ঢাকা, শুক্রবার, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৮ রমজান ১৪৪৫

জাতীয়

ইলিশে সয়লাব খুলনার বাজার!

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩৩৯ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৫, ২০১৮
ইলিশে সয়লাব খুলনার বাজার! খুলনার বাজারে মিলছে প্রচুর ইলিশ

খুলনা: রূপালী ইলিশে সয়লাব খুলনার প্রতিটি বাজার। যে কারণে খুলনা বিভাগের সবচেয়ে বৃহৎ ইলিশের বাজার হিসাবে খ্যাত কেসিসি রূপসা পাইকারি মৎস্য আড়ৎও বেশ সরগরম। ভোর থেকে দুপুর পর্যন্ত চলে বিকিকিনি। নিষেধাজ্ঞার সময় ঘনিয়ে আসার আগে প্রচুর ইলিশ ধরা পড়ায় দামও নাগালের মধ্যে। তাই আড়ৎদার, পাইকার, খুচরা বিক্রেতা সবার মধ্যেই ফিরেছে স্বস্তি।

গত এক সপ্তাহ ধরে দাম কমায় মৌসুমে টাটকা ইলিশের স্বাদ নিতে বিভাগের সবচেয়ে বড় এ আড়তে প্রতিদিন মাছ কিনতে আসছেন হাজারও ক্রেতা।

আড়তদাররা জানান, সপ্তাহখানেক আগেও ইলিশ ছিলো অগ্নিমূল্য।

এখন তা অনেকটা সহনীয় পর্যায়ে নেমে এসেছে। বলতে গেলে অর্ধেকে। মানুষ চাতক পাখির মত চেয়েছিলো কখন ইলিশের দাম কমবে। তবে চলতি সপ্তাহের শুরুর দিকে নদী ও সাগরে ঝাঁকে-ঝাঁকে ইলিশ ধরা পরায় সরবরাহ বৃদ্ধি পাওয়ায় দাম কমে গেছে।

কেসিসি রূপসা পাইকারি মৎস্য আড়তের মুজাহিদ ফিসের আড়ৎদার গাজী আবু মুসা মঙ্গলবার (২৫ সেপ্টেম্বর) সকালে বাংলানিউজকে বলেন, মৌসুমের শেষ সময় এসে বরিশালের নদী ও চট্টগ্রামের সাগরে জেলেদের জালে ধরা পড়ছে ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ। মৌসুমের শুরুতে নদীতে ইলিশের দেখা না পেয়ে জেলেরা হতাশ ছিলেন। প্রচুর ইলিশ ধরা পড়ার কারণে জেলে ও মাছের আড়তদারদের মধ্যে উৎসবের আমেজ তৈরি হয়েছে।

তিনি জানান, নদীর ১ কেজি ৫০০ গ্রাম আকারের ইলিশের দাম প্রতি কেজি ১১০০ থেকে ১২০০ টাকা। ১ কেজি আকারের ইলিশের দাম প্রতি কেজি ৮০০ থেকে ৯০০ টাকা। ৭-৮ শত গ্রামের ইলিশের দাম প্রতি কেজি ৬০০ থেকে ৭০০ টাকা। ৫০০ গ্রামের ইলিশের দাম প্রতি কেজি ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। আর সাগরের ইলিশ প্রতি কেজিতে ১০০-২০০ টাকা করে কম।

মুসা জানান, ৭-১০ দিন আগে কেজি প্রতি ৫০০ গ্রামের ইলিশের পাইকারি দাম ছিলো ৬০০-৬৫০ টাকা। ৭০০ গ্রামের ইলিশের দাম ৮শ’ টাকা ও ৮০০/৯০০ গ্রামের দাম ১ হাজার টাকা। এক কেজি সাইজের ১২শ’ টাকা। এক কেজি ৪০০ গ্রাম ওজনের ইলিশের  মূল্য ১৬০০-১৭০০ টাকা। এক কেজি ৫০০-৬০০ গ্রামের ইলিশের মূল্য ২ হাজার টাকা।

কেসিসি রূপসা সাদামাছ আড়তদার বহুমুখী সমবায় সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. জাহিদুর রহমান জন্টু বাংলানিউজকে বলেন, সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত আড়তদার ও শ্রমিকরা ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন। এক সপ্তাহ ধরে জেলেদের জালে কাঙ্ক্ষিত ইলিশ ধরা পড়ছে। কয়দিন আগেও যেখানে মাছের সরবরাহ না থাকায় কাজ কম ছিলো, অলস সময় পার করতে হয়েছে সবাইকে, এখন সেখানে আড়তদার আর পাইকারের হাঁকডাকে মুখরিত পরিবেশ। একটু পরপরই ট্রাক ও ট্রলার বোঝাই ইলিশ আসছে আড়তে।

