ঢাকা, শনিবার, ৭ বৈশাখ ১৪৩১, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

আবারও দ্বিগুণ দামে কেনা হচ্ছে ডেমু ট্রেন

মফিজুল সাদিক, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০০০ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৬, ২০১৮
আবারও দ্বিগুণ দামে কেনা হচ্ছে ডেমু ট্রেন

ঢাকা: ২০ সেট ডিজেল ইলেকট্রিক মাল্টিপল ইউনিট (ডেমু) ট্রেন এখন সরকারের গলার কাঁটা। এ ট্রেনে যাত্রী পরিবহন করে গত পাঁচ বছরে রেলের আয় ১৯ কোটি ৪০ লাখ টাকা। আর খরচ ২৫ কোটি টাকা। বাংলাদেশে ডেমু মেরামতের ওয়ার্কশপে নেওয়া ২০ সেটের মধ্যে অনেক ডেমু নষ্ট হয়ে ধুঁকছে। অথচ নতুন করে আবারও ডেমু কেনা হচ্ছে, তাও আবার দ্বিগুণ দামে।

ঢাকার যাত্রী পরিবহনের নতুন ডেমু শাটল ট্রেন হিসেবে চালু করার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। কালিয়াকৈর হাইটেক পার্ক এবং ঢাকা রুটে শাটল ট্রেন চালুর লক্ষ্যে দুই সেট (ছয় ইউনিটে এক সেট)  ব্রডগেজ ডেমু কেনা হবে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ রেলওয়ে।


 
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ২০১১-১৫ মেয়াদে ২০ সেট ডেমু সংগ্রহের জন্য একটি প্রকল্প বাস্তবায়িত হয়েছে। এসব ডেমুর জন্য প্রতিটির ক্রয়মূল্য ৭ কোটি ৬২ লাখ টাকা ধরা হয়েছিল। অথচ এবার নতুন ডেমু কেনা বাবদ প্রতিটি কোচের দাম ধরা হয়েছে ১৩ কোটি ৪১ লাখ টাকা, যা প্রায় দ্বিগুণ। যে লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য নিয়ে এর আগে ২০ সেট ডেমু সংগ্রহ করা হয়েছিল তা পুরোপুরি বাস্তবায়ন হয়নি। নির্ধারিত রুটেও ডেমুগুলো চলছে না। এছাড়া যে আর্থিক হিসাব দেখিয়ে ২০ সেট ডেমু কেনা হয়েছিল তার ৫০ শতাংশও অর্জন হয়নি।
 
চার বছর আগে ২০ সেট (৬০টি কার) ডেমু কেনা হলেও এগুলো মেরামতের ওয়ার্কশপ নির্মাণ করা হয়নি। এরপরও নতুন করে কেনা হচ্ছে ডেমু।  
 
বাংলাদেশ রেলওয়ের প্রধান পরিকল্পনা কর্মকর্তা আনোয়ারুল হক বাংলানিউজকে বলেন, দুই সেট নতুন ডেমু কেনা হবে। এটা হাইটেক পার্ক থেকে ঢাকা রুটে চলাচল করবে। আশা করি এ রুটে চলাচলের ফলে ঢাকা-টাঙ্গাইল রুটে চাপ কমবে। ঢাকা-কালিয়াকৈর রুটে যাত্রীও ভালো পাওয়া যাবো।
 
তিনি আরও বলেন, ডেমু কেনার প্রস্তাব আমরা পরিকল্পনা কমিশনে পাঠিয়েছি।
 
সূত্র জানায়, দুই সেট ডেমুসহ অন্য যন্ত্রপাতি সংগ্রহে মোট প্রস্তাবিত ব্যয় ধরা হয়েছে ১৬১ কোটি ৩০ লাখ টাকা। ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের উপর যানবাহনের উপর বাড়তি চাপ চাপ কমাতেই এমন উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। হাইটেক পার্কের কর্মচারীসহ আশপাশ এলাকার মানুষের যাতায়াতেই এমন উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। ২০১৯ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২২ সালের জুন মেয়াদে এগুলো সংগ্রহ করবে বাংলাদেশ রেলওয়ে।
 
বাংলাদেশ রেলওয়ের দাবি, ডেমুর বড় সুবিধা এটি সহজে থামানো যায় এবং এটি গন্তব্যস্থলে পৌঁছানোর পর ইঞ্জিন ঘোরানোর প্রয়োজন হয় না। ৫ থেকে ৬ ইউনিটের সমন্বয়ে একটি ডেমু সেট তৈরি করা হয়। সাধারণ একটি ডেমু কারের আসন সংখ্যা ১০০, পাশাপাশি পিক আওয়ারে সমপরিমাণে যাত্রী দাঁড়িয়ে যাতায়াত করতে পারে।
 
অথচ এর আগে ৪২৬ কোটি টাকা ব্যয়ে ২০ সেট ডেমু ট্রেন কিনে বিপাক পিছু ছাড়ছে না রেলপথ মন্ত্রণালয়ের। নতুন নতুন সমস্যা দেখা দিচ্ছে চীনের এই বিশেষ ট্রেনে। ২০ সেট ট্রেনের মধ্যে অধিকাংশই এখন মেরামত করা প্রয়োজন। অথচ বাংলাদেশ রেলওয়ের বিদ্যমান কারখানাগুলোর মধ্যে কোনো ইউনিটে ডেমু মেরামত ও রক্ষণাবেক্ষণের উপযুক্ত অবকাঠামো নেই। এমনকি দেশের ওয়ার্কশপ ও কারখানাগুলোর মধ্যে কোনো ইউনিট হিসেবে ডেমু মেরামত ও রক্ষণাবেক্ষণ কারখানা স্থাপন করাও সম্ভব নয়। ফলে ৪২৬ কোটি টাকার ডেমু মেরামতে ৩০৮ কোটি ২২ লাখ ৭৫ হাজার টাকা ব্যয়ে কারখানা ও ওয়ার্কশপ নির্মাণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।

২০১১ সালে ২০ সেট ডেমু কেনার চুক্তি হয় চীনের তাংশান রেলওয়ে ভেহিক্যাল কোম্পানি লিমিটেডের সঙ্গে। এর সঙ্গে শুল্ক, কর, কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ, বিদেশ ভ্রমণ ও ভাতাও সংযুক্ত করা হয়। সব মিলিয়ে প্রকল্প দাঁড়ায় ৬৫৪ কোটি টাকার।
 
উল্লেখ্য, ট্রেনে করে দ্রুত শহরতলির মানুষ যাতে ঢাকা, চট্টগ্রাম ও নারায়ণগঞ্জের মতো বড় শহরে প্রতিদিন যাতায়াত করতে পারে সেই লক্ষ্যে ডেমু আমদানি করেছিল রেলওয়ে।

বাংলাদেশ সময়: ০৫৫৯ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৬, ২০১৮
এমআইএস/আরআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।