ঢাকা, শুক্রবার, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৮ রমজান ১৪৪৫

জাতীয়

প্রতিশ্রুতির বরখেলাপ করেছেন তিনমন্ত্রী: সম্পাদক পরিষদ

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২২৫১ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৩, ২০১৮
প্রতিশ্রুতির বরখেলাপ করেছেন তিনমন্ত্রী: সম্পাদক পরিষদ সংবাদ সম্মেলনে সম্পাদক পরিষদের নেতারা। ছবি: শাকিল/বাংলানিউজ

ঢাকা: ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন নিয়ে সরকারের তিনজন মন্ত্রী যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন তা বরখেলাপ করেছেন মন্তব্য করেছেন সম্পাদক পরিষদ। 

শনিবার (১৩ অক্টোবর) জাতীয় প্রেসক্লাবে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন নিয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে সম্পাদক পরিষদের সদস্য শ্যামল দত্ত এসব কথা বলেন।  
 
তিনি বলেন, মুক্ত সংবাদমাধ্যম, বাক স্বাধীনতা ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতার পরিপন্থি কালাকানুন ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন পাস করায়  আমরা হতাশ, ক্ষুব্ধ ও মর্মাহত।

এ আইনের ৮, ২১, ২৫, ২৮, ২৯, ৩১, ৩২, ৪৩ ও ৫৩ ধারাগুলো স্বাধীন সাংবাদিকতা ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতাকে ভীষণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করবে।
 
তাই বর্তমান সংসদের শেষ অধিবেশনে এই ধারাগুলো সংশোধনের দাবি জানাচ্ছে সম্পাদক পরিষদ। এর আগে  ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন পাসের আগে সম্পাদক পরিষদসহ স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে আলোচনায় বসেন সরকারের তিনমন্ত্রী। তারা বিতর্কিত ধারাগুলো বাদ দিয়ে একটি যুগোপযোগী আইনের কথা জানিয়েছিলেন তাদের। কিন্তু আইন পাসের পর দেখা গেছে, বিতর্কিত ধারা রয়েই গেছে, যেগুলো মুক্ত সাংবাদিকতার পথে বাধা।  

এ বিষয়ে শ্যামল দত্ত বলেন, আমরা মনে করি, এটি প্রতিশ্রুতির বরখেলাপ। সম্পাদক পরিষদ স্থগিত মানববন্ধনটি ১৫ অক্টোবর পালন করবে।  

এ সময় এই আইন সংশোধনে বেশ কয়েকটি দাবি তুলে ধরে সম্পাদক পরিষদ। এগুলো হচ্ছে—
 
>> সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা ও বাক্স্বাধীনতা সুরক্ষার লক্ষ্যে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ৮, ২১, ২৫, ২৮, ২৯, ৩১, ৩২, ৪৩ ও ৫৩ ধারা অবশ্যই যথাযথভাবে সংশোধন করতে হবে।  
 
>> এসব সংশোধনী বর্তমান সংসদের শেষ অধিবেশনে আনতে হবে।
 
>> পুলিশ বা অন্য কোনো সংস্থার মাধ্যমে কোনো সংবাদমাধ্যম প্রতিষ্ঠানে তল্লাশি চালানোর ক্ষেত্রে তাদের শুধু নির্দিষ্ট বিষয়বস্তু আটকে দেওয়ার অনুমতি দেওয়া যাবে; কিন্তু কোনো কম্পিউটার ব্যবস্থা বন্ধ করার অনুমতি দেওয়া যাবে না। তারা শুধু তখনই প্রকাশের বিষয়বস্তু আটকাতে পারবে, যখন সংশ্লিষ্ট সংবাদপ্রতিষ্ঠানের সম্পাদকের সঙ্গে আলোচনা করে কেন ওই বিষয়বস্তু আটকে দেওয়া উচিত, সে বিষয়ে যৌক্তিকতা প্রমাণ করতে পারবে।
 
>> কোনো সংবাদমাধ্যম প্রতিষ্ঠানের কোনো কমপিউটারব্যবস্থা আটকে দেওয়া বা জব্দ করার ক্ষেত্রে অবশ্যই উচ্চ আদালতের আগাম নির্দেশ নিতে হবে।
 
