ঢাকা, শুক্রবার, ৬ বৈশাখ ১৪৩১, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

জুমার দিনে মসজিদে শিশুদের বিড়ম্বনা

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২২২ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৯, ২০১৮
জুমার দিনে মসজিদে শিশুদের বিড়ম্বনা ছবি: সংগৃহীত

শুক্রবার পবিত্র জুমার দিন। সপ্তাহের বাকি ছয়দিন না হলেও অন্তত এই একটা দিনে আমরা সবাই মসজিদে গিয়ে নামাজ পড়ি। জুমার দিনে সবার আগে মসজিদে যাওয়ার জন্য সবচেয়ে বেশি আগ্রহ দেখা যায় শিশুদের মধ্যে।

যাদের ওপর নামাজ ফরজ হয়েছে, তাদের আগেই ছোট ছোট বাচ্চারা মসজিদে চলে আসে। শিশুদের মসজিদে নামাজ পড়ার দৃশ্য সত্যিই অন্যরকম সুন্দর।

কিন্তু আমাদের সমাজের প্রায় সব মসজিদে শিশুরা বিড়ম্বনার শিকার হয়। কথাটা একটু অদ্ভুতই শোনালেও মূলত শিশুদের বিড়ম্বনাটা হচ্ছে, নামাজ শুরু হওয়ার সময় আমরা শিশুদের জোর করে পিছনে পাঠিয়ে দেই। এমন করলে বাচ্চাদের মেধা-মননে বড় ধরণের নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। এমনটা না করাই উত্তম।

একটা শিশু জামাতে নামাজ পড়ার জন্য যখন গোসল করে, সুন্দর জামা পড়ে এবং সুগন্ধি মেখে যে উদ্দীপনা ও প্রবল উৎসাহ নিয়ে সবার আগেই মসজিদে চলে আসে, আমরা বড়রাই সেই শিশুর উৎসাহ নষ্ট করে দেই ।  

শিশুরা একটু-আধটু দুষ্টুমি করবে, কথাবার্তা বলবে, এটাই স্বাভাবিক। এজন্য তাদেরকে একেবারে পেছনের কাতারে পাঠানোটা কোনো সমাধান না। যদি শিশুরা তাদের অভিভাবকের সঙ্গে বসে, তাহলে কিন্তু শিশুরা নামাজে কথা বা দুষ্টুমি করার সুযোগ কম পায়।

কখনো দেখা যায়, নামাজ শুরু হওয়ার ঠিক আগ মুহুর্তে কিছু মুসল্লি নামাজে আসেন। তারা সবাইকে ডিঙিয়ে, গায়ে পা লাগিয়ে, ধাক্কা দিয়ে যেভাবেই হোক সামনের দিকে বসার চেষ্টা করেন। অথচ কাজটা মোটেও ঠিক নয় । কারণ, নামাজে যে আগে এসে সামনের কাতারে বসবে, তার সাওয়াবই বেশি। পরে এসে হুমড়ি খেয়ে সামনের কাতারে বসার প্রয়োজন নেই। এতে অন্যদের কষ্ট দেয়া হয় এবং সাধারণত শিশুরাই এ ক্ষেত্রে বিড়ম্বনার শিকার হয়। এটা অনুচিত ও অশোভনীয়। ছবি: সংগৃহীত

আবু কাতাদা আল-আনসারি (রা.) বলেন, আমি নবী (সা.)-কে দেখেছি, তিনি নামাজে লোকদের ইমামতি করছেন, আর তাঁর নাতনীকে তিনি তাঁর কাধের উপর রেখে ইমামতি করতে দেখেছি। তিনি যখন রুকুতে যাচ্ছেন তখন তাকে (কাঁধ থেকে) নামিয়ে রাখছেন, আবার সেজদা থেকে উঠার পড় পুনরায় কাঁধে উঠিয়ে নিচ্ছেন। (মুসলিম, হাদিস নং: ১১০০)

উক্ত হাদিসে আমরা স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছি যে, রাসুল (সা.) তাঁর নাতনীকে কাধের উপর রেখে ইমামতি করেছেন। শিশুদের রাসুল (সা.) সবচেয়ে বেশি ভালবাসতেন।

এই হাদিসটি আরেক জায়গায় এসেছে, আমর ইবনে সুলাইম জুরাকি (রহ.) থেকে বর্ণিত, তিনি আবু কাতাদা (রা.)-কে বলতে শুনেছেন যে, আমরা মসজিদে উপবিষ্ট ছিলাম, হঠাৎ রাসুলুল্লাহ (সা.) আবুল আস ইবনে রবির ছোট কন্যা উমামাকে কোলে নিয়ে আমাদের নিকট আসলেন। তিনি ছোট বালিকা হওয়ায় রাসুলুল্লাহ (সা.) তাঁকে বহন করেই বেড়াতেন। রাসুলুল্লাহ (সা.) নামাজ আদায় করলেন তাঁকে কাঁধে রেখেই। তিনি রুকু করার সময় তাঁকে রেখে দিতেন। দাঁড়ালে আবার কাঁধে তুলে নিতেন। এমনিভাবে তিনি তাঁর নামাজ শেষ করেন। (নাসায়ি, হাদিস নং: ৭১১)ছবি: সংগৃহীত

মানুষ ছোটবেলায় যে অভ্যাসে গড়ে ওঠে সারাজীবন সেটা তার ভেতর বিদ্যমান থাকে। যেসব শিশুরা মসজিদে সবার আগে আসে, জামাতে নামাজ পড়ার জন্য তাদের প্রবল আগ্রহ থাকে। অনেক প্রাপ্তবয়স্ক মানুষেরও এমন আগ্রহ থাকে না।

আমরা যদি শিশুদের দূরে ঠেলে দেই, তাহলে মসজিদে আসাটা তাদের কাছে ভয়ের কারণ হয়ে দাঁড়াবে। ফলে এক সময় বাচ্চারা বড় হলেও মসজিদে যেতে চাইবে না। আর এ কারণে আমরা গুনাহগারও হতে পারি।


ইসলাম বিভাগে লেখা পাঠাতে মেইল করুন: [email protected]

বাংলাদেশ সময়: ০৮০৯ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৯, ২০১৮

এমএমইউ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।