ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

ইয়াবা বিপণন-সেবনের শাস্তি মৃত্যুদণ্ড

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯২৬ ঘণ্টা, অক্টোবর ৮, ২০১৮
ইয়াবা বিপণন-সেবনের শাস্তি মৃত্যুদণ্ড মন্ত্রিসভার বৈঠক। ফাইল ফটো

ঢাকা: পাঁচ গ্রামের বেশি ইয়াবা এবং ২৫ গ্রামের বেশি হেরোইন ও কোকেন উৎপাদন, পরিবহন, বিপণন এবং সেবন করলে সর্বোচ্চ মৃত্যুদণ্ডের সাজা রেখে একটি আইনে খসড়ার নীতিগত অনুমদোন দিয়েছে মন্ত্রিসভা।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে বুধবার (৮ অক্টোবর) তার কার্যালয়ে মন্ত্রিসভার এমন বিধান রেখে ‘মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইন, ২০১৮’ এর নীতিগত অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।

বৈঠক শেষে সচিবালয়ে ব্রিফিংয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম সাংবাদিকদের বলেন, ১৯৯০ সালে একটি আইন প্রণয়ন করা হয়।

এটাকে আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপটে পুর্নবিন্যাস করা হয়েছে।
 
ওই আইনে অনেক বিষয় সরাসরি পরিষ্কার করা নাই উল্লেখ করে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, যেমন ইয়াবা। ইয়াবাটা নারকোটিক অন্তর্ভুক্ত। কিন্তু এটা আমাদের আইনে নেই। শিষাবার, ঢাকা শহরে বা দেশের অনেক জায়গায় শিষাবার আছে। এটারও আইনগত প্রভিশন নেই। প্রবিশনগুলো আইনে নিয়ে আসা হয়েছে। ডোপ টেস্ট, এটাও আমাদের আইনের মধ্যে প্রভিশন নাই। এগুলো নতুন করে সংযুক্ত করা হয়েছে।
 
সব ধরনের মাদককে নতুন আইনে যুক্ত করা হয়েছে জানিয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, এমন কোনো বিষয় নেই যা এই আইনে কাভার করবে না। কোনো না কোনোভাবে তালিকার মধ্যে চলে আসবে।
 
‘বিয়ার’ এর সংজ্ঞা হালনাগাদ করা হয়েছে জানিয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, প্রস্তুতকৃত দশমিক ৫ শতাংশ অ্যালকোহলযুক্ত পানীয়কে ‘বিয়ার’ বলা হবে।
 
‘শিষা’র সংজ্ঞা হলো, বিভিন্ন ধরনের ভেষজ নির্যাস সহযোগে দশমিক ২ শতাংশের ঊর্ধ্বে নিকোটিন এবং এসএস ক্যানেল মিশ্রিত উপাদান।
 
মাদকদ্রব্যের সংজ্ঞায় বলা হয়েছে, এই আইনের তফসিলে উল্লিখিত কোনো দ্রব্য যা এই আইনের উদ্দেশ্য পূরণকল্পে সরকার কর্তৃক সরকারি গেজেটে প্রজ্ঞাপন দ্বারা মাদকদ্রব্য বলে ঘোষিত অন্য কোনো দ্রব্য যা সংশ্লিষ্ট তফসিলের অংশ বলে গণ্য হবে। মাদকদ্রব্যের সঙ্গে অন্য যেকোনো দ্রব্য মিশ্রিত বা একীভূত দ্রব্য সমুদয় পণ্যও মাদকদ্রব্য বলে গণ্য হবে।
 
মাদকাসক্তের সংজ্ঞা বলা হয়েছে, শারীরিক বা মানসিকভাবে মাদকদ্রব্যের উপর নির্ভরশীল ব্যক্তি অভ্যাস বসে মাদকদ্রব্য গ্রহণ বা সেবনকারী ব্যক্তি।
 
মন্ত্রিপরিষদ সচিব জানান, আইনে শ্রেণী বিন্যাস করে সারা বিশ্বের সব মাদকদ্রব্য যুক্ত করা হয়েছে। ‘খাট’ বলেন, ইয়াবা বলেন সব উল্লেখ রয়েছে।
 
