ঢাকা, শনিবার, ৭ বৈশাখ ১৪৩১, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

সম্প্রচার আইনে ২৪ অপরাধ, সর্বোচ্চ সাজা ৭ বছর

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯১০ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৫, ২০১৮
সম্প্রচার আইনে ২৪ অপরাধ, সর্বোচ্চ সাজা ৭ বছর সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদের বৈঠক ছবি: পিআইডি

ঢাকা: সম্প্রচার মিডিয়া তথা রেডিও, টেলিভিশন ও অনলাইন পত্রিকায় অসত্য ও বিভ্রান্তিকর তথ্য প্রচার, মুক্তিযুদ্ধের তথ্য বিকৃতি বা ভুল তথ্য প্রচারের মতো ২৪ অপরাধের শাস্তির বিধান রেখে ‘সম্প্রচার আইন, ২০১৮’ এর খসড়ার নীতিগত অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা।

এ আইন লঙ্ঘন করলে সর্বোচ্চ সাত বছরের কারাদণ্ড বা অনধিক পাঁচ কোটি টাকা জরিমানা করা হবে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে সোমবার (১৫ অক্টোবর) সচিবালয়ে অনুষ্ঠিত মন্ত্রিসভার নিয়মিত বৈঠকে গণমাধ্যমের জন্য এ আইনের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।

বৈঠক শেষে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম ব্রিফিংয়ে সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান।

আইনটি নতুন জানিয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, স্টেক হোল্ডারদের সাথে অনেক আলোচনা করে আইনটি তৈরি করা হয়েছে। অনলাইন গণমাধ্যমের সংজ্ঞা, ক্যাবল অপারেটর, ক্যাবল টেলিভিশন চ্যানেল, ক্যাবল টেলিভিশন নেটওয়ার্কের সংজ্ঞা, সম্প্রচারের সংজ্ঞা উল্লেখ করা আছে।

কোন সম্প্রচারকারী বা অনলাইন গণমাধ্যম পত্রিকা কর্তৃক ২৪টির মতো অপরাধ আইনে উল্লেখ রয়েছে বলে জানান মন্ত্রিপরিষদ সচিব।

“আলোচনা অনুষ্ঠানে বিভ্রান্তিকর ও অসত্য তথ্য উপস্থাপন ও প্রচার, বিভিন্ন জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ অনুষ্ঠান তথা রাষ্ট্র ও সরকার প্রধানের ভাষণ, জরুরি আবহাওয়া বার্তার নির্দেশ অমান্য করা, মহান মুক্তিযুদ্ধের আদর্শ ও চেতনা, রাষ্ট্র পরিচালনার মূল নীতি এবং রাষ্ট্রের আদর্শ পরিপন্থি অনুষ্ঠান বা বিজ্ঞপ্তি প্রচার। ”

এসব অপরাধের জন্য অপরাধীর সাজার কথা উল্লেখ করে শফিউল আলম বলেন, সম্প্রচারকারীর অনধিক তিন বছরের কারাদণ্ড বা অনধিক পাঁচ কোটি টাকা অর্থ দণ্ড অথবা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবে। অপরাধ সংগঠন চলমান থাকলে প্রতি দিবসের জন্য এক লাখ টাকা জরিমানা। এটা টেলিভিশন, অনলাইন বা রেডিও হতে পারে।

“আর অনেকগুলো অযোগ্যতা সত্ত্বেও সম্প্রচার চালিয়ে গেলে যেমন, আদালত কর্তৃক বিকৃত মস্তিষ্ক, দুই বছরের অধিক কারাদণ্ড হওয়া, লাইসেন্স বাতিলের পাঁচ বছর পার না যাওয়া, দেউলিয়া হওয়া, ঋণ খেলাপি হওয়া- এগুলোর পরও যদি কেউ চালিয়ে যান তাহলে শাস্তি হলো অনধিক সাত বছরের কারাদণ্ড বা পাঁচ কোটি টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ড। এটা চলমান থাকলে দৈনিক এক লাখ টাকা জরিমানা। ”

কমিশনের কাছে নালিশ করার বিধান রাখা হয়েছে, অনধিক ৩০ দিনের মধ্যে নিষ্পত্তি করা হবে। শাস্তির জন্য সরকারের কাছে আপিল করা যাবে।

সম্প্রচার বা অনলাইন গণমাধ্যম কার্যক্রম পরিচালনাকারী প্রত্যেক অপারেটর বা তার কার্যক্রম সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ভোক্তাদের অসুবিধা বা নালিশ সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহের জন্য উপস্থাপন করতে পারবেন। অপরাধের ধরন জামিনযোগ্য বলে জানান মন্ত্রিপরষিদ সচিব।  

পত্রিকাগুলোর অনলাইন ভার্সনের ক্ষেত্রে এই আইন প্রযোজ্য হবে কি না জানতে চাইলে মন্ত্রিপরষিদ সচিব বলেন, নতুন করে কিছু বলা নাই। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের সাথে এর কোনো কানেকশন নেই।

