ঢাকা, শুক্রবার, ৬ বৈশাখ ১৪৩১, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

'রসমঞ্জরী'র জেলা গাইবান্ধা

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২৫৫ ঘণ্টা, অক্টোবর ৪, ২০১৮
'রসমঞ্জরী'র জেলা গাইবান্ধা গামলার রসে ডুবিয়ে রাখা রসমঞ্জরী

গাইবান্ধা: 'রসমঞ্জরী'। গাইবান্ধা জেলার বিখ্যাত ও ঐতিহ্যবাহী মিষ্টি। এ জেলার কাউকে যদি জিজ্ঞেস করা হয় গাইবান্ধা কিসের জন্য বিখ্যাত? উত্তর দেবে, রসমঞ্জরীর জন্য! 

দেশের ভোজনরসিকদের কাছে গাইবান্ধা এখন রসমঞ্জরীর জেলা হিসেবে পরিচিত। শুধু তাই নয় রসমঞ্জরীর খ্যাতি দেশ ছাড়িয়ে বিদেশেও ছড়িয়েছে।



গাইবান্ধা শহরের সার্কুলার রোডের 'রমেশ সুইটস' এর কর্ণধার রমেশ চন্দ্র ঘোষ ভারতের উড়িষ্যা থেকে কারিগর এনে ১৯৪৮ সালের জুন মাসে সর্বপ্রথম রসমঞ্জরী বানানো শুরু করেন। এর পর ধীরে ধীরে রসমঞ্জরীর স্বাদে মানুষ আকৃষ্ট হয় এবং সারাদেশে এর পরিচিতি ও সুনাম ছড়িয়ে পড়ে।  

রসমঞ্জরী প্রস্তুত করা হয় দুধ, ছানা, ক্ষীর ও চিনির মিশ্রণে। ছোট ছোট গোলাকার ছানার তৈরি মিষ্টিতে ঘন রস ব্যবহার করা হয় বলে একে রসমঞ্জরী নামে ডাকা হয়।

গাইবান্ধা শহরের সব মিষ্টির দোকানেই কমবেশি রসমঞ্জরী পাওয়া যায়। এর মধ্যে রমেশ সুইটস, গাইবান্ধা মিষ্টান্ন ভান্ডার, নারু মিষ্টান্ন ভান্ডার, দেব মিষ্টান্ন ভান্ডার, মুক্তিযোদ্ধা মিষ্টান্ন ভান্ডার অন্যতম। এসব দোকানে প্রতি কেজি রসমঞ্জরী ২৮০ থেকে ৩০০ টাকায় বিক্রি হয়।

রমেশ সুইটস'র পরিচালক বাদল ঘোষ বাংলানিউজকে বলেন, স্বাদে, গুণে ও মানে অতুলনীয় গাইবান্ধার রসমঞ্জরী। না খেলে এর স্বাদ বোঝা সম্ভব নয়। শুরুর দিকে রসমঞ্জরীর আকার অনেকটা লম্বাটে ছিল। পরে মানুষের রুচির পরিবর্তন ও চাহিদার কারণে এটি এখন ছোট ছোট মার্বেল পাথরের মতো গোল করে বানানো হয়। রসমঞ্জরী আগে হাত দিয়ে তৈরি করা হতো। বর্তমানে রসমঞ্জরী তৈরিতে ব্যবহৃত হয় আধুনিক প্রযুক্তি। এখন অটোমেটিক মেশিনের সাহায্যে হাতের স্পর্শ ছাড়াই রসমঞ্জরী তৈরি হয়। তাই এর মান আগের চেয়ে অনেক ভালো।  

রমেশ সুইটসতিনি আরও বলেন, গাইবান্ধার রসমঞ্জরী শীত মৌসুমে প্রবাসীরা আমেরিকা, কানাডা, সৌদিআরবসহ বিভিন্ন দেশে নিয়ে যান। আমরা রসমঞ্জরীর মান অক্ষুণ্ন রাখতে বদ্ধপরিকর।

রসমঞ্জরী বানানোর পদ্ধতি সম্পর্কে তিনি বলেন, কেজি প্রতি রসমঞ্জুরি তৈরি করতে প্রয়োজন হয় আড়াই কেজি দুধ, দুধের ছানা ২০০ গ্রাম, ১০০ গ্রাম চিনি, ২৫ গ্রাম ময়দা ও এলাচ। প্রথমে দুধ নির্দিষ্ট তাপে জ্বাল দিয়ে ঘন করে ক্ষীর বানানো হয়। এরপর অটোমেটিক মেশিন দিয়ে বা হাতে তৈরি গোল গোল করে ছানার ‘বল’ বানিয়ে চিনির সিরায় সিদ্ধ করা হয়। তারপর নিদিষ্ট তাপমাত্রায় এনে রসে ভেজানো ছানার বলগুলো ক্ষীরের মধ্যে দিয়ে আবার কিছুক্ষণ জ্বালানো হয়। এতেই তৈরি হয়ে যা দারুন স্বাদের রসমঞ্জরী। এক কেজি রসমঞ্জরী তৈরিতে দুই শতাধিক টাকা খরচ হয়।  

শহরের কাচারী বাজারে গাইবান্ধা মিষ্টান্ন ভান্ডারে রসমঞ্জরী কিনতে আসা বকুল বাংলানিউজের বলেন, শহরে এসে রসমঞ্জরী না খেলে যেন অপূর্ণতা থেকে যায়। তাই নিজে খেয়ে পরিবারের জন্য নিয়ে যাচ্ছি।

বগুড়া থেকে গাইবান্ধায় আত্বীয়ের বাসায় বেড়াতে এসে রফিক মিয়া নামে এক কলেজছাত্র নারু মিষ্টান্ন ভান্ডারে বসে রসমঞ্জরী খাচ্ছিলেন। এ সময় কথা হয় তার সঙ্গে। তিনি বাংলানিউজকে বলেন, গাইবান্ধার রসমঞ্জরীর নাম অনেক শুনেছি, আজ প্রথম এর স্বাদ নিলাম। এটি খেতে অতুলনীয়।  

গাইবান্ধায় প্রতিদিন একেকটি মিষ্টির দোকানে তিন থেকে চার মণ রসমঞ্জরী বিক্রি হয়। বিভিন্ন উৎসব ও অনুষ্ঠানে এর চাহিদা বেড়ে যায়। এ ছাড়া গাইবান্ধার মিষ্টির দোকানগুলোতে বিভিন্ন বাহারী ধরনের সন্দেশ ও মিষ্টি পাওয়া যায়।

বাংলাদেশ সময়: ০৮৫০ ঘণ্টা, অক্টোবর ০৪, ২০১৮
এসআই

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।