ঢাকা, শনিবার, ৭ বৈশাখ ১৪৩১, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

মুক্তিযুদ্ধে যন্ত্রসংগীত শিল্পীদের ভূমিকা তুলনাহীন

ফিচার রিপোর্টার | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০২১৩ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৬, ২০১৮
মুক্তিযুদ্ধে যন্ত্রসংগীত শিল্পীদের ভূমিকা তুলনাহীন বাংলাদেশ মিউজিশিয়ান্স ফাউন্ডেশনের (বিএমএফ) চতুর্থ জাতীয় যন্ত্রসংগীত শিল্পী সম্মেলন/ছবি: বাংলানিউজ

ঢাকা: মুক্তিযুদ্ধে আমাদের যন্ত্রসংগীত শিল্পীসহ সব শিল্পীদের ভূমিকা তুলনাহীন। অথচ এখন তাদের যে অবস্থা, তা চিন্তা করলে লজ্জাই লাগে। 

যন্ত্রশিল্পীদের বর্তমান অবস্থার প্রেক্ষাপট নিয়ে বলতে গিয়ে এমনটাই বললেন প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক উপদেষ্টা এইচটি ইমাম।

মঙ্গলবার (২৫ সেপ্টেম্বর) জাতীয় জাদুঘরে অনুষ্ঠিত হয় বাংলাদেশ মিউজিশিয়ান্স ফাউন্ডেশনের (বিএমএফ) চতুর্থ জাতীয় যন্ত্রসংগীত শিল্পী সম্মেলন।

এ আয়োজনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি একথা বলেন।

এইচটি ইমাম বলেন, আমাদের যন্ত্রসংগীতের অনেক কিছুই হারিয়ে গেছে, সে জায়গা থেকেই ছায়ানট বা শিল্পকলা একাডেমির মতো নতুন একটি একাডেমি করা প্রয়োজন। টেলিভিশনগুলোরও উচিত কণ্ঠশিল্পীর পাশাপাশি যন্ত্রসংগীত শিল্পীকেও সমানভাবে দেখানো, নয়তো সেটা সম্ভবত তাকে অবমাননা করা হবে।  

‘একজন যন্ত্রশিল্পীর শিল্পীকে বড় হতেই সময় লেগে যায় প্রায় ৫০ বছর। তাই আপনারাও চর্চা বন্ধ করবেন না। স্কুলগুলোতে সংগীত বা যন্ত্রসংগীত শিক্ষকের বয়সসীমা ৩০, অথচ একজন শিল্পী তো ৩০ বছর বয়সে শিশু। তাই এদের বয়সসীমাটা দেখা জরুরি, এ বিষয়ে নতুন করে ভাবনা প্রয়োজন। ’

প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক এ উপদেষ্টা বলেন, প্রত্যন্ত গ্রামে মমতাজকে ডেকে নিয়ে গিয়ে যদি পাঁচলাখ টাকা সম্মানী দেন, তবে যন্ত্রসংগীত শিল্পীরা কেন নামমাত্র সম্মানী পাবে, যা তাদের জন্য যথেষ্ট নয়! বাংলাদেশ তো এখন আর গরিব দেশ নেই! আমাদের মানসিকতারও একটু পরিবর্তন প্রয়োজন। যন্ত্রসংগীত শিল্পীরাও সম্মান ও মর্যাদার দাবিদার।

‘আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশগুলোতে যেখানে অনেক শিল্পী গড়ে উঠছে, সেখানে আমাদের হাতে গোনা। এভাবে একজন দু’জন করে উঠলে শিল্পের প্রসার হয় না। তাই সমাজের সবাকেই শিল্পের প্রসারে এগিয়ে আসা উচিত। প্রধানমন্ত্রীও এ ব্যাপারে সংবেদনশীল। আপনারা চাইলেই নতুন শিল্পী জন্মাবে, শিল্পের আরো একাডেমি হবে, শিল্পের প্রসার ঘটবে। ’

সন্ধ্যায় আয়োজিত এ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর। বিশেষ অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ বেতারের মহাপরিচালক নারায়ণ চন্দ্র শীল, বিএমএফের প্রধান উপদেষ্টা মো. আকবর হোসেন, সাধারণ সম্পাদক দেবু চৌধুরী প্রমুখ। আয়োজনে সভাপতিত্ব করেন বিএমএফ'র সভাপতি ও দেশ বরেণ্য বংশীবাদক গাজী আবদুল হাকিম।

সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর বলেন, আমাদের দেশে সংস্কৃতিচর্চার ক্ষেত্রে যারা এগিয়ে আসেন, তারা প্রত্যেকেই প্রতিকূলতার মধ্যদিয়ে আসেন। যারা বড় হন, তাদের সংখ্যা হাতে গোনা। যন্ত্রসংগীতের সঙ্গে কণ্ঠশিল্পী বা মঞ্চনাটকেরও একই অবস্থা। মিলিয়ে দেখলে আমরা সব শিল্পীই অসুখী। পৃষ্ঠপোষকতা ছাড়া কোনো দেশের শিল্পই এগোয় না।  

মন্ত্রী বলেন, দেশে মিউজিক কলেজ আছে, শিক্ষার্থীরাও শিখছে। কিন্তু তারা বের হয়ে কোথায় যাবেন? বিদ্যালয়ে সংগীত শিক্ষার কথা বলা হচ্ছে, সেখানে শেখাবে কে? মিউজিক কলেজ থেকে বের হওয়া শিক্ষার্থীরা যেনো এই বিদ্যালয়গুলোর শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ পান, সেজন্য এইচটি ইমামের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি প্রধানমন্ত্রীকে বেশি বেশি করে অবহিত করার জন্য। ৬৪ জেলার পাশাপাশি উপজেলাতেও শিল্পকলা একাডেমি তৈরি হচ্ছে, আশাকরি সেখানে অনেকেরই কর্মসংস্থান হবে।

নারায়ণ চন্দ্র শীল বলেন, একটি গানকে প্রাণ দিতে হলে মিউজিশিয়ান ছাড়া হয় না, কিন্তু তাদের সম্মানী যথেষ্ট নয়। কোনো কণ্ঠশিল্পী যেখানে একটা অনুষ্ঠান করে ৫০ হাজার টাকা পান, সেখানে মিউজিশিয়ান পান ৩ হাজার। অথচ তারা অত্যন্ত সৃজনশীল।  

সভাপতির বক্তব্যে গাজী আবদুল হাকিম বলেন, শিল্পের প্রধান যে ভাষা, তা হলো সুর। বাকিগুলো অসুর। মিউজিশিয়ানরা সুর সৃষ্টি করে। যারা ভালোর সঙ্গী, তারা এ সুরের পূজারি। আর যারা অসুর পছন্দ করে, তারাই দেশে জঙ্গিবাদের মতো বিষবৃক্ষ তৈরি করতে পারে।  

আয়োজনে যন্ত্রসংগীত শিল্পী সুবল দত্ত, ওস্তাদ ফুলঝুরি খান এবং মো. ইমতিয়াজ আহমেদকে সম্মাননা দেওয়া হয়। সম্মাননা ও আলোচনা শেষে যন্ত্রসংগীত শিল্পীদের আয়োজনে অনুষ্ঠিত হয় মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।

বাংলাদেশ সময়: ২২০৭ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৫, ২০১৮
এইচএমএস/এএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।