ঢাকা, শনিবার, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

গাংনীতে ওঝার ঝাড়ফুঁকে প্রাণ গেলো শিশুর!

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০১০ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৫, ২০১৮
গাংনীতে ওঝার ঝাড়ফুঁকে প্রাণ গেলো শিশুর!

মেহেরপুর: মেহেরপুরের গাংনী উপজেলায় ভুয়া কবিরাজের (ওঝা) ঝাড়ফুঁকে প্রাণ গেলো আনিকা নামে তিন বছরের এক শিশুর।

সোমবার (২৪ সেপ্টেম্বর) রাত উপজেলার তেরাইল গ্রামে ঘটনাটি ঘটলে মঙ্গলবার (২৫) বিষয়টি জানাজানি হয়। নিহত আনিকা ওই গ্রামের কুঠিপাড়া এলাকার কৃষক ফারুক হোসেনের মেয়ে।

 

শিশুটির বাবা ফারুক হোসেন বাংলানিউজকে জানান, ‘সোমবার রাত সাড়ে ১২টার দিকে মেয়ের প্রচণ্ড মাথা ব্যথা শুরু হয়। প্রথমে মনে করেছিলাম ঘুমের ভেতর তাকে সাপে কেটেছে। পরে তাকে স্থানীয় ওঝা নুরুল আমিনের কাছে নিয়ে যাওয়া হয়। সাপে কেটেছে বলে জানায় ওঝা। প্রায় ঘণ্টাব্যাপী ঝাড়ফুঁক দেওয়ার পর মেয়ে সুস্থ না হওয়ায় তাকে গাংনী হাসপাতালে যাওয়া হয়। পরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রাত ৩টার দিকে আনিকা মারা যায়।

এ ব্যাপারে ওঝাঁ নুরুল আমিনের সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বাংলানিউজকে জানান, ‘মেয়েটিকে ঘাড় ভাঙা অবস্থায় রাত ১টার দিকে এখনে নিয়ে আসেন ফারুক হোসেন। প্রথমে সাপে কেটেছে মনে করেছিলাম। পরে মনে হয়েছিল বাতাস লেগেছে। তাই সূরা ইয়াসিন ও সূরা ফাতিহা পড়ে একটু ঝাড়ফুঁক দিয়েছিলাম। প্রায় ৪০ মিনিট মতো ঝাড়ফুঁক করেছি। পরে অবস্থার আরও অবনতি ঘটলে তাদের ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দিই। তারা গাংনী হাসপাতালের ডাক্তারের নিয়ে যাওয়ার পর মেয়েটি মারা যায়। এ বিষয়টি নিয়ে লেখালেখি না করার অনুরোধ করছি। ’

কবিরাজী চিকিৎসা দিতে পারেন কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘ভাই আমি লেখাপড়া না জানলেও কোরআন শরীফ পড়তে জানি। তাই একটু-আধটু কবিরাজী করি। প্রায় ১২ বছর এ কাজ করে আসছি। কোনোদিন কোনো অসুবিধে হয়নি। এটা হয়ে গেলো। আমার কোনো দোষ নাই। ’

গাংনী উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার কেন্দ্রের মেডিকেল অফিসার ড. সিয়াম বাংলানিউজকে বলেন, সোমবার রাতে রোগীটি হাসপাতালে পৌঁছানোর আগেই মারা গেছিল। তারপরেও শিশুটিকে দেখা হয়েছে। পরিবারের লোকজন জানিয়েছেন— প্রচণ্ড জ্বর ও মাথা ব্যথা নিয়ে স্থানীয় ওঝার কাছে ঝাড়ফুঁক করেছেন।  

তবে শিশুটির পরিবারের লোকজনের কথা শুনে ধারণা করা হয়েছে শিশুটির প্রচণ্ড জ্বর ও নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত ছিল। সঠিক সময়ে হাসপাতালে নিয়ে আসলে চিকিৎসা দিয়ে শিশুটিকে সুস্থ করা সম্ভব হতো।

গাংনী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হরেন্দ্রনাথ সরকার বাংলানিউজকে বলেন, ভুক্তভোগী পরিবারের পক্ষ থেকে অভিযোগ দিলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

বাংলাদেশ সময়: ১৬০৯ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৫, ২০১৮
জিপি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।