ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ৫ বৈশাখ ১৪৩১, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

সৌদি উদ্যোক্তাদের বাংলাদেশে বিনিয়োগের আহ্বান 

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২৩১৩ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৭, ২০১৮
সৌদি উদ্যোক্তাদের বাংলাদেশে বিনিয়োগের আহ্বান  প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সৌদি আরবের

ঢাকা: সৌদি আরবের উদ্যোক্তোদের বাংলাদেশে বিনিয়োগের আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, পারস্পরিক স্বার্থে বাংলাদেশে আপনাদের ব্যবসা, প্রযুক্তি ও উদ্ভাবনী চিন্তা নিয়ে আসার আমন্ত্রণ জানাচ্ছি। এ ব্যাপারে সরকার সব ধরনের সহযোগিতা দেবে। 

বুধবার (১৭ অক্টোবর) সকালে বাদশাহ সৌদ রাজপ্রাসাদে সৌদি আরবের ব্যবসায়ীদের সংগঠন সৌদি চেম্বার ও রিয়াদ চেম্বার অব কমার্সের নেতাদের সঙ্গে এক বৈঠকে তিনি এ আমন্ত্রণ জানান।  

সৌদি বাদশাহ ও দুই পবিত্র মসজিদের খাদেম সালমান বিন আব্দুল আজিজ আল সৌদের আমন্ত্রণে চারদিনের সরকারি সফরে মঙ্গলবার (১৬ অক্টোবর) রিয়াদ গেছেন শেখ হাসিনা।

 

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশ সৌদি উদ্যোক্তাদের দেশের বিভিন্ন উদীয়মান খাত বিশেষ করে পুঁজিবাজার, বিদ্যুৎ, জ্বালানি, টেলিকমিউনিকেশন এবং তথ্য প্রযুক্তি, পেট্রোকেমিক্যাল, ওষুধ শিল্প, জাহাজ নির্মাণ এবং কৃষি প্রক্রিয়াজাতকরণ খাতে বিনিয়োগের আমন্ত্রণ জানাচ্ছে।

‘আমি আপনাদের হালকা প্রকৌশল শিল্প, ব্লু ইকোনমি, গবেষণা এবং উন্নয়ন ও প্রযুক্তি উদ্ভাবন, পানি এবং অন্যান্য ভৌত অবকাঠামোগত প্রকল্প, সেবাখাত যেমন ব্যাংকিং এবং অর্থনীতি, লজিস্টিক এবং মানব সম্পদ খাতেও বিনিয়োগের আমন্ত্রণ জানাই। ’

এ সময় দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশে যে সবচেয়ে ভালো বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ বজায় রয়েছে তাও উল্লেখ করেন তিনি ।  

বিনিয়োগকারীদের জন্য সরকারের আকর্ষণীয় প্রণোদণার সুযোগ তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশে বিনিয়োগ করলে আইন দ্বারা সুরক্ষিত সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগ (এফডিআই), ট্যাক্স হলিডে, যন্ত্রাংশ আমদানিতে স্বল্প শুল্ক প্রদান, বিনা শুল্কে শিল্পের কাঁচামাল আমদানির সুযোগ, রেমিট্যান্স অন রয়্যালিটি, শতভাগ ফরেন ইক্যুয়িটির নিশ্চয়তা ও লাভ এবং পুঁজিসহ বিনা বাধায় চলে যাবার সুবিধা রয়েছে।

অন্যান্য সুবিধার উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমাদের রয়েছে প্রতিযোগিতামূলক বেতন-ভাতায় সহজে প্রশিক্ষণযোগ্য নিবেদিতপ্রাণ জনশক্তি, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান স্থাপনে স্বল্প ব্যয় এবং বৃহৎ শুল্কমুক্ত কোটামুক্ত বাজারে প্রবেশ সুবিধা। যার মধ্যে রয়েছে- ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ), অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, ভারত, জাপান ও নিউজিল্যান্ডের বাজারে প্রবেশ সুবিধা।

শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশে বিদ্যুৎ ও পানি প্রাপ্তির সুবিধাও রয়েছে। রয়েছে ভালো ক্রেডিট রেটিং, স্বল্প ঝুঁকি এবং দ্রুত প্রযুক্তির গ্রহনযোগ্যতার সুবিধা। এর সবগুলো একত্রে বাংলাদেশে ব্যবসায়ীদের বিনিয়োগের সর্বোচ্চ মুনাফা প্রাপ্তির সুবিধাই নিশ্চিত করেছে।

বাংলাদেশের কৌশলগত ভৌগলিক অবস্থানের কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই দেশের ভৌগলিক অবস্থান দেশটিকে আঞ্চলিক যোগাযোগ, বিদেশি বিনিয়োগ ও গ্লোবাল আউট সোর্সিয়ের একটি কেন্দ্রে পরিণত করেছে।

