ঢাকা, শনিবার, ৬ বৈশাখ ১৪৩১, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

বর্তমান মন্ত্রিসভাই বহাল রাখার ইঙ্গিত প্রধানমন্ত্রীর

বাংলানিউজ টিম | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১৩৯ ঘণ্টা, অক্টোবর ২২, ২০১৮
বর্তমান মন্ত্রিসভাই বহাল রাখার ইঙ্গিত প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য রাখছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, পাশে সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। ছবি: পিআইডি

গণভবন থেকে: একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানকালে বর্তমান মন্ত্রিসভাই বহাল রাখার ইঙ্গিত দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী ও ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনা। তবে তিনি জানিয়েছেন, বিরোধী দল দাবি করলে মন্ত্রিসভার আকার ছোট করা হবে, নয়তো যেভাবে আছে সেভাবেই থাকবে।

সোমবার (২২ অক্টোবর) বিকেলে গণভবনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী এ কথা বলেন। তার সাম্প্রতিক সৌদি আরব সফর নিয়েই এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়েছে।

রোববার (২১ অক্টোবর) ঢাকায় এক অনুষ্ঠানে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ও সড়ক পরিবহনমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, কয়েকদিনের মধ্যেই মন্ত্রিসভার আকার ছোট হয়ে যাবে।

পড়ুন>>
** 
‘ওনার গুণের শেষ নাই’

নির্বাচন আয়োজনে মন্ত্রিসভার আকার ছোট হবে কি-না, সাংবাদিক নাইমুল ইসলাম খানের এমন এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, কী যে ছোট করবো সেটাতো খুঁজে পাচ্ছি না।  

বড় থাকলে অসুবিধা আছে? প্রধানমন্ত্রী এমন পাল্টা প্রশ্ন করলে নাইমুল ইসলাম খান বলেন, ‘আইনে তো নেই আপা। ’

এরপর প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আইনেও নাই, কোথাও নাই। তবে আমি বলেছিলাম, আপনারা জানেন যে, ২০০৮ সালের নির্বাচনের আগে, (বিএনপি প্রধান) খালেদা জিয়া তখন বিরোধী দলীয় নেত্রী ছিলেন, সবাইকে নিয়ে একটা নির্বাচনকালীন সরকার গড়তে চেয়েছিলাম। সেখানে (বিএনপিকে বলা হয়েছিল) আপনারা আপনাদের পছন্দমতো মন্ত্রণালয় নেবেন। তারা এলো না। অন্য বিরোধী দল যারা ছিল, তাদের নিয়েই মন্ত্রিসভা গঠন করি। ’

বর্তমান মন্ত্রিসভা প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আপনারা দেখেছেন, আমাদের দুই-তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা থাকলেও সংসদে প্রতিনিধিত্বকারী সব দলকে নিয়েই মন্ত্রিসভা গঠন করেছি। এই মন্ত্রিসভা নিয়ে চলছি। আগে এটা ছিল না, আগে কেবল আমাদের আওয়ামী লীগেরই ছিল। এখন জনগণের প্রতিনিধি যারা, তাদের নিয়েই মন্ত্রিসভা রয়ে গেছে। তারপরও আমি বিরোধী দলীয় নেতা (জাতীয় পার্টির রওশন এরশাদ) কথা বলেছি এ ব্যাপারে। আমি বলেছি, আপনারা যেভাবে চান, সেভাবে হবে। যেহেতু সব দলের প্রতিনিধি আছে। ’

‘এখন জানি না এটা প্রয়োজন আছে কি-না। তবে সত্যি কথা বলতে কী- আমাদের মন্ত্রিসভার হাতে এখন এতোগুলো প্রকল্প আছে, কয়েকটা মন্ত্রণালয় যদি একজনের হাতে দিই, সেগুলো বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে বিঘ্ন হবে কি-না। কাজগুলো করতে গেলে মন্ত্রণালয় থেকে কাউকে সরালে কাজ ব্যাহত হবে কি-না, এ সমস্যা রয়ে গেছে। এই কাজগুলো দ্রুত শেষ করতে চাই। দেশের উন্নয়ন কাজে কোনো বাধা হবে কি-না, সেই চিন্তাটা রয়ে গেছে। ’

বিরোধী দল দাবি না করলে বর্তমান মন্ত্রিসভাই বহাল রাখার ইঙ্গিত দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমি রাষ্ট্রপতির সঙ্গে এ বিষয়ে আলোচনাও করেছি। অন্য যেখানে সংসদীয় গণতন্ত্র আছে, সেখানেও আলাপ করে দেখেছি, অস্ট্রেলিয়া-নিউজিল্যান্ড-ব্রিটেন-ভারতে আছে, সবার কাছ থেকে তথ্য নেওয়ার চেষ্টা করেছি। এরকম কোনো প্রয়োজন আছে মনে করি না। তারপরও দেখা যাক, যদি বিরোধী দল দাবি করে, তখন করবো, না করলে আর কী করার। ’