খোঁজ খবর নিয়ে জানা গেছে, নদী ও সাগরে প্রচুর ইলিশ ধরাপড়ায় জমে উঠেছে খুলনার ইলিশের বাজার। বিভিন্ন মাছ বাজারে উঠেছে প্রচুর ইলিশ।

খুলনার ৭ নম্বর ঘাট এলাকার মোকাম, নিউমার্কেট, বড় বাজার, টুটপাড়া জোড়াকল বাজার, রূপসার সন্ধ্যা বাজার, ময়লাপোতা মোড়ের সন্ধ্যা বাজার, বউ বাজার, শেখ পাড়া বাজার, বয়রা বাজারসহ বিভিন্ন বাজারে মাইকিং করে ইলিশ বিক্রি করতে হচ্ছে খুচরা ব্যবসায়ীদের। সরবরাহ বেশি থাকায় বাজারগুলোতে মাছের দাম সাধারণ মানুষের নাগালে চলে এসেছে।

হোসেন নামের এক ক্রেতা বলেন, বাজারে প্রচুর পরিমাণে ইলিশ আসছে। আগের চেয়ে কিছুটা কম দামেই এখন ইলিশ বিক্রি হচ্ছে। বিশেষ করে বরিশাল ও চাঁদপুর অঞ্চলের ইলিশে বাজার ভরা। তিনি জানান, ইলিশের দাম কমে যাওয়ায় বেশি করে ইলিশ কিনবেন।

এদিকে ইলিশসম্পদ সংরক্ষণে ইলিশের প্রধান প্রজনন মৌসুম অর্থাৎ আগামী ৭ অক্টোবর থেকে ২৮ অক্টোবর পর্যন্ত মোট ২২ দিন প্রজনন ক্ষেত্রের সাত হাজার বর্গকিলোমিটার এলাকায় সব ধরনের মাছ আহরণ, পরিবহন, মজুদ, বাজারজাতকরণ এবং ক্রয়-বিক্রয় সম্পূর্ণরূপে নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে সরকার।  

প্রজননক্ষেত্রগুলো হলো- মীরসরাই উপজেলার শাহের খালী থেকে হাইতকান্দী পয়েন্ট, তজুমুদ্দীন উপজেলার উত্তর তজুমুদ্দীন থেকে পশ্চিম সৈয়দপুর আওলিয়া পয়েন্ট, কলাপাড়া উপজেলার লতা চাপালি পয়েন্ট এবং কুতুবদিয়া উপজেলার উত্তর কুতুবদিয়া থেকে গণ্ডামার পয়েন্ট।
 
মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র তথ্য কর্মকর্তা মো. শাহ আলম জানান, ইলিশের নিরাপদ প্রজননের লক্ষ্যে চাঁদপুর, লক্ষ্মীপুর, নোয়াখালী, ফেনী, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, বরিশাল, ভোলা, পটুয়াখালী, বরগুনা, পিরোজপুর, ঝালকাঠি, বাগেরহাট, শরীয়তপুর, ঢাকা, মাদারীপুর, ফরিদপুর, রাজবাড়ী, জামালপুর, নারায়ণগঞ্জ, নরসিংদী, মানিকগঞ্জ, কিশোরগঞ্জ, টাঙ্গাইল, মুন্সীগঞ্জ, খুলনা, সাতক্ষীরা, কুষ্টিয়া, রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, সিরাজগঞ্জ, নাটোর, পাবনা, কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা, ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও গোপালগঞ্জ জেলার সব নদ-নদীতে এসময় সব ধরনের মাছ ধরা বন্ধ থাকবে।
 
এছাড়াও দেশের সুন্দরবনসহ সমুদ্র উপকূলীয় এলাকা এবং মোহনাগুলোতেও এই ২২ দিন মাছ ধরা বন্ধ থাকবে। দেশের মাছঘাট, আড়ৎ, হাটবাজার, চেইনশপসহ সংশ্লিষ্ট এলাকায় ২২ দিন অভিযানও পরিচালিত হবে।

বাংলাদেশ সময়: ০৯৩৫ ঘণ্টা,  সেপ্টেম্বর ২৫ , ২০১৮
এমআরএম/জেডএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।