ঢাকা, শুক্রবার, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

দৃষ্টান্তমূলক শাস্তিতে নৃশংসতার পুনরাবৃত্তি রোধ সম্ভব

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০২০৫ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৮, ২০১৮
দৃষ্টান্তমূলক শাস্তিতে নৃশংসতার পুনরাবৃত্তি রোধ সম্ভব ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা। ছবি: বাংলানিউজ আর্কাইভ

ঢাকা: আসামিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়ার মাধ্যমে নৃশংস ও ন্যাক্কারজনক ঘটনার (২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা) পুনরাবৃত্তি রোধ করা সম্ভব বলে মনে করেন আদালত।

পুরান ঢাকার নাজিমুদ্দিন রোডের পুরনো কেন্দ্রীয় কারাগারের পাশে অবস্থিত বিশেষ এজলাসে ঢাকার ১ নম্বর দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের বিচারক শাহেদ নূর উদ্দিন ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলার রায়ের পর্যবেক্ষণে এমন মত দেন।

রায়ে সাবেক স্বরাষ্ট্রপ্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবরসহ ১৯ জনকে ফাঁসি  এবং বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ ১৯ জনকে যাবজ্জীবন দণ্ড দেন।

বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দেওয়া হয় আরও ১১ জনকে।

পর্যবেক্ষণে বলা হয়, আদালত চায় না সিলেটে হযরত শাহজালালের (রহ.) দরগা শরিফের ঘটনা, সাবেক অর্থমন্ত্রী এসএম কিবরিয়ার উপর নৃশংস হামলা, রমনা বটমূলে সংঘটিত বোমা হামলা এবং এ মামলা মোকদ্দমার ঘটনায় তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেত্রী ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ওপর বর্বরোচিত গ্রেনেড হামলার পুনরাবৃত্তি।

‘অত্র আদালত সাক্ষীর কাঠগড়ায় গ্রেনেড হামলায় গুরুতর আহত মাকে দুর্বিষহ কষ্ট পেয়ে মৃত্যুবরণ প্রত্যক্ষ করা নাজমুল হাসান পাপন ও তার স্ত্রী রোকসানা হাসানের কষ্ট প্রত্যক্ষ করেছেন। .... আদালত গভীরভাবে পর্যালোচনা করেছেন সাক্ষী সাহারা খাতুন, কাজী জাফরুল্লাহ, সুরঞ্জিত সেন গুপ্ত, আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাসিমের আদালতে প্রদত্ত সাক্ষ্য ঘটনার তারিখে ঘটনাস্থলে যে মারাত্মক ও ভয়াবহ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছিল সে মর্মে বক্তব্য। ’

‘আদালত গভীরভাবে তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেত্রীর কানের চিকিৎসক অধ্যাপক প্রাণ গোপাল দত্তের জবানবন্দি পর্যালোচনা করেন। ঘটনার সময় ভয়াবহ গ্রেনেড হামলার ফলে তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেত্রীর ডান কানে গুরুতর জখম হয়। আসামিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়ার মাধ্যমে উল্লেখিত নৃশংস ও ন্যক্কারজনক ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধ করা সম্ভব বলে অত্র আদালত মনে করেন। ’

১০ অক্টোবর দেওয়া রায়ে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিদের মধ্যে ১৭ জন কারাগারে আছেন- সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর, উপমন্ত্রী আবদুস সালাম পিন্টু, ডিজিএফআইয়ের মহাপরিচালক মেজর জেনারেল (অব.) রেজ্জাকুল হায়দার চৌধুরী, এনএসআই মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার (অব.) আবদুর রহিম, মাওলানা শেখ আবদুস সালাম, মো. আবদুল মাজেদ ভাট ওরফে মো. ইউসুফ ভাট, আবদুল মালেক ওরফে গোলাম মোহাম্মদ ওরফে জিএম, মাওলানা শওকত ওসমান ওরফে শেখ ফরিদ, মহিবুল্লাহ ওরফে মফিজুর রহমান ওরফে অভি, মাওলানা আবু সাঈদ ওরফে ডা. জাফর, আবুল কালাম আজাদ ওরফে বুলবুল, মো. জাহাঙ্গীর আলম, হাফেজ মাওলানা আবু তাহের, হোসাইন আহমেদ তামিম, মঈন উদ্দিন শেখ ওরফে মুফতি মঈন ওরফে খাজা ওরফে আবু জানদাল ওরফে মাসুম বিল্লাহ, মো. রফিকুল ইসলাম ওরফে সবুজ ওরফে খালিদ সাইফুল্লাহ ওরফে শামিম ওরফে রাশেদ ও মো. উজ্জ্বল ওরফে রতন।

আর পলাতক দু’জন হলেন- আবদুস সালাম পিন্টুর ভাই ও জঙ্গি নেতা মাওলানা মো. তাজউদ্দীন এবং হানিফ পরিবহনের মালিক মো. হানিফ।

আদালতের রায়ে যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্তরা হলেন- শাহাদাৎ উল্লাহ ওরফে জুয়েল, মাওলানা আবদুর রউফ ওরফের আবু ওমর আবু হোমাইরা ওরফে পীরসাহেব, মাওলানা সাব্বির আহমদ ওরফে আবদুল হান্নান সাব্বির, আরিফ হাসান ওরফে সুজন ওরফে আবদুর রাজ্জাক, হাফেজ মাওলানা ইয়াহিয়া, আবু বকর ওরফে হাফে সেলিম হাওলাদার , মো. আরিফুল ইসলাম ওরফে আরিফ, মহিবুল মোত্তাকিন ওরফে মুত্তাকিন (পলাতক), আনিসুল মুরছালিন ওরফে মুরছালিন (পলাতক), মো. খলিল (পলাতক), জাহাঙ্গীর আলম বদর ওরফে ওস্তাদ জাহাঙ্গীর (পলাতক), মো. ইকবাল (পলাতক), লিটন ওরফে মাওলানা লিটন (পলাতক), তারেক রহমান ওরফে তারেক জিয়া (পলাতক), হারিছ চৌধুরী (পলাতক), কাজী শাহ মোফাজ্জল হোসেন কায়কোবাদ (পলাতক), মুফতি শফিকুর রহমান (পলাতক), মুফতি আবদুল হাই (পলাতক) এবং রাতুল আহম্মেদ বাবু ওরফে বাবু ওরফে রাতুল বাবু (পলাতক)।

২০০৪ সালের ২১ আগস্ট আওয়ামী লীগের জনসভায় গ্রেনেড হামলায় ২৪ জন মারা যান। আহত হন কয়েক শ’ নেতা-কর্মী। ওই দিন বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভাগ্যক্রমে বেঁচে যান, তবে তার কান ক্ষতিগ্রস্ত হয়। শরীরে এখনও সেই ভয়াল ক্ষত নিয়ে দিনাতিপাত করছেন অনেকে।  

বাংলাদেশ সময়: ২২০২ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৭, ২০১৮
ইএস/এএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।