>> সংবাদমাধ্যমের পেশাজীবীদের সাংবাদিকতার দায়িত্বের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট অপরাধের ক্ষেত্রে প্রথমেই আদালতে হাজির হওয়ার জন্য তাঁদের বিরুদ্ধে সমন জারি করতে হবে (যেমনটা বর্তমান আইনে আছে) এবং সংবাদমাধ্যমের পেশাজীবীদের কোনো অবস্থাতেই পরোয়ানা ছাড়া ও যথাযথ আইনি প্রক্রিয়া অনুসরণ ছাড়া আটক বা গ্রেপ্তার করা যাবে না।
 
>> সংবাদমাধ্যমের পেশাজীবীর দ্বারা সংঘটিত অপরাধের ক্ষেত্রে তাঁর বিরুদ্ধে মামলা দায়েরের গ্রহণযোগ্যতা আছে কি না, তার প্রাথমিক তদন্ত প্রেস কাউন্সিলের মাধ্যমে করা উচিত। এই লক্ষ্যে প্রেস কাউন্সিলকে যথাযথভাবে শক্তিশালী করা যেতে পারে।
 
>> এই সরকারের পাস করা তথ্য অধিকার আইনকে দ্ব্যর্থহীনভাবে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ওপর প্রাধান্য দেওয়া উচিত। ওই আইনে নাগরিক ও সংবাদমাধ্যমের জন্য যেসব স্বাধীনতা ও অধিকার নিশ্চিত করা হয়েছে, সেগুলোর সুরক্ষা অত্যাবশ্যক।
 
সম্পাদক পরিষদের পক্ষ থেকে বলা হয়, সংবাদ মাধ্যমের স্বাধীনতা ও বাক স্বাধীনতার প্রতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক ও দ্ব্যর্থহীন; সংবাদপত্রের স্বাধীনতার লক্ষ্যে বাংলাদেশের সাংবাদিকদের লড়াইয়ের সমুজ্জল ঐতিহ্য এবং বিগত বছরগুলোর অসংখ্য লড়াই-সংগ্রামে তাদের অর্জন; বাংলাদেশে সামরিক একনায়কতন্ত্র ও স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে এবং গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা ও শক্তিশাল করতে মুক্ত ও নিরপেক্ষ সংবাদমাধ্যমের অতীতের সমস্ত লড়াই ও অবদান রয়েছে।  
 
‘এছাড়া অর্থনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক বিশেষত, মুক্ত ও স্বাধীন সংবাদমাধ্যম, বাক স্বাধীনতা ও গণতন্ত্র শক্তিশালী করা সর্বক্ষেত্রেই বাংলাদেশের অগ্রগতিতে অবদান রেখে যেতে সম্পাদক পরিষদ অঙ্গীকারব্ধ। ’ 
 
এ সময় সম্পাদক পরিষদের সাধারণ সম্পাদক দ্য ডেইলি স্টার সম্পাদক মাহফুজ আনাম, প্রথম আলো সম্পাদক মতিউর রহমান, বাংলাদেশ প্রতিদিন সম্পাদক নঈম নিজাম, কালের কণ্ঠ সম্পাদক ইমদাদুল হক মিলন, ফিন্যান্সিয়াল এক্সপ্রেস সম্পাদক শহীদুজ্জামান খান, দি ইনডিপেনডেন্ট সম্পাদক সামসুর রহমান মোমেন, মানবজমিন সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী, যুগান্তরের সম্পাদক সাইফুল আলম, ইনকিলাব সম্পাদক এএমএম বাহাউদ্দিন, নিউ এজ সম্পাদক নুরুল কবির, সংবাদ সম্পাদক খন্দকার মুনীরুজ্জামান, নয়াদিগন্তের সম্পাদক আলমগীর মহিউদ্দিন, বণিক বার্তা সম্পাদক দেওয়ান হানিফ মাহমুদ, ঢাকা ট্রিবিউন সম্পাদক জাফর সোবহান, করতোয়া সম্পাদক মো. মোজাম্মেল হক, সমকালের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মুস্তাফিজ শফি প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
 
এই কর্মসূচি হওয়ার কথা ছিলো গত ২৯ সেপ্টেম্বর। ওই সময় তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু এই কর্মসূচি স্থগিত করে সম্পাদক পরিষদকে আলোচনায় অংশ নেওয়ার অনুরোধ জানান।
 
বাংলাদেশ সময়: ১৮৪৩ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৩, ২০১৮
এসই/এমএ 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।