ঢাকা, শুক্রবার, ৬ বৈশাখ ১৪৩১, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

‘মানুষটার মুখ শেষবার দেখে জীবন সার্থক করতে চাই’

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮২৮ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৮, ২০১৮
‘মানুষটার মুখ শেষবার দেখে জীবন সার্থক করতে চাই’ প্রিয় শিল্পী আইয়ুব বাচ্চুর মরদেহ দেখতে ভক্তদের ভিড় | ছবি: রাজীন চৌধুরী

ঢাকা: ‘আসলে কেউ সুখী নয়’ তাই ‘জীবনের সব আয়োজন’ শেষ করে ‘রুপালি গিটার’ ফেলে না ফেরার দেশে চলে গেলেন বাংলা ব্যান্ড সঙ্গীতের কিবদন্তি আইয়ুব বাচ্চু।

বৃহস্পতিবার (১৮ অক্টোবর) রাজধানীর স্কয়ার হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন জনপ্রিয় ব্যান্ডদল এলআরবির এই লিড গিটারিস্ট ও ভোকাল। সকালে নিজের বাসায় অসুস্থ হয়ে পড়ার পর হাসপাতালে নেওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

আইয়ুব বাচ্চুর মৃত্যুর খবরে স্কয়ার হাসপাতালের সামনে ভিড় করেছেন তার অগণিত ভক্ত ও শুভাকাঙ্ক্ষীসহ মিডিয়া জগতের তারকারা। তাদের আহাজারিতেই যেন কেদে উঠছে স্কয়ার হাসপাতাল প্রাঙ্গণ।  

দেশের বরেণ্য শিল্পী ও কলাকুশলিরা হাসপাতালের ভেতরে অবস্থান করতে পারলেও অসংখ্য ভক্ত ও আইয়ুব বাচ্চুর গিটারের শিক্ষার্থীরা ভিড় করেছেন হাসপাতালের সামনের রাস্তায়। যে কারণে কিছুটা বিপাকে পড়েছেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ও কর্তব্যরত ট্রাফিক পুলিশ।
স্কয়ার হাসপাতালের সামনে আইয়ুব বাচ্চুর অগণিত ভক্তের ভিড় | ছবি: রাজীন চৌধুরীহাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ভক্তদের দাঁড়াতে দিচ্ছে না হাসপাতাল প্রাঙ্গণে। তাদের বক্তব্য, এখানে সব সময় মুমূর্ষু রোগীরা আসেন। তাই এখানে ভিড় বা কোলাহল মানে অন্যান্য রোগীদের ক্ষতি। আবার আইয়ুব বাচ্চুর মতো কিংবদন্তির জন্য সবাই আসবে সেটাই স্বাভাবিক।

আইয়ুব বাচ্চুর মৃত্যুতে শোকার্ত তারই ছাত্র রবিন বাংলানিউজকে বলেন, আমরা এখনও মেনে নিতে পারছি না। ঠিক বিশ্বাস হচ্ছে না। আমি জানি না বাংলাদেশের মিউজিক ইন্ডাস্ট্রিতে এই ক্ষতি কিভাবে পুষিয়ে নেয়া যাবে? আমি নিশ্চিত এ বিয়োগ পূরণ করা সম্ভব হবে না।  

বলতে বলতেই কেঁদে ফেলেন আইয়ুব বাচ্চুর ওই ভক্ত ও শিক্ষার্থী।

রফিক নামে আরেক গিটার শিক্ষার্থী বলেন, তাকে কখনও সেভাবে অসুস্থ দেখি নাই। মানে অসুস্থ থাকলেও কাউকে বুঝতে দিতেন না। আমরা জানতাম তার ফুসফুসের সমস্যা আছে। কিন্তু এতটা প্রকট তা জানতাম না। এখন আমরা গিটারের জাদু দেখবো কিভাবে?
আইয়ুব বাচ্চুর মৃত্যুর খবরে স্কয়ার হাসপাতালে সমবেত হয়েছেন মিডিয়া জগতের অনেক তারকা | ছবি: রাজীন চৌধুরীহাসপাতালের সামনে ভারাক্রান্ত মনে দাঁড়িয়েছিলেন জনপ্রিয় রেডিও জকি আরজে অপু। স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে বাংলানিউজকে তিনি বলেন, একবার এক একক সঙ্গীত প্রতিযোগিতায় আমরা কয়েকজন আমাদের এক বড় ভাইয়ের জন্য সেখানে অংশগ্রহণ করেছিলাম। পারফরম্যান্স শেষে বাচ্চু ভাই আমাদের বললেন, এটা তো একক পরিবেশনা না, এটা ব্যান্ড। এরপর তার কারণেই ‘সময়’ নামে একটা ব্যান্ডের সৃষ্টি হয়। এমনকি এই ব্যান্ডের পারফর্মও তার রেফারেন্সে হতো। বাচ্চু ভাইয়ের মতো মিউজিক বোঝা সঙ্গীতশিল্পী দেশে আর নেই আমার মতে। তার চলে যাওয়ার ক্ষতি আমরা পূরণ করতে পারবো না।

হাসপাতালের সামনে দিয়ে যত পথচারী যাওয়া-আসা করছেন তাদের সবাই যেন দুঃখের ভাগীদার হয়ে যাচ্ছেন। অনেকে আইয়ুব বাচ্চুর মৃত্যুর খবর পেয়ে একবার এই কিংবদন্তির মুখদর্শন করতে দাঁড়িয়ে পড়ছেন স্কয়ার হাসপাতালের সামনে।  

তেমনই একাধিক ভক্ত বাংলানিউজকে বলেন, তার গান ছাড়া এখনও কনসার্ট জমে না। তার গান আমরা অনুভব করতে পারি। মানুষটার মুখ শেষবার দেখে জীবনটা সার্থক করতে চাই।

বাংলাদেশ সময়: ১৪১৮ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৮, ২০১৮
এমএএম/এমজেএফ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।