ঢাকা, শুক্রবার, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৮ রমজান ১৪৪৫

জাতীয়

‘বাবাই বলেছিলেন, ওরা আমাদের মেরে ফেলবে’ 

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮৩৩ ঘণ্টা, নভেম্বর ৩, ২০১৮
‘বাবাই বলেছিলেন, ওরা আমাদের মেরে ফেলবে’  শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম ও তার ছেলে মেজর জেনারেল (অব.) শাফায়েতুল ইসলাম। ফাইল ফটো

ময়মনসিংহ: ‘অক্টোবরের শেষের দিকে মাকে নিয়ে কারাগারে বাবার সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলাম। বাবা খুবই উৎফুল্ল এবং ভালো মেজাজেই ছিলেন। মাকে সরিয়ে আমার সঙ্গে আলাদা করে কথা বললেন তিনি। বাবা বলেছিলেন- ওরা আমাদের (জাতীয় চার নেতা) মেরে ফেলবে। খুবই স্বাভাবিক কণ্ঠে তিনি এই কথা বলছিলেন।’ 

কথাগুলো বলতে বলতে যেন গলা ধরে আসছিলো দেশের প্রথম অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলামের ছেলে মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ শাফায়েতুল ইসলামের। তিনি জনপ্রশাসনমন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের সহোদর।

 

শনিবার (০৩ নভেম্বর) সকাল সাড়ে ১১টার দিকে বাংলানিউজের সঙ্গে মোবাইলে আলাপকালে বাবার স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে সৈয়দ শাফায়েত এসব কথা বলেন।

তিনি বলেন, ‘বাবার ওই কথা শুনে তখন আমি বললাম কেন? উত্তরে বললেন, ওরা (ঘাতক চক্র) আমাদের যে প্রোপোজাল (প্রস্তাব) এবং প্রলোভন দিচ্ছে তাতে রাজি হওয়া আমাদের পক্ষে সম্ভব না। বঙ্গবন্ধুর রক্তের সঙ্গে আমরা কোনোদিনই বেইমানি করতে পারবো না। বঙ্গবন্ধুর অবর্তমানে তার নির্দেশনায় আমরা মহান মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্ব দিয়ে গেছি। কাপুরুষোচিত মৃত্যুর চেয়ে বীরের বেশে মৃত্যু অনেক ভালো। ’

পঁচাত্তরের ১৫ আগস্ট নৃশংসভাবে বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার পর কারাগারের নিরাপদ আশ্রয়ে থাকা জাতির চার সূর্য সন্তান দেশের প্রথম অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম, প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দিন আহমেদ, মন্ত্রিসভার সদস্য ক্যাপ্টেন এম মনসুর আলী এবং এ এইচ এম কামরুজ্জামানকে নির্মম ও জঘন্য কায়দায় হত্যা করে হায়েনার দল।  

৪৩ বছর আগের দুঃসহ জীবনের স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে সৈয়দ নজরুল ইসলামের উত্তরাধিকার বলেন, ‘ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে বন্দি থাকা অবস্থায় বাবা নির্দেশ দিয়েছিলেন কোনো কিছু ঘটলে মাকে যেন ময়মনসিংহে সেটআপ করা হয়। পরে মাকে নগরীর কলেজ রোডের বাসাতেই রাখা হয়। ’

মৃত্যুর পর বাবার মুখ শেষবারের মতো দেখতে না পারারও আক্ষেপ করেন তিনি। বলেন, ‘তখন আমার বয়স ১৮ বছর। আমি তখন কুমিল্লায় সেনাবাহিনীর ট্রেনিং স্কুলে ট্রেনিং করছি। হঠাৎ আমার এক আত্মীয়ের মাধ্যমে খবর পেলাম জাতীয় চার নেতাকে হত্যা করা হয়েছে। ’

‘তাদের (জাতীয় চার নেতা) লাশ কারাগারের বারান্দায় তিনদিন পড়েছিলো। চতুর্থদিনের মাথায় আমি ঢাকায় আসি। কিন্তু শেষবারের মতো বাবার মুখটিও দেখার ভাগ্য হয়নি আমার। ওই সময় জাতীয় চার নেতাকে হত্যার পর কবর কোথায় হবে তা বের করতেই লেগেছে অনেক দিন। কোথায় কার কবর, সেটি খুঁজে বের করাও ছিলো কঠিন। ’
 
সৈয়দ শাফায়েতুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা গর্বিত আমাদের বাবা বঙ্গবন্ধুর রক্তের সঙ্গে বেইমানি করেননি। তিনিসহ জাতীয় চার নেতা জীবন দিয়েছেন। কিন্তু এক মুহূর্তের জন্যও বেইমানি করেননি। ’ 

জাতির ইতিহাসে আরেকটি বেদনাবিধূর ও কলঙ্কিত জেল হত্যা দিবসের ৪৩ বছর পেরিয়ে গেলেও বিচারের রায় পূর্ণাঙ্গ কার্যকর করা যায়নি আজও; এ নিয়েও মর্মবেদনা রয়েছে তার। এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত তিন ঘাতকের ফাঁসি ও ১২ জনের যাবজ্জীবন দণ্ড দেওয়া হলেও ১০জন আসামি বিভিন্ন দেশে পালিয়ে রয়েছে।  

এ বিষয়ে শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলামের ছেলে অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তা বলেন, এই হত্যাকাণ্ডে পর্দার অন্তরালে কারা ছিল তাদের খুঁজে বের করে বিচার করতে হবে। আড়ালের ষড়যন্ত্রকারীদের মুখোশ উন্মোচন করে নতুন প্রজন্মকে জানাতে হবে। শুধু ঘাতকদের বিচার হলেই হবে না।  

বাংলাদেশ সময়: ১৪২৫ ঘণ্টা, নভেম্বর ০৩, ২০১৮
এমএএএম/এমএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।