ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

মামলা করায় ‘একঘরে’ হলো নির্যাতিতার পরিবার!

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫১৪ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৬, ২০১৮
মামলা করায় ‘একঘরে’ হলো নির্যাতিতার পরিবার! ভুক্তভোগী পরিবার। ছবি: বাংলানিউজ

বারহাট্টা (নেত্রকোনা) থেকে ফিরে: সমাজে আজও এমন মানুষ আছে যারা মানে না কোনো আইন-আদালত। সব কিছুর ঊর্ধ্বে থেকে নিজের সিদ্ধান্তের প্রতিফলন ও স্বার্থ হাসিলের জন্য ইচ্ছে মতো আইন গড়েন আবার ভাঙেন।

কোনো ইস্যু পেলে গ্রামের গরীব অসহায় আর সহজ সরল মানুষদের গ্রাম্য সালিশ বা পঞ্চায়েত বসিয়ে নির্যাতন বা শোষণ করেন।

নেত্রকোনার বারহাট্টা উপজেলার ধারাম গ্রামে চালু রয়েছে আজও তথাকথিত সেই বিচার ব্যবস্থা।

সম্প্রতি সেখানে বিচারের নামে অপহৃত এক নির্যাতিতা কিশোরীর পরিবারকে করা হয়েছে সমাজচ্যুত। আদালতের বিচারও যেন তাদের কাছে উপেক্ষিত!

সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা করার দায়ে অপহৃত নির্যাতিতা কিশোরীর পরিবারকে সালিশের মাধ্যমে সমাজ থেকে ‘একঘরে’ করে দিয়েছে গ্রামের মাতব্বর।

ধারাম গ্রামের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক মেম্বার ও গ্রামের মাতব্বর  আমিরুল ইসলাম সবুজের নির্দেশে চারদিন ধরে ওই পরিবারের কোনো সদস্য বাড়ি থেকে বের হতে পারছেন না। প্রতিবেশীর বাড়ি, এলাকার বাজার ও কোনো দোকানপাটে যেতে না পারায় খাবারের অভাবে অনাহারে অমানবিক জীবনযাপন করছেন তারা।

একঘরে করা অপহৃত নির্যাতিতা কিশোরীর বাবা-মাসহ পরিবারের অন্য সদস্যরা বাংলানিউজকে জানান, দশম শ্রেণিতে পড়ুয়া তাদের মেয়েকে চলতি বছরের ৩০ জুন (শনিবার) সকাল ১০টায় প্রতিবেশী তোতা মিয়ার ছেলে মো. মনির মিয়া বিদ্যালয়ের সামনে থেকে অপহরণ করে নিয়ে যায়। অনেক চেষ্টার পর উদ্ধার করতে না পেরে কিশোরীর মা, নাম উল্লেখ করে মনিরসহ ছয়জনের বিরুদ্ধে ২ জুলাই (সোমবার) থানায় মামলা করেন।

এ ঘটনায় মনিরের বড়ভাই আপেলকে পুলিশ আটক করলে ০৫ আগস্ট (রোববার) কিশোরীকে পরিবারের কাছে ফিরিয়ে দেন মনির এবং তার বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলায় উচ্চ আদালত থেকে জামিন নেন। জামিনের মেয়াদকাল শেষ হলেও বর্তমানে মনির এলাকায় দিব্যি ঘুরে বেড়াচ্ছেন বলে কিশোরীর পরিবারের অভিযোগ।

এদিকে দায়ের করা মামলা তুলে নিতে বাধ্য করতে গ্রামের মাতব্বর সবুজ (বিচার প্রধান) কিশোরীর পরিবারকে সমাজচ্যুত করে রেখেছেন। ফলে ভুক্তভোগী পরিবারটির স্বাভাবিক জীবনযাপন ব্যাহত হচ্ছে। না খেয়ে অনাহারে দিন পার করছেন তারা।

বিষয়টি স্বীকার করে মাতব্বর সবুজ বাংলানিউজকে বলেন, ‘মনিরের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলা যতদিন তুলে না নেবে ততদিন সমাজচ্যুত থাকবে কিশোরীর পরিবার। এ সময় তাদের পরিবারের কোনো সদস্য গ্রামের কারো সঙ্গে কোনো ধরনের উঠবস করতে পারবে না। ’

চাইলেই কি আদালত থেকে মামলা তুলে নেওয়া যাবে এমন প্রশ্নের জবাবে মাতব্বর সবুজ বলেন, ‘মামলা তুলতে পারবো না পারবো এইডা আপনের চেয়ে আমি ভাল বুঝি। বাদী রাজি থাহুক (থাকুক) এক ঘণ্টা লাগবো আমি মামলা তুইল্লা লইয়া আইয়াম (তুলে নিয়ে আসবো)। এইতা (এসব) লাইনঘাট আমার সব জানা আছে’।

মাতব্বরের সব লাইনঘাট জানা থাকলেও পরিস্থিতি থেকে নিজেদের রক্ষা করার লাইনঘাট জানা নেই কিশোরী কিংবা তার পরিবারের।  

কিশোরী বাংলানিউজকে বলে ‘আমাকে অপহরণ করে ধর্ষণ করলো এখন আবার আমার পরিবারকে সমাজচ্যুত করেছে। আমার জীবন নষ্ট করেও ক্ষান্ত হয়নি তারা। আমি প্রতিটি ঘটনার বিচার চাই’।

বারহাট্টা উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ফরিদা ইয়াসমিন জানান, বিষয়টি তার জানা ছিল না। খোঁজ নিয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।  

বাংলাদেশ সময়: ১১০৭ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৬, ২০১৮ 
আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
welcome-ad