আইনে ৭ সদস্য বিশিষ্ট একটি কমিশন গঠনের কথা বলা হয়েছে জানিয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, সার্চ কমিটির মাধ্যমে কমিশন গঠিত হবে। সার্চ কমিটির সুপারিশ রাষ্ট্রপতির কাছে পেশ করবে। রাষ্ট্রপতি একজন চেয়ারম্যানসহ কমিশন গঠন করে দেবেন। তার মধ্যে একজন নারী কমিশনারও থাকবেন।  
কমিশনের সদস্যদের যোগ্যতা হলো, বাংলাদেশের নাগরিক না হলে, জাতীয় সংসদ সদস্য বা স্থানীয় সরকারের যে কোন স্তরের জনপ্রতিনিধির জন্য নির্ধারিত কোন পদে নির্বাচিত বা নিবৃত হলে, কোন ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানে ঋণ খেলাপি বা দেউলিয়া বা অপ্রকৃতস্থ হলে, নৈতিক স্খলনজনিত কারণে দুই বছরের কারাদণ্ডে দণ্ডিত হলে, প্রজাতন্ত্রের কোন লাভবান পদে থাকলে, কোন সম্প্রচার বা গণমাধ্যম শিল্প সংক্রান্ত কোন ব্যবসা বা প্রতিষ্ঠানের সাথে সম্পৃক্ত থাকলে এবং কোন সম্প্রচার প্রতিষ্ঠানে চাকরিরত থাকলে অযোগ্য বলে বিবেচিত হবেন।

কমিশানারের যোগ্যতা বলতে সংশ্লিষ্ট ক্ষেত্রে ১৫ বছরের অভিজ্ঞতা থাকতে হবে। সম্প্রচার, গণমাধ্যম শিক্ষা, আইন, জনপ্রশাসন ব্যবস্থাপনা, ভোক্তা বিষয়াদি বা ডিজিটাল প্রযুক্তির ক্ষেত্রে বিশেষ জ্ঞানের ১৫ বছরের অভিজ্ঞতা।

চেয়ারম্যান এবং কমিশনারের পদের মেয়াদ তাদের নিয়োগের পাঁচ বছর বা তারা ৭০ বছর পর্যন্ত কাজ করতে পারবেন। আর শারীরিক বা মানসিকভাবে দায়িত্ব পালনে অসমর্থ হলে, রাষ্ট্রবিরোধী কোন কাজে লিপ্ত থাকলে তাকে অপসারণ করা যাবে। কমিশনের তিনজনের উপস্থিতিতে কোরাম হবে। সভা করার জন্য কোন সময় দেওয়া নাই তবে চাইলে সাত দিনের মধ্যে সভা আহ্বান করা যাবে।

কমিশনের কাজ হলো, সম্প্রচার ব্যবস্থাকে শক্তিশালী ও গতিশীল করা এবং সম্প্রচার মাধ্যমের মানোন্নয়নে প্রয়োজনীয় কার্যক্রম গ্রহণ করা, সম্প্রচার মাধ্যমে মত প্রকাশ এবং সম্প্রচার মাধ্যমে স্বাধীনতার ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক রীতি ও মানদণ্ড অনুসরণ, সম্প্রচার ক্ষেত্রে প্রবৃদ্ধি অর্জনের ক্ষেত্রে সম্প্রচার কার্যক্রমের পরিরিচালনার প্রতিযোগিতা ও দক্ষতা বৃদ্ধির পথ সুগম করা, নতুন লাইসেন্স ও নিবন্ধন প্রদানের জন্য নির্দেশনা প্রদান, টেলিভিশন, বেতার, ইন্টারনেট ইত্যাদি প্রচার মাধ্যমে যথা ডিজিটাল বা কোন প্রকার সম্প্রচার মাধ্যম সম্প্রচার যন্ত্রপাতির জন্য সম্প্রচারকারীর অনুকূলে লাইসেন্স ইস্যুর জন্য সুপারিশ করা। অনলাইন গণমাধ্যমের নিবন্ধন দেওয়ার ক্ষেত্রে কমিশনের একক কর্তৃত্ব থাকবে।

লাইসেন্স প্রদানে সুপারিশ করবে কমিশন এবং তা নবায়ন করারও বিধান রাখা হয়েছে আইনে।

অনলাইন গণমাধ্যম হলো, বাংলাদেশের ভূ-খণ্ড হতে বাংলা, ইংরেজি বা অন্য কোন ভাষায় প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে ইন্টারনেটভিত্তিক রেডিও, টেলিভিশন ও সংবাদপত্র বা ইন্টারনেট ব্যবহারের মাধ্যমে সম্প্রচারের উদ্দেশ্যে ব্যবহৃত স্থির ও চলমান চিত্র, ধ্বনি ও লেখা বা মাল্টি মিডিয়ায় অন্য কোনরূপে উপস্থাপিত তথ্য প্রকাশ বা সম্প্রচারকারী বাংলাদেশের নাগরিক বা বাংলাদেশে নিবন্ধিত সংস্থা বা প্রতিষ্ঠান।

কনটেন্ট সম্পর্কে বলা হয়েছে, আন্তঃসম্প্রচারের জন্য যে কোন অডিও, ফ্যাক্স, চিত্র বা নকশা স্থির বা চলমান, অন্যান্য অডিও ভিজ্যুয়াল উপস্থাপনা সংকেত বা যে কোন ধরনের বার্তা বা যে কোন সংমিশ্রণ যা ইলেকট্রনিক পদ্ধতিতে সৃষ্ট প্রক্রিয়াজাত সংরক্ষিত বা কমিউনিকেটেড হতে পারে।

বাংলাদেশ সময়: ১৫০৫ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৫, ২০১৮/আপডেট: ১৭১০ ঘণ্টা
এমআইএইচ/এমজেএফ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।