বর্তমান সরকারের দেশে ১০০টি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার প্রসঙ্গ উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, দেশে রফতানি প্রক্রিয়াকরণ এলাকাগুলো (ইপিজেড) শতভাগ রফতানি নির্ভর। সরকারি ও বেসরকারি খাতে বিনিয়োগকে টেকসই করার জন্যই সরকার এই শিল্পাঞ্চলগুলো গড়ে তুলেছে।

এই শিল্পাঞ্চলগুলোকে আধুনিক প্রযুক্তি নির্ভর করে গড়ে তোলার জন্য দেশে প্রায় দুই ডজনেরও বেশি হাইটেক পার্ক গড়ে তোলার কথাও উল্লেখ করেন শেখ হাসিনা।  

প্রধানমন্ত্রী জানান, তার সরকার দেশে ১০টি প্রবৃদ্ধি ও কর্মসংস্থান সৃজনের মেগা প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে এবং দুই অংকের টেকসই প্রবৃদ্ধি অর্জনের জন্য বিভিন্ন বৈচিত্রপূর্ণ এলাকায় যোগাযোগ, হাইটেক, পর্যটন, স্বাস্থ্য এবং শিক্ষা খাতে এ ধরনের আরো প্রকল্প গ্রহণ করেছে।

 ‘আমরা সৌদি আরবের বিনিয়োগকারীদের জন্য একটি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলে দু’হাজার একর জমি বরাদ্দ করেছি, যেগুলো বিনিয়োগকারীদের নিজস্ব চাহিদা মোতাবেক তারা ব্যবহার করতে পারবেন,’ যোগ করেন তিনি।  

শেখ হাসিনা বলেন, ‘বাংলাদেশ ও সৌদি আরবের ব্যবসায়িক সম্পর্কের শুরু সেই সপ্তম শতকে, যখন আরবের ব্যবসায়ীরা প্রথমবারের মতো আমাদের বন্দরনগরী চট্টগ্রামে আসেন। ’

দু’টি দেশের মধ্যে বিদ্যমান ব্যবসা-বাণিজ্যের পরিমাণ সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বেড়েছে বলেও উল্লেখ করেন  প্রধানমন্ত্রী।  

তিনি বলেন, ২০১৭-১৮ অর্থবছরে দুই দেশের মধ্যে   এক বিলিয়ন মার্কিন ডলারে গিয়ে দাঁড়িয়েছে। কিন্তু আমরা এখনও ব্যবসা-বাণিজ্যের সুযোগগুলোর পুরোপুরি সদ্যব্যবহার করতে পারছি না।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশে এখন সৌদি বিনিয়োগের পরিমাণ ২৫টি প্রকল্পে প্রায় ৫ বিলিয়ন ডলার। যার প্রাথমিক লক্ষ্য হচ্ছে-কৃষিভিত্তিক শিল্প, খাদ্য এবং প্রক্রিয়াজাতকৃত খাবার, বস্ত্র এবং তৈরি পোষাক, চামড়া, প্রেট্রো কেমিক্যাল, প্রকৌশল এবং সেবা খাত।

ক্রয় সক্ষমতার বিচারে বাংলাদেশ বর্তমানে বিশ্বের ৩২তম বৃহৎ অর্থনীতির দেশ উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আমরা আমাদের দারিদ্র্যসীমা ৪১ দশমিক ৫ শতাংশ থেকে ২১ দশমিক ৮ শতাংশে নামিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছি এবং আমাদের অর্থনীতিও বিশ্বের ১০টি দ্রুত বর্ধনশীল অর্থনীতির একটি। ’

‘আমরা আগামী বছর ৮ দশমিক ২৫ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জনের প্রত্যাশা করছি। ’

বর্তমান সরকারের আমলে বিদ্যুৎখাতের উন্নয়নের চিত্র তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তার সরকার মাত্র ৩ হাজার ২শ মেগাওয়াট থেকে দেশের বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা এখন ২০ হাজার মেগাওয়াটে উন্নীত করেছে। নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ ও টেকসই বিদ্যুৎ ব্যবস্থা গড়ে তুলতে সরকার কয়লা ভিত্তিক সুপার ক্রিটিক্যাল বিদ্যুৎ কেন্দ্রও নির্মাণ করছে। বর্তমানে দেশের ৯০ শতাংশ জনগণ এখন বিদ্যুৎ সুবিধার আওতায় এসেছে।  

বাংলাদেশ সময়: ১৮০১ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৭, ২০১৮
এমএ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
welcome-ad