সম্প্রতি গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে বিএনপি-জেএসডি-নাগরিক ঐক্যসহ বেশ কিছু দলকে নিয়ে ‘জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট’ গঠিত হয়। এই ফ্রন্ট নিরপেক্ষ সরকারের অধীন নির্বাচন এবং খালেদা জিয়ার মুক্তিসহ বিভিন্ন দাবি উত্থাপন করেছে সরকারের কাছে।

এই ঐক্যফ্রন্ট নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এখানে তো রাজনৈতিক স্বাধীনতা রয়েছে, কথা বলার স্বাধীনতা আছে, সাংবাদিকতার স্বাধীনতা আছে, সব কিছু মুক্ত। আমাদের বিচার বিভাগ স্বাধীন, সবই স্বাধীন। মানুষ স্বাধীনতা ভোগ করছে। সেই সুযোগ নিয়ে কিছু রাজনৈতিক দল ঐক্যবদ্ধ হয়েছে, সেটাকে স্বাগত জানাই। কারণ এটা প্রয়োজন আছে। তারা যদি সবাই ঐক্যবদ্ধ হতে পারে, তারা যদি রাজনৈতিকভাবে সাফল্য পায়, তাহলে তো অসুবিধা নাই। তবে একটু কথা বলার দরকার। কারা কারা এক হলো, সেটা আপনারা একটু খোঁজ নিয়ে দেখবেন। ’

আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, ‘যারা সেখানে ঐক্যবদ্ধ হয়েছে, তারা কোথা থেকে এসেছে, কার কী ধরনের ভূমিকা, কী ধরনের বাচনভঙ্গি, এমনকি মেয়েদের প্রতি যে কী ধরনের কটূক্তি করতে পারে, সে প্রতিযোগিতাও তৈরি হয়েছে। এই যে এ গাছের ছাল, ওই গাছের বাকল সবমিলে একটা তৈরি হয়েছে, তো, যাক তারা ভালো কাজ করুক, সেটা চাই। আওয়ামী লীগ এটা নিয়ে কোনো দুশ্চিন্তা করে না। বরং একটা হয়েছে, এটাই ভালো। এখানে স্বাধীনতাবিরোধী আছে, এখানে জাতির পিতার হত্যাকারীদের মদতদাতা, ইনডেমনিটি অর্ডিন্যান্স দিয়ে তাদের বিভিন্ন দূতাবাসে চাকরি দিয়ে পুরস্কৃত করা, এমনকি যারা জঙ্গিবাদ-সন্ত্রাস সৃষ্টি করেছে, বাংলাদেশকে দুর্নীতিতে চ্যাম্পিয়ন করেছে, তারা মিলেই কিন্তু এক জায়গায় হয়েছে। এটাকে বাংলাদেশের মানুষ কিভাবে দেখে, সেটাই বড় কথা। ’

‘জোটের এক সদস্য একজন নারী সাংবাদিককে যে নোংরা কথা বলতে পারে, তারা সবাই এক। এমন একটা জোট হয়, আমরা খারাপ কিছু দেখছি না। তারা যদি কিছু অর্জন করতে চায় করুক। কারণ, এদের কেউ কেউ আমাদের বিরুদ্ধে মামলা দিয়েছে, কেউ কেউ আওয়ামী লীগেও ছিলেন। তারা জোট করেছেন আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে। রাজনীতিতে এ স্বাধীনতা সবার আছে, কারণ এখানে একটি গণতান্ত্রিক ধারা প্রতিষ্ঠিত। সেই সুফল নিয়ে যারা জোটবদ্ধ হয়েছেন, তারা কী করতে পারেন দেখা যাক। ’

প্রধানমন্ত্রী তার সৌদি সফরে দু’দেশের মধ্যে স্বাক্ষরিত সমঝোতা স্মারক, বাদশাহ সালমান ও ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমানের সঙ্গে বৈঠকের কথা তুলে ধরেন। উল্লেখ করেন অন্যান্য কর্মসূচিতে অংশগ্রহণের কথাও। তিনি বলেন, এ সফর দু’দেশের সম্পর্কোন্নয়নে সুদূরপ্রসারী ভূমিকা রাখবে।

বাংলাদেশ সময়: ১৭৩৫ ঘণ্টা, অক্টোবর ২২, ২০১৮
এসকে/এমইউএম/এইচএ/

*
‘এ গাছের ছাল ও গাছের বাকল মিলে একটা কিছু তৈরি হয়েছে’
**​ সৌদি সফর দু’দেশের সম্পর্কোন্নয়নে ভূমিকা রাখবে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।