ঢাকা, শুক্রবার, ৬ বৈশাখ ১৪৩১, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

পানি, বিদ্যুৎ ও স্বাস্থ্য সেবা চান পাংখোয়া সম্প্রদায়

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪২৭ ঘণ্টা, অক্টোবর ৩০, ২০১৮
পানি, বিদ্যুৎ ও স্বাস্থ্য সেবা চান পাংখোয়া সম্প্রদায় সন্তান কোলে দুই পাংখোয়া নারী। ছবি-বাংলানিউজ

রাঙামাটি: রাঙামাটির দুর্গম বিলাইছড়ি উপজেলাটি সাড়ে সাতশ’ বর্গকিলোমিটার এলাকা জুড়ে গঠিত। এ এলাকায় ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী পাংখোয়া সম্প্রদায়ের বসবাস।

রাঙামাটি জেলা জুড়ে তিন হাজার পাংখোয়া বসবাস করলেও বিলাইছড়ি উপজেলার তিন কোনিয়া মৌজার আওতাধীন তথা বিলাইছড়ি ইউনিয়নে পাংখোয়াদের নিয়ে গঠিত হয়েছে পাংখোয়া পাড়া। যেখানে দেড় হাজার পাংখোয়ার বসবাস।

 

পাংখোয়া পাড়ার বাসিন্দাদের পানি, বিদ্যুৎ, স্বাস্থ্য সেবা এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সংকট দীর্ঘদিনের। উপজেলা সদরের সঙ্গে উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থা না থাকায় তাদের পড়তে হচ্ছে চরম দুর্ভোগে।  

এ এলাকায় রয়েছে একটি মাত্র সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। প্রাথমিকে পাস করার পর লেখাপড়া চালাতে হলে যেতে হয় বিলাইছড়ি সদরে। নৌকায় পাড়ি দিতে হয় এক থেকে দেড় ঘণ্টার পথ।

কাপ্তাই হ্রদের পানি শুকিয়ে গেলে অর্ধেক পথ হেঁটে, বাকি অর্ধেক নৌকায় চড়ে সদরে আসতে হয়। দরিদ্র পরিবারের অধিকাংশ শিক্ষার্থীরা তাই প্রাথমিকের গণ্ডি পেরুলেই ঝরে যায়।  

পিতৃ প্রধান এ সম্প্রদায় প্রধানত জুম চাষ, কাঠ বিক্রি এবং জলেভাসা জমিতে চাষাবাদ করেই জীবিকা নির্বাহ করেন। তাদের স্বাক্ষরতার হার ৮০ ভাগ। পাংখোয়া ভাষায় কথা বলার পাশাপাশি শুদ্ধ বাংলায়ও কথা বলতে পারদর্শী তারা।  খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বী পাংখোয়ারা একটু আধটু ইংরেজিও বোঝেন।
 

পাংখোয়া পাড়ার লাইতাত পাংখোয়া বাংলানিউজকে বলেন, আমাদের এখানে বিশুদ্ধ পানির  অভাব। দূরবর্তী পাহাড়ি ঝিরি (ঝরনা) থেকে অনেক কষ্ট করে পানি আনতে হয়। অনেকেই আবার নদীর পানি (কাপ্তাই হ্রদ) পান করেন। ফলে অনেকেই আক্রান্ত হন পানিবাহিত বিভিন্ন রোগে।

লাল নামে এক পাংখোয়া বাংলানিউজকে বলেন, আমাদের এলাকার অন্যতম সমস্যা হচ্ছে বিদ্যুৎ। বিদ্যুৎ না থাকায় সন্ধ্যা হলে এখানে রাত নামে। সরকারের কাছে আমাদের অনুরোধ, দ্রুত যেন আমাদের গ্রামে বিদ্যুতের ব্যবস্থা করে দেওয়া হয়।

মাংলি পাংখোয়া বাংলানিউজকে বলেন, আমাদের গ্রামে একটি মাত্র প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। প্রাথমিকের গণ্ডি পেরুনোর পর লেখাপড়া করার মতো অন্য কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নেই এখানে। নেই কোনো চিকিৎসা কেন্দ্রও। উপজেলা সদরের সঙ্গে যোগাযোগের একমাত্র মাধ্যম পানি পথ। কোনো মানুষ অসুস্থ হলে এক থেকে দেড় ঘণ্টা পানি পথ পাড়ি দিয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গিয়ে চিকিৎসা করাতে হয়। হ্রদের পানি শুকিয়ে গেলে উপজেলা সদরে যাতায়াত করা কঠিন হয়ে পড়ে। তাই এ গ্রামে একটি উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং স্বাস্থ্য সেবা কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করা জরুরি।

এ বিষয়ে বিলাইছড়ি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আসিফ ইকবাল বাংলানিউজকে জানান, পুরো এলাকাটি দুর্গম। যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নত নয়। এখানে উন্নয়ন করতে হলে এলাকা ভিত্তিক উন্নয়ন করতে হবে। এ এলাকার বাসিন্দাদের পানি সংকট দূর করার জন্য এ বছর দু’টি গভীর নলকূপ স্থাপন করা হবে। আরও নলকূপ স্থাপনের পরিকল্পনা করছে সরকার। এ এলাকার আরেকটি সমস্যা হলো- গভীর নলকূপ স্থাপনে পানির স্তর পাওয়া যায় না। পানির সংকট কীভাবে দূর করা যায় সে বিষয়ে গবেষণা চলছে। পাংখোয়া শিশুরা।  ছবি-বাংলানিউজ

বিলাইছড়ি উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান শুভ মঙ্গল চাকমা বাংলানিউজকে জানান, বর্তমান সরকারের আমলে বিলাইছড়ি উপজেলা সদরে বিদ্যুতের ছোঁয়া লেগেছে। কিন্তু উপজেলা সদরের সঙ্গে পাংখোয়া পাড়ার দূরত্ব অনেক বেশি হওয়ায় সেখানে বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়া অনেক সময় সাপেক্ষ ব্যাপার। এজন্য এ এলাকায় অন্ধকার দূর করতে সৌরবিদ্যুতের ব্যবস্থা করতে হবে।  

চেয়ারম্যান আরও জানান, সৌরবিদ্যুতের জন্য পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃপক্ষের কাছে এরই মধ্যে সহযোগিতা কামনা করা হয়েছে।

বাংলাদেশ সময়: ১০০৮ ঘণ্টা, অক্টোবর ৩০, ২০১৮
এসআই

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।