‘হেরোইন, কোকেন এবং কোকা উদ্ভুত মাদকদ্রব্য। এর পরিমাণ অনুর্ধ্ব ২৫ গ্রাম হলে অন্যূন ২ বছর এবং অনুর্ধ্ব ১০ বছর কারাদণ্ড। আর মাদকদ্রব্যের পরিমাণ ২৫ গ্রামের ঊর্ধ্বে হলে মৃত্যুদণ্ড বা যাবজ্জীবন কারাদণ্ড। পরিবহন, ব্যবসা, সংরক্ষণ, উৎপাদন, প্রক্রিয়াজাতকরণ- এগুলো সবগুলো এর মধ্যে চলে আসে। ’
 
মন্ত্রিপরিষদ সচিব জানান, বহুল প্রচলিত অ্যামফিটামিন বা ইয়াবার সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা যাবে। এটা ‘ক’ শ্রেণী হিসেবে রাখা হয়েছে। ইয়ারা ৫ গ্রামের বেশি হলে মৃত্যুদণ্ড বা যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হবে, পাশাপাশি আদালত অর্থদণ্ডও করতে পারবেন। তবে অর্থদণ্ডের পরিমাণ নির্ধারণ করে দেওয়া হয়নি।
 
ইয়াবা ৫ গ্রামের কম হলে কমপক্ষে এক বছর ও সর্বোচ্চ পাঁচ বছর কারাদণ্ড এব অর্থদণ্ড দেওয়া হবে। অর্থদণ্ডের পরিমাণ নির্ধারণ করে দেওয়া হয়নি।
 
অন্যান্য মাদকের ক্ষেত্রে ৫ গ্রামের বেশি হলে সাজা ছিলো কমপক্ষে ৫ বছর ও সর্বোচ্চ ১৫ বছর।
 
মাদকাসক্ত ব্যক্তিকে শনাক্তকরণে বিধি দিয়ে নির্ধারিত পদ্ধতিতে ডোপ টেস্ট করা যাবে। টেস্ট পজিটিভ হলে কমপক্ষে ছয় মাস ও সর্বোচ্চ ৫ বছর কারাদণ্ড দেওয়া হবে।
 
কেউ যদি ‘বার’ চালাতে চায় তার লাইসেন্স লাগবে। লাইসেন্স ছাড়া যদি কেউ বার চালায় তার জন্য শাস্তির বিধান আছে অনুর্ধ্ব এক লাখ টাকা আদায়পূর্বক উক্ত শর্ত পূরণ পূর্বক লাইসেন্স দেওয়া যাবে।
 
লাইসেন্স নিয়ে বিয়ার অ্যালকোহল বিক্রি করতে পারবে।
 
কোনো ব্যক্তি, কোনো প্রতিষ্ঠান এই আইনে অধীনে কোনো অপরাধ সংঘটনে অর্থ বিনিয়োগ ও সরবরাহ করলে, মদদ দিলে বা পৃষ্ঠপোষকতা করলে একই সাজা পাবেন।
 
কোনো ব্যক্তি এই আইনের অধীন কোনো অপরাধ সংঘটনে কাউকে প্ররোচনা দিলে, সাহায্য করলে বা ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হলে, প্রচেষ্টা নিলে অপরাধ সংঘটন হোক বা না হোক তিনি এই আইনের অধীন অনুরূপ দণ্ডে দণ্ডণীয় হবেন।
 
একটা নতুন প্রভিশন ‘কন্ট্রোল-ডেলিভারি’ নতুনভাবে যুক্ত করা হয়েছে। এটা ইন্টারন্যাশনাল নারকোটিক কন্ট্রোল বোর্ডের নির্দেশনা অনুসরণ করে। এই আইনের অধীন কোনো অপরাধ সংঘটনে জড়িত ব্যক্তিদের শনাক্তের জন্য বিশেষ তদন্ত কৌশল যাতে কোনো মাদক দ্রব্য এবং উৎস বস্তু, উপাদান বা মিশ্রনের বেআইনি অথবা সন্দেহজনক চালানকে তদন্তের ক্ষমতা সম্পন্ন কোনো আইন প্রয়োগকারী সংস্থা সরকারে জ্ঞাতসারে বা তত্ত্বাবধানে শেষ গন্তব্য পর্যন্ত পরিবহন-বিতরণ বা হস্তান্তর প্রক্রিয়ায় দেওয়া যার মাধ্যমে শেষ পর্যন্ত মাদক দ্রব্যের উৎস হতে গন্তব্য পর্যন্ত যাবতীয় কার্যক্রমের সঙ্গে জড়িত সব অপরাধীকে গ্রেফতার করা যায়।
 
বাংলাদেশ সময়: ১৫২০ ঘণ্টা, অক্টোবর ০৮, ২০১৮, আপডেট: ১৭৪৪ ঘণ্টা,
এমআইএইচ/আরবি/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।