই হবে। পাশাপাশি এটাকে পুনরায় খননেও তাগাদা দেন তারা। পরে জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে বন ও পরিবেশ মন্ত্রী বরাবরে স্মারকলিপিও পাঠান তারা।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির (বেলা) নেটওয়ার্ক সদস্য মুহাম্মদ আবু দাউদ বাংলানিউজকে বলেন, খাগড়াছড়িতে যে কয়টি পুকুর আছে, তা এতোদিন জেলার অগ্নি নিরাপত্তায় ভূমিকা রেখে আসছিল। কিন্তু উন্নয়নের নামে পুকুরগুলো ভরাট করা হচ্ছে। উচ্চ আদালতে পুকুর নিয়ে মামলা থাকার পরও বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে মার্কেট নির্মাণ কোনোভাবে গ্রহণযোগ্য নয়। তাই অবিলম্বে পুকুর পুনরুদ্ধার করে খনন করতে হবে এবং বিএমডিএফের প্রকল্পটি বাতিল করতে হবে। অন্যথায় আমরা আইনের আশ্রয় নেবো।

খাগড়াছড়ি পরিবেশ সুরক্ষা আন্দোলনের সভাপতি প্রদীপ চৌধুরী বাংলানিউজকে বলেন, যাদের পুকুর, নদী, ছড়া ও জলাশয় রক্ষা করার কথা, তারাই দখল-ভরাট করছে। ছোট শহরে প্রশাসনকে আলাদাভাবে এসব দেখিয়ে দেওয়ার কিছু নেই। রক্ষা করার দায়িত্ব প্রশাসনেরই। তাই অবিলম্বে জগন্নাথ মন্দির পুকুর, পানবাজার পুকুর পুনরুদ্ধার করতে হবে। অন্যথায় ধারাবাহিক কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।

বাংলাদেশ সময়: ০৯১০ ঘণ্টা, নভেম্বর ০৬, ২০১৮
এডি/